Chandrakinor in Bengali Drama by Abhisek Karmakar books and stories PDF | চন্দ্রকিন্নর

Featured Books
  • One Step Away

    One Step AwayHe was the kind of boy everyone noticed—not for...

  • Nia - 1

    Amsterdam.The cobbled streets, the smell of roasted nuts, an...

  • Autumn Love

    She willed herself to not to check her phone to see if he ha...

  • Tehran ufo incident

    September 18, 1976 – Tehran, IranMajor Parviz Jafari had jus...

  • Disturbed - 36

    Disturbed (An investigative, romantic and psychological thri...

Categories
Share

চন্দ্রকিন্নর

চন্দ্রকিন্নর

অভিষেক কর্মকার

আজ বাতাসে একটা সুমিষ্ট গন্ধ বিরাজ করছে। গন্ধটা কোনও পুষ্পের নয়, গন্ধটা অন্য কিছুর। অথচ আজ রাজ বাগানে সকল গাছই পুষ্প ধারণ করেছে। বাগানের সরোবরের কয়েকশো শতদল আজ স্নিগ্ধ বাতাসের ছোঁয়ায় আন্দোলিত হচ্ছে। শতদলের গায়ে লেগে থাকা স্নিগ্ধ বাতাসের ন্যায়, গন্ধটা তার সমস্ত মনকে যেন আন্দোলিত করেছে। গন্ধটা তার একান্ত নিজের। যদি নিজের করে রাখা যেত? গন্ধটা তার সমস্ত অঙ্গে তার সমস্ত শরীরে যদি মেখে থাকতো? আজ প্রভাতেই তার ঘুম ভেঙ্গে গেছে আপনা থেকেই। সূর্য ওঠার পূর্বেই স্নান সেরে, সূর্য ওঠার সাথে সাথে প্রার্থনা সেরে ফেলেছে। আজ ইচ্ছার বশেই সে, তার সমস্ত শরীর হাল্কা আতরে স্নান করিয়ে ফেলল। সেবিকার প্রবেশ। যুব রানীর আত্মমগ্নতা কাটলও সেবিকার কন্ঠস্বরে।

সেবিকা।। যুবরাণী , আজ মহারাজ আপনাকে একবার দেখা করতে বলেছেন। কয়েকদিন আগে ন্যগ্রোধামে, যুবরাজ এসে উপস্থিত হয়েছেন। সে মহারাজার আমন্ত্রণ গ্রহণ করেছেন।

যুবরাণী যশোধরার মন আরও প্রফুল্ল হয়ে উঠলো। এতো দিনের ইচ্ছা যেন আজ সফল।

যশোধরা।। যুবরাজ, আসবেন? তার আগমনে নগর এতো নিস্তব্ধ। বেমানান। খবর দাও, সকল নর্তকী ও সেবিকাদের। তারা স্নান সেরে গৈরিক বস্ত্র ধারণ করে যেন। সহস্র শতদলে যুবরাজকে বরণ করা হবে।

সেবিকার খবরে, কিছুক্ষণের মধ্যেই চল্লিশ হাজার নরনারীর ভিড় উপচে পড়লো। সকলের শারীরে গৈরিক পোশাক। বুদ্ধের রাজঅন্তঃপুরে প্রবেশের মাত্রই সমস্ত নরনারী চোখের জল ধরে রাখতে পারলেন না। চল্লিশ হাজার নরনারী পুষ্প, চন্দন দিয়ে বরণ নিলেন যুবরাজকে।

‘নমো নমো বুদ্ধদিবাকরায়।

নমো নমো গৌতম চন্দ্রিমায়৷

নমো অনন্তগুণাণবায়,

নমো শাক্যনন্দনায়।’

চল্লিশ হাজার নরনারীর কন্ঠে এই মন্ত্র পাঠ হতে থাকলো।

তারপর একসময়ে রাহুলমাতা যশোধরা বুদ্ধের সামনে এসে দাঁড়ালেন। রাজার সম্মুখে প্রজা সে সম্ভ্রম নিয়ে বসে থাকে ঠিক সেই ভাবে উপবিষ্ট হলেন। একপাশে দাঁড়িয়ে রাজা শুদ্ধোধন সবই দেখছিলেন।

রাজা শুদ্ধোধন।। অসামান্য তুমি, অসামান্য তুমি! দীর্ঘজীবী হয়ও, মা।

তারপর বুদ্ধদেবকে উদ্দেশ্য করে বলতে থাকলেন।

-হে ভদন্ত, আমার পুত্রবধূর ত্যাগের সীমা নেই। যখন তিনি প্রথম শুনলেন আপনি গৈরিক বস্ত্র ধারণ করেছেন তখন তিনিও বহুমূল্য রত্ন অলংকার ত্যাগ করে কষায় বস্ত্র অঙ্গে তুলে নিলেন। আপনি মাল্যবিভূষণ ত্যাগ করেছেন শুনে, আমার পুত্রবধূও মাল্যভূষণ ত্যাগ করেছেন। আপনার সংসার ত্যাগের পরের থেকেই, সেও সমস্ত ভোগ ঐশ্বর্য ত্যাগ করে সাধারণ জীবন কাটাচ্ছে। কত রাজপুত্র তাঁকে বিবাহের প্রস্তাব দিয়েছেন, কত উপটৌকন পাঠিয়েছেন। কিন্তু রাহুলমাতা সমস্ত প্রলোভন হেলায় পরিত্যাগ করে স্বামীর প্রতি একনিষ্ঠ ভালোবাসায় উজ্জ্বল হয়ে রয়েছেন।

মৃদু হাসলেন বুদ্ধদেব।

বুদ্ধদেব।। মহারাজ, রাহুলজননী যে আমার প্রতি নিবদ্ধচিত্ত এ কথা আমি জানি। মহারাজ, যদি অনুমতি দেন তাহলে একটা ঘটনার কথা উল্লেখ করি।

রাজা শুদ্ধোধন।। স্বচ্ছন্দে...।

বুদ্ধদেব।। পুরাকালে হিমালয়ের এক গ্রামের কিন্নর-কিন্নরীর বাসস্থান ছিল। সে গ্রামেরই এক জোড়া কিন্নর কিন্নরী হল চন্দ আর চন্দা। কিন্নরী চন্দা ছিলেন অপরূপ সুন্দরী, লাস্যময়ী। সেই গ্রামের কিন্নর-কিন্নরীরা বর্ষার সময়ে হিমালয়ের উপরে বসবাস করত। গ্রীষ্মের শুরুতে তারা হিমালয়ের পাদদেশে নেমে আসতো। গ্রীষ্মকালে হিমালয়ের পাদদেশে থাকার সময়ে হিমালয়ের বন তাদের সঙ্গে নিবিড় ভাবে জড়িয়ে গিয়েছিল। বনের পুষ্প কিন্নরীদের প্রধান আকর্ষণ ছিল। পুষ্প আহরণ করতে তারা প্রায়ই বনে প্রবেশ করতো। এইরকম কোনো একদিন চন্দ্র আর চন্দ্রা বনে মধ্যে কোনো বৃহৎ গাছে নীচে প্রেমালাপে মত্ত ছিল। চন্দ্র, প্রায়ই চন্দ্রার এলো কেশে পুষ্প স্থাপন করে দিত। সেইদিনও করলো।

চন্দ্রা।। আজ আমার বেণুতে পুষ্প দেবে না।

চন্দ্র।। এই যে দেব।

চন্দ্রা।। প্রতিদিন না, চাইতেই তুমি আমার জন্য পুষ্প আহরণ করে আনো। কেন বলতো?

চন্দ্র।। তোমার প্রেম আমায় মুগ্ধ করে তাই।

চন্দ্রা।। তুমি আমার পছন্দ জানো?

চন্দ্র।। হ্যাঁ, তোমাকে পছন্দ করি তাই...।

চন্দ্রা।। ওই যে, বৃক্ষে পুষ্প। ওর রেণু খুবই সুন্দর।

পুষ্প রেণু মধু খেয়ে মত্ত অবস্থায় ইতস্তত ঘুরে বেড়ালো। নদীর তীরে এসে নদীতে নেমে জলকেলি করলো। আবার সেই বৃহৎ গাছের নীচে তারা অবস্থান করতে থাকলো।

চন্দ্রা।। তোমার বাশিঁর সুরে আমার মন জুড়িয়ে যায়। মুক্ত বিহঙ্গে মতো ডানা মেলে চলে যায় দূর দেশে। সুর তোল না, একবার।

গাছের নীচে পুষ্পশয্যা প্রস্তুত করে চন্দ্র বাঁশির মধুর সুর তুলতে লাগলো। চন্দ্রা মধুর বাঁশির সুরে মত্ত হয়ে নাচতে থাকলো। কয়েকবছর যাবৎ বারাণসীর রাজা ব্রম্ভদত্ত বৈরাগ্যের প্রেরণায় সন্ন্যাস নিয়ে সেখানে অবস্থান করছিলেন। সন্ন্যাস নেওয়া সত্ত্বেও তার হাতে পাঁচরকমে অস্ত্র সর্বদা বিরাজমান। চন্দ্রের বাঁশির সুরে কানে পৌঁছানো মাত্রই সেখানে উপস্থিত হয়ে আড়ালে দুইজনের নৃত্য ও গীত উপভোগ করতে লাগলো। রাজা চন্দ্রার রূপ ও শরীরের প্রেমে পড়লেন। সে ভাবতে লাগলো চন্দ্রকে বধ করে চন্দ্রাকে রাজ অন্তঃপুরে নিয়ে যাবে। চন্দ্রার নাচ দেখতে দেখতে, তার লোভ আরও চন্দ্রকে হত্যার ইচ্ছা ক্রমশ বাড়তে থাকলো। বিষাক্ত তিরে কিন্নর চন্দ্রকে বিদ্ধ করলো। চন্দ্র মাটিতে লুটিয়ে পড়লো। চন্দ্র কাতর স্বরে বলল -

চন্দ্র।। চন্দ্রা, তোমার সাথে চিরজীবনের জন্য বিচ্ছেদ ঘটল।

চন্দ্রা নাচের মধ্যে এমন আচ্ছন্ন হয়ে রইল, চন্দ্রের কন্ঠস্বর তার কানে গেল না। চন্দ্রকে মৃত্যু গ্রাস করলো। কিছু মুহূর্ত পরে চন্দ্রা ধনুকধারী রাজাকে ও ভূলুণ্ঠিত চন্দ্রকে দেখতে পেলো। স্বামীর হত্যাকারী কে চিনতে পারলো। সে রাজাকে শাপ দিতে লাগলো। রাজা তাতে অবাক হল।

রাজা।। হে কিন্নরী! তুমি কাঁদছ কেন? এই বন্য কিন্নর তোমাকে কী দিতে পারতো? আমি তোমাকে রাজরানি করে রাখবো।

রাজার এই কথা শুনে চন্দ্রা রাগে ফুঁসতে লাগলো।

চন্দ্রা।। হে রাজন! আমি প্রাণ দিতে পারি কিন্তু অন্যের স্ত্রী কোনও দিনও হব না।

চন্দ্রার এই ভয়ঙ্কর রূপ দেখে রাজার চন্দ্রার প্রতি অনুরাগ অন্তর্হিত হল। সে সেই স্থান থেকে সরে গেলেন। তিনি মনে মনে ভাবলেন –এই বন্য নারী আর আমার মূল্য কী বুঝবে!

পূর্ব জন্মে আমি ছিলাম চন্দ্র আর যশোধরা চন্দ্রা।