Story of Mahabharat Part 76 in Bengali Spiritual Stories by Ashoke Ghosh books and stories PDF | মহাভারতের কাহিনি – পর্ব 76

Featured Books
Categories
Share

মহাভারতের কাহিনি – পর্ব 76

মহাভারতের কাহিনি – পর্ব-৭৬

বিরাট রাজার সভায় কুস্তিগীরদের সঙ্গে ভীমের লড়াইয়ের কাহিনি

 

প্রাককথন

কৃষ্ণদ্বৈপায়ন বেদব্যাস মহাভারত নামক মহাগ্রন্থ রচনা করেছিলেন। তিনি এই গ্রন্থে কুরুবংশের বিস্তার, গান্ধারীর ধর্মশীলতা, বিদুরের প্রজ্ঞা, কুন্তীর ধৈর্য, বাসুদেবের মাহাত্ম্য, পাণ্ডবগণের সত্যপরায়ণতা এবং ধৃতরাষ্ট্রপুত্রগণের দুর্বৃত্ততা বিবৃত করেছেন। নানা কাহিনি সংবলিত এই মহাভারতে সর্বমোট ষাট লক্ষ শ্লোক আছে। কৃষ্ণদ্বৈপায়ন বেদব্যাস পূর্বে নিজের পুত্র শুকদেবকে এই গ্রন্থ পড়িয়ে তার পর অন্যান্য শিষ্যদের শিখিয়েছিলেন। তিনি ষাট লক্ষ শ্লোকে আর একটি মহাভারতসংহিতা রচনা করেছিলেন, তার ত্রিশ লক্ষ শ্লোক দেবলোকে, পনের লক্ষ পিতৃলোকে, চোদ্দ লক্ষ গন্ধর্বলোকে এবং এক লক্ষ মনুষ্যলোকে প্রচলিত আছে। কৃষ্ণদ্বৈপায়ন বেদব্যাসের শিষ্য বৈশম্পায়ন শেষোক্ত এক লক্ষ শ্লোক পাঠ করেছিলেন। অর্জুনের প্রপৌত্র রাজা জনমেজয় এবং ব্রাহ্মণগণের বহু অনুরোধের পর কৃষ্ণদ্বৈপায়ন বেদব্যাস তাঁর শিষ্য বৈশম্পায়নকে মহাভারত শোনাবার জন্য আজ্ঞা দিয়েছিলেন।

সেইসব মানুষের সংখ্যা অত্যন্ত নগণ্য, যাঁরা বিশালাকার মহাগ্রন্থ মহাভারত সম্পূর্ণ পাঠ করেছেন। অধিকাংশ মানুষই মহাভারতের কিছু কিছু গল্প পড়েছেন, শুনেছেন বা দূরদর্শনে সম্প্রসারিত ধারাবাহিক চলচ্চিত্রায়ণ দেখেছেন, যা মহাভারতের খণ্ডাংশ মাত্র এবং মূলত কৌরব ও পাণ্ডবদের বিষয়ীভূত ও শ্রীকৃষ্ণের ভূমিকাকে কেন্দ্র করে নির্মিত।

মহাগ্রন্থ মহাভারত রচিত হয়েছে অসংখ্য কাহিনির সমাহারে, যে কাহিনিসমূহের অধিকাংশই কৌরব ও পাণ্ডবদের কাহিনির সঙ্গে বিশেষভাবে সম্পর্কিত।

সেই সমস্ত কাহিনিসমূহের কিছু কিছু কাহিনি সহজবোধ্য ভাষায় সুহৃদ পাঠক-পাঠিকাদের কাছে ধরাবাহিকভাবে উপস্থাপনা করার জন্য আমার এই ক্ষুদ্র প্রয়াস আশা করি ভালো লাগবে।

অশোক ঘোষ

 

বিরাট রাজার সভায় কুস্তিগীরদের সঙ্গে ভীমের লড়াইয়ের কাহিনি

যুধিষ্ঠির বিরাট রাজার সভায় যোগদানের কিছুদিনের মধ্যেই বিরাট রাজা, তাঁর পুত্র এবং রাজসভার সকলেরই প্রিয় হলেন। তিনি অক্ষহৃদয় নামে পাশা খেলার মন্ত্রগুপ্তি জানতেন, সেজন্য পাশা খেলায় সকলকেই তিনি তাঁর ইচ্ছে মতো হারিয়ে দিতেন। পাশা খেলায় যুধিষ্ঠির যে ধন জয় করতেন তা বিরাট রাজার অজান্তে ভাইদের দিতেন। ভীম যে সমস্ত মাংস এবং অন্যান্য খাদ্য রাজার নিকট থেকে পেতেন তা যুধিষ্ঠিরাদির কাছে বেচে দিতেন, যাতে লোকে তাঁদের ভাই-ভাই সম্পর্ক সন্দেহ না করে। অর্জুন যে সব পোশাক পেতেন তা অন্য ভাইদের কাছে বেচে দিতেন। নকুল ও সহদেব অন্য ভাইদেরকে দুধ, দই, মাখন ইত্যাদি দিতেন। অন্যের অজান্তে দ্রৌপদীও তার পতিদের দেখতেন।

এইভাবে চার মাস গত হলে মৎস্যরাজ্যের রাজধানীতে ব্রহ্মার উদ্দেশ্যে মহাসমারোহে এক জনপ্রিয় উৎসবের আয়োজন হোলো। এই মহোৎসবে নানা দিক থেকে অসুরতুল্য বলবান বিখ্যাত কুস্তিগীরেরা বিরাট রাজার আয়োজিত মহোৎসবে উপস্থিত হোলো। তাদের মধ্যে জীমূত নামে এক মহা বলবান কুস্তিগীর ছিলো, সে অন্যান্য কুস্তিগীরদের লড়াই করার জন্য আহ্বান করলো, কিন্তু কেউ তার কাছে গেল না। তখন বিরাট ভীমকে লড়াই করতে আদেশ দিলেন। রাজাকে অভিবাদন করে ভীম অনিচ্ছায় লড়াইয়ের মঞ্চে প্রবেশ করলেন এবং জীমূতকে লড়াই করতে আহ্বান করলেন। মদমত্ত মহাবল হাতির মতো দুজনের ঘোর বাহুযুদ্ধ হতে লাগল, তাঁরা পরস্পরকে নানাভাবে সগর্জনে আঘাত করতে লাগলেন। অবশেষে ভীম জীমূতকে তুলে ধরে শতবার ঘুরিয়ে মাটিতে ফেলে পা দিয়ে পিষে বধ করলেন। বিরাট খুশি হয়ে তখনই ভীমকে প্রচুর অর্থ পুরস্কার দিলেন। তার পর ভীম আরও অনেক কুস্তিগীরকে হারিয়ে দিলেন এবং অন্য প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকায় বিরাটের আজ্ঞায় সিংহ, বাঘ ও হাতির সঙ্গে লড়াই করলেন এবং রাজা বিরাট ও উপস্থিত সমস্ত দর্শককে আনন্দ দিলেন।

অর্জুন নাচ-গান কোরে রাজা ও রাজভবনের নারীদের মনোরঞ্জন করতে লাগলেন। নকুল ঘোড়াদের নানাবিধ শিক্ষা প্রদর্শন কোরে রাজাকে খুশি করলেন। সহদেবও বৃষদের নানাবিধ শিক্ষা প্রদর্শন করে রাজার নিকট অনেক পুরস্কার পেলেন। দ্রৌপদী সুখী হলেন না, মহাবল পাণ্ডবদের কষ্টসাধ্য কাজ করতে দেখে তিনি মনের ভিতর দুঃখ চেপে রেখে দীর্ঘশ্বাস ফেলতেন।

______________

(ক্রমশ)