Story of Mahabharat - Part-112 in Bengali Spiritual Stories by Ashoke Ghosh books and stories PDF | মহাভারতের কাহিনি – পর্ব 112

Featured Books
Categories
Share

মহাভারতের কাহিনি – পর্ব 112

মহাভারতের কাহিনি – পর্ব-১১২

যুদ্ধের দ্বিতীয় দিনে ভীম ও অর্জুন দ্বারা কৌরবসেনা বিনাশের কাহিনি

 

প্রাককথন

কৃষ্ণদ্বৈপায়ন বেদব্যাস মহাভারত নামক মহাগ্রন্থ রচনা করেছিলেন। তিনি এই গ্রন্থে কুরুবংশের বিস্তার, গান্ধারীর ধর্মশীলতা, বিদুরের প্রজ্ঞা, কুন্তীর ধৈর্য, বাসুদেবের মাহাত্ম্য, পাণ্ডবগণের সত্যপরায়ণতা এবং ধৃতরাষ্ট্রপুত্রগণের দুর্বৃত্ততা বিবৃত করেছেন। নানা কাহিনি সংবলিত এই মহাভারতে সর্বমোট ষাট লক্ষ শ্লোক আছে। কৃষ্ণদ্বৈপায়ন বেদব্যাস পূর্বে নিজের পুত্র শুকদেবকে এই গ্রন্থ পড়িয়ে তার পর অন্যান্য শিষ্যদের শিখিয়েছিলেন। তিনি ষাট লক্ষ শ্লোকে আর একটি মহাভারতসংহিতা রচনা করেছিলেন, তার ত্রিশ লক্ষ শ্লোক দেবলোকে, পনের লক্ষ পিতৃলোকে, চোদ্দ লক্ষ গন্ধর্বলোকে এবং এক লক্ষ মনুষ্যলোকে প্রচলিত আছে। কৃষ্ণদ্বৈপায়ন বেদব্যাসের শিষ্য বৈশম্পায়ন শেষোক্ত এক লক্ষ শ্লোক পাঠ করেছিলেন। অর্জুনের প্রপৌত্র রাজা জনমেজয় এবং ব্রাহ্মণগণের বহু অনুরোধের পর কৃষ্ণদ্বৈপায়ন বেদব্যাস তাঁর শিষ্য বৈশম্পায়নকে মহাভারত শোনাবার জন্য আজ্ঞা দিয়েছিলেন।

সেইসব মানুষের সংখ্যা অত্যন্ত নগণ্য, যাঁরা বিশালাকার মহাগ্রন্থ মহাভারত সম্পূর্ণ পাঠ করেছেন। অধিকাংশ মানুষই মহাভারতের কিছু কিছু গল্প পড়েছেন, শুনেছেন বা দূরদর্শনে সম্প্রসারিত ধারাবাহিক চলচ্চিত্রায়ণ দেখেছেন, যা মহাভারতের খণ্ডাংশ মাত্র এবং মূলত কৌরব ও পাণ্ডবদের বিষয়ীভূত ও শ্রীকৃষ্ণের ভূমিকাকে কেন্দ্র করে নির্মিত।

মহাগ্রন্থ মহাভারত রচিত হয়েছে অসংখ্য কাহিনির সমাহারে, যে কাহিনিসমূহের অধিকাংশই কৌরব ও পাণ্ডবদের কাহিনির সঙ্গে বিশেষভাবে সম্পর্কিত।

সেই সমস্ত কাহিনিসমূহের কিছু কিছু কাহিনি সহজবোধ্য ভাষায় সুহৃদ পাঠক-পাঠিকাদের কাছে ধরাবাহিকভাবে উপস্থাপনা করার জন্য আমার এই ক্ষুদ্র প্রয়াস আশা করি ভালো লাগবে।

অশোক ঘোষ

 

যুদ্ধের দ্বিতীয় দিনে ভীম ও অর্জুন দ্বারা কৌরবসেনা বিনাশের কাহিনি

প্রথম দিনের যুদ্ধের পর যুধিষ্ঠির শোকার্ত হয়ে কৃষ্ণকে বললেন, গ্রীষ্মকালে আগুন যেমন শুকনো ঘাস পুড়িয়ে দেয় তেমন ভীষ্ম আমাদের সৈন্য বিনাশ করছেন। যম, ইন্দ্র, বরুণ ও কুবেরকেও জয় করা যায়, কিন্তু ভীষ্মকে জয় করা অসম্ভব। আমি বুদ্ধির দোষে ভীষ্মের মতো অপরাজেয় যোদ্ধার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছি। আমি বরং বনে যাবো, সাক্ষাৎ মৃত্যুস্বরূপ ভীষ্মের কবলে আমার মিত্র এই রাজাদেরকে ফেলতে চাই না। কৃষ্ণ, কিসে আমাদের মঙ্গল হবে বলো। আমি দেখছি অর্জুন যুদ্ধে উদাসীন হয়ে আছে, একমাত্র ভীমই ক্ষত্রধর্ম অনুযায়ী যথাশক্তি যুদ্ধ করছে, গদাঘাতে শত্রুর সৈন্য রথ ঘোড়া ও হাতি বিনষ্ট করছে। কিন্তু এই সরল যুদ্ধে শত শত বৎসরেও ভীম শত্রুসেনা ক্ষয় করতে পারবে না।

কৃষ্ণ যুধিষ্ঠিরকে বললেন, আপনার শোক করা উচিত নয়। আমি, মহারথ সাত্যকি, বিরাট ও দ্রুপদ সকলেই আপনার শুভাকাঙ্খী। এই রাজারা এবং এঁদের সৈন্যদল আপনার অনুগত। এও শুনেছি যে শিখণ্ডী ভীষ্মের মৃত্যুর কারণ হবে। কৃষ্ণের এই কথা শুনে যুধিষ্ঠির ধৃষ্টদ্যুম্নকে বললেন, তুমি কৃষ্ণের মতো যোদ্ধা, কার্তিকেয় যেমন দেবগণের সেনাপতি তেমন তুমি আমাদের সেনাপতি। তুমি কৌরবগণকে সংহার করো, আমরা সকলে তোমার অনুসরণ করবো। ধৃষ্টদ্যুম্ন বললেন, মহারাজ, মহাদেবের বিধানে আমিই দ্রোণের হন্তা, ভীষ্ম, কৃপ, দ্রোণ, শল্য, জয়দ্রথ সকলের সঙ্গেই আজ আমি যুদ্ধ করবো।

যুধিষ্ঠিরের উপদেশে ধৃষ্টদ্যুম্ন ক্রৌঞ্চারুণ পদ্ধতিতে সেনা সাজালেন। পরদিন যুদ্ধ আরম্ভ হলে অভিমন্যু, ভীম, সাত্যকি, কেকয়রাজ, বিরাট, ধৃষ্টদ্যুম্ন এবং চেদি ও মৎস্য সেনার উপর ভীষ্ম বাণ বর্ষণ করতে লাগলেন। দুই পক্ষেরই সেনাসজ্জা বিপর্যস্ত হোলো, পাণ্ডবদের বহু সৈন্য হত হোলো। কৌরবপক্ষে ভীষ্ম, কৃপ, দ্রোণ, শল্য, দুর্যোধন ও বিকর্ণ এবং পাণ্ডবপক্ষে অর্জুন, সাত্যকি, বিরাট, ধৃষ্টদ্যুম্ন ও দ্রৌপদীর পুত্রগণ যুদ্ধে নিরত হলেন।

অর্জুন বহু কৌরবসৈন্য বধ করছেন দেখে দুর্যোধন ভীষ্মকে বললেন, পিতামহ, আপনি ও রথিশ্রেষ্ঠ দ্রোণ জীবিত থাকতে অর্জুন আমাদের সমস্ত সৈন্য বিনাশ করছে, আমার হিতকামী কর্ণ আপনার জন্য অস্ত্রত্যাগ করেছেন। অর্জুন যাতে নিহত হয় আপনি সেই চেষ্টা করুন। এই কথা শুনে ভীষ্ম বললেন, ক্ষত্ৰধর্মকে ধিক! এই বলে তিনি অর্জুনের সম্মুখীন হলেন। তাঁদের শঙ্খের আওয়াজে এবং রথের চাকার শব্দে ভূমি কম্পিত হতে লাগল। দেবতা, গন্ধর্ব, চারণ ও ঋষিগণ বললেন, এই দুই মহারথই অজেয়, এঁদের যুদ্ধ প্রলয়কাল পর্যন্ত চলবে।

ধৃষ্টদ্যুম্ন ও দ্রোণের মধ্যে ঘোর যুদ্ধ হতে লাগল। পাণ্ডবপক্ষীয় চেদিসৈন্য বিপক্ষের কলিঙ্গ ও নিষাধসৈন্য কর্তৃক পরাজিত হয়েছে দেখে ভীম কলিঙ্গসৈন্যের উপর শরাঘাত করতে লাগলেন। কলিঙ্গরাজ শুতাযু এবং তাঁর পুত্র শক্রদেব ও ভানুমান ভীমকে বাধা দিতে এলেন। ভীম অসংখ্য সৈন্য বধ করছেন দেখে ভীষ্ম তার কাছে এলেন এবং শরাঘাতে ভীমের রথের সমস্ত ঘোড়া বিনষ্ট করলেন। ভীম ভীষ্মের সারথিকে বধ করলে ভীষ্মের রথের চার ঘোড়া দ্রুত তার রথ নিয়ে রণভূমি থেকে চলে গেল। কলিঙ্গরাজ শুতায়ু ও তার দুই পুত্র ভীমের হাতে সসৈন্যে নিহত হলেন।

দুর্যোধনপুত্র লক্ষ্মণের সঙ্গে অভিমন্যুর যুদ্ধ হতে লাগল, দুর্যোধন ও অর্জুন নিজ নিজ পুত্রকে সাহায্য করতে এলেন। অর্জুনের শরাঘাতে অসংখ্য সৈন্য নিহত হচ্ছে এবং বহু যোদ্ধা পালাচ্ছে দেখে ভীষ্ম দ্রোণকে বললেন এই কালান্তক যমের মতো অর্জুনকে আজ কিছুতেই জয় করা যাবে না, আমাদের যোদ্ধারা শ্রান্ত ও ভীত হয়েছে।

বিজয়ী পাণ্ডবগণ গর্জন করতে লাগলেন। এই সময়ে সূর্যাস্ত হওয়ায় যুদ্ধবিরতি ঘোষিত হল।

______________

(ক্রমশ)