Story of Mahabharat Part 116 in Bengali Spiritual Stories by Ashoke Ghosh books and stories PDF | মহাভারতের কাহিনি – পর্ব 116

Featured Books
Categories
Share

মহাভারতের কাহিনি – পর্ব 116

মহাভারতের কাহিনি – পর্ব-১১৬

যুদ্ধের সপ্তম দিনে বিরাটপুত্র শঙ্খের মৃত্যু এবং ইরাবান, নকুল ও সহদেবের জয়ের কাহিনি

 

প্রাককথন

কৃষ্ণদ্বৈপায়ন বেদব্যাস মহাভারত নামক মহাগ্রন্থ রচনা করেছিলেন। তিনি এই গ্রন্থে কুরুবংশের বিস্তার, গান্ধারীর ধর্মশীলতা, বিদুরের প্রজ্ঞা, কুন্তীর ধৈর্য, বাসুদেবের মাহাত্ম্য, পাণ্ডবগণের সত্যপরায়ণতা এবং ধৃতরাষ্ট্রপুত্রগণের দুর্বৃত্ততা বিবৃত করেছেন। নানা কাহিনি সংবলিত এই মহাভারতে সর্বমোট ষাট লক্ষ শ্লোক আছে। কৃষ্ণদ্বৈপায়ন বেদব্যাস পূর্বে নিজের পুত্র শুকদেবকে এই গ্রন্থ পড়িয়ে তার পর অন্যান্য শিষ্যদের শিখিয়েছিলেন। তিনি ষাট লক্ষ শ্লোকে আর একটি মহাভারতসংহিতা রচনা করেছিলেন, তার ত্রিশ লক্ষ শ্লোক দেবলোকে, পনের লক্ষ পিতৃলোকে, চোদ্দ লক্ষ গন্ধর্বলোকে এবং এক লক্ষ মনুষ্যলোকে প্রচলিত আছে। কৃষ্ণদ্বৈপায়ন বেদব্যাসের শিষ্য বৈশম্পায়ন শেষোক্ত এক লক্ষ শ্লোক পাঠ করেছিলেন। অর্জুনের প্রপৌত্র রাজা জনমেজয় এবং ব্রাহ্মণগণের বহু অনুরোধের পর কৃষ্ণদ্বৈপায়ন বেদব্যাস তাঁর শিষ্য বৈশম্পায়নকে মহাভারত শোনাবার জন্য আজ্ঞা দিয়েছিলেন।

সেইসব মানুষের সংখ্যা অত্যন্ত নগণ্য, যাঁরা বিশালাকার মহাগ্রন্থ মহাভারত সম্পূর্ণ পাঠ করেছেন। অধিকাংশ মানুষই মহাভারতের কিছু কিছু গল্প পড়েছেন, শুনেছেন বা দূরদর্শনে সম্প্রসারিত ধারাবাহিক চলচ্চিত্রায়ণ দেখেছেন, যা মহাভারতের খণ্ডাংশ মাত্র এবং মূলত কৌরব ও পাণ্ডবদের বিষয়ীভূত ও শ্রীকৃষ্ণের ভূমিকাকে কেন্দ্র করে নির্মিত।

মহাগ্রন্থ মহাভারত রচিত হয়েছে অসংখ্য কাহিনির সমাহারে, যে কাহিনিসমূহের অধিকাংশই কৌরব ও পাণ্ডবদের কাহিনির সঙ্গে বিশেষভাবে সম্পর্কিত।

সেই সমস্ত কাহিনিসমূহের কিছু কিছু কাহিনি সহজবোধ্য ভাষায় সুহৃদ পাঠক-পাঠিকাদের কাছে ধরাবাহিকভাবে উপস্থাপনা করার জন্য আমার এই ক্ষুদ্র প্রয়াস আশা করি ভালো লাগবে।

অশোক ঘোষ

 

যুদ্ধের সপ্তম দিনে বিরাটপুত্র শঙ্খের মৃত্যু এবং ইরাবান, নকুল ও সহদেবের জয়ের কাহিনি

ষষ্ঠ দিন যুদ্ধের শেষে রক্তাক্তদেহে ফিরে এসে চিন্তিত হয়ে দুর্যোধন ভীষ্মের কাছে গিয়ে বললেন, পাণ্ডবরা আমাদের বীর সৈন্যগণকে নিহত কোরে খুশি হয়েছে। আমাদের মকর ব্যূহের ভিতরে এসে ভীম আমাকে পরাস্ত করেছে, তার ক্রোধ দেখে আমি মূৰ্ছিত হয়েছিলাম, এখনও আমি শান্তি পাচ্ছি না। পিতামহ, আপনার আশীর্বাদে যেন পাণ্ডবগণকে বধ কোরে আমি জয়লাভ করতে পারি। ভীষ্ম হেসে বললেন, আমি নিজের মনোভাব গোপন করছি না, তোমাকে বিজয়ী ও সুখী করতে চাই। কিন্তু পাণ্ডবদের সহায় হয়ে যাঁরা যুদ্ধ করছেন তারা সকলেই মহারথ অস্ত্রবিশারদ ও মহাবলো, তুমি পূর্বে তাদের সঙ্গে শত্রুতাও করেছিলে। তোমার জন্য আমি প্রাণপণে যুদ্ধ করবো, নিজের জীবনরক্ষার চেষ্টা করবো না। পাণ্ডবগণ ইন্দ্রের তুল্য বিক্রমশালী, কৃষ্ণ তাদের সহায়, তাঁরা দেবগণেরও অজেয়। তথাপি আমি তোমার কথা রাখবো, হয় আমি পাণ্ডবদের জয় করবো নতুবা তারা আমাকে জয় করবেন।

ভীষ্ম দুর্যোধনকে বিশল্যকরণী ওষুধ দিলে তার প্রয়োগে দুর্যোধন সুস্থ হলেন। পরদিন ভীষ্ম মণ্ডল ব্যূহ এবং যুধিষ্ঠির বর্জ ব্যূহ রচনা করলেন। যুদ্ধকালে অর্জুনের বিক্রম দেখে দুর্যোধন স্বপক্ষের রাজাদের বললেন, ভীষ্ম জীবনের মায়া ত্যাগ করে অর্জুনের সঙ্গে যুদ্ধ করছেন, আপনারা সকলে ভীষ্মকে রক্ষা করুন। রাজারা তখনই সসৈন্যে ভীষ্মের কাছে গেলেন।

দ্রোণ ও বিরাট পরস্পরকে শরাঘাত করতে লাগলেন। বিরাটের ঘোড়া ও সারথি নিহত হলে তিনি তার পুত্র শঙ্খের রথে উঠলেন। দ্রোণ এক সাপের বিষের মতো বাণ নিক্ষেপ করলে তার আঘাতে শঙ্খ নিহত হয়ে পড়ে গেলেন। তখন ভীত বিরাট কালান্তক যমের মতো দ্রোণকে ত্যাগ কোরে চলে গেলেন।

সাত্যকির ঐন্দ্র অস্ত্রে রাক্ষস অলম্বুষ রণস্থল থেকে বিতাড়িত হোলো। ধৃষ্টদ্যুম্নের বাণের আঘাতে দুর্যোধনের রথের অশ্ব নিহত হলে শকুনি তাকে নিজের রথে তুলে নিলেন। অবন্তিদেশীয় বিন্দ ও অনুবিন্দ অর্জুনপুত্র ইরাবানের সঙ্গে যুদ্ধ করতে লাগলেন। অনুবিন্দের চার ঘোড়া নিহত হলে তিনি বিন্দের রথে উঠলেন। ইরাবান বিন্দের সারথিকে বধ করলেন, তখন বিন্দের রথের সমস্ত ঘোড়া উদ্ভ্রান্ত হয়ে রথ নিয়ে চারদিকে ছুটতে লাগল। ভগদত্তের সাথে যুদ্ধে ঘটোৎকচ পরাস্ত হয়ে পালিয়ে গেলেন। শল্য ও তার দুই ভাগ্নে নকুল ও সহদেবের সঙ্গে যুদ্ধ করতে লাগলেন। শল্য  বাণ দ্বারা নকুলের রথের পতাকা ও ধনু ছিন্ন কোরে সারথি ও ঘোড়াকে নিহত করলে নকুল সহদেবের রথে উঠলেন। তখন সহদেব মহাবেগে এক বাণ নিক্ষেপ করলে শল্য অচেতন হয়ে রথমধ্যে পড়ে গেলে তার সারথি তাঁকে নিয়ে রণস্থল থেকে চলে গেল। চেকিতান ও কৃপাচার্যের রথ নষ্ট হওয়ায় তারা ভূমিতে যুদ্ধ করছিলেন। তারা পরস্পরের খড়্গাঘাতে আহত হয়ে মূৰ্ছিত হলেন, শিশুপালপুত্র করকর্ষ ও শকুনি নিজ নিজ রথে তাদের তুলে নিলেন।

ভীষ্ম বাণ ছুঁড়ে শিখণ্ডীর ধনু ভেঙ্গে ফেললেন। যুধিষ্ঠির ক্রুদ্ধ হয়ে বললেন, শিখণ্ডী, তুমি তোমার পিতার সম্মুখে প্রতিজ্ঞা করেছিলে যে ভীষ্মকে বধ করবে। তোমার প্রতিজ্ঞা যেন মিথ্যা না হয়, স্বধর্ম, যশ ও কুলমর্যাদা রক্ষা করো। ভীষ্মের কাছে পরাস্ত হয়ে তুমি নিরুৎসাহ হয়েছ। ভাই ও বন্ধুদের ছেড়ে কোথায় যাচ্ছ? তোমার বীর খ্যাতি আছে, তবে ভীষ্মকে ভয় করছ কেন?

যুধিষ্ঠিরের ভর্ৎসনায় লজ্জিত হয়ে শিখণ্ডী পুনর্বার ভীষ্মের প্রতি ধাবিত হলেন। শল্য আগ্নেয় অস্ত্র নিক্ষেপ করলে শিখণ্ডী তা বরুণাস্ত্র দিয়ে প্রতিহত করলেন। তার পর শিখণ্ডী ভীষ্মের সম্মুখীন হলেন, কিন্তু তার পূর্বের স্ত্রীত্ব স্মরণ কোরে ভীষ্ম শিখণ্ডীকে অগ্রাহ্য করলেন।

সূর্যাস্ত হলে পাণ্ডব ও কৌরবগণ রণস্থল ত্যাগ করে নিজ নিজ শিবিরে গিয়ে পরস্পরের প্রশংসা করতে লাগলেন। তার পর তারা শরীর থেকে তীরের ফলা তুলে ফেলে স্নান কোরে স্বস্ত্যয়ন করলেন। স্তুতিপাঠক, গায়ক ও বাদকগণ তাদের মনোরঞ্জন করতে লাগল। সমস্ত শিবির যেন স্বর্গতুল্য হোলো, কেউ যুদ্ধের আলোচনা করলেন না। তার পর তারা ভোজন সমাপ্ত কোরে ঘুমিয়ে পড়লেন।

______________

(ক্রমশ)