আমি: উফ অনেকটা পথে থেকে হেঁটে এসেছি আর পারছি না এইতো সামনে একটা দোকান দেখতে পাচ্ছি দোকানে বসেই দোকানদারের কাছে এক কাপ চা চাইলাম
আমার পাশেই একজন লোক বসেছিল অনেকক্ষণ ধরেই আমার থেকে লক্ষ্য করছিল। শেষে বলেই ফেলল-
হেমকান্তি: কি হয়েছে বলুন তো মশাই আপনাকে এতো বিধ্বস্ত লাগছে কেন?
আমি: হ্যাঁ নানা কিছু হয়নি তো অনেকটা পথ হেঁটে এসে দিত তাই হয়তো....
হেমকান্তি: আরে আমায় নির্ভয় বলতে পারেন বলুন কি হয়েছে
আমি: লোকটা এমনভাবে বলল আমি বলেই দিলাম-
আমাকে একটা কাজের জোগাড় করে দিতে পারবেন আমার ব্যবসাটা ডুবেছে, যা সঞ্চয় ছিল তাও সব শেষ একটা কাজের জোগান না করতে পারলে বউ বাচ্চা নিয়ে পথে বসতে হবে। যে কোন কাজ হলেই হবে..
হেমকান্তি: ও এই ব্যাপার তাহলে তো আপনি একদম ঠিক জনকেই বলেছেন আমার দুটো বাড়ি আছে তার মধ্যে কেষ্টপুরের বাড়িটাতে আমি থাকি না বাড়িটা দেখাশোনা করার কেউ নেই আমি তার জন্যই একটা লোক খুঁজছি, আপনি কি বাড়িটা দেখাশোনা করতে পারবেন আপনাকে আমি মাস গেলে ৭০০০ টাকা দেব..
আমি: সা সা সাত হাজার টাকা হ্যাঁ হ্যাঁ, কেন পারব না? নিশ্চয়ই পারবো( টাকাটা শুনে চমকে উঠলো)
আমাকে হেমকান্তি বাবু তার সেই বাড়িটার দিকে নিয়ে গেলেন বাড়িটা দেখে বেশ পুরনো লাগলো। বাড়ির চারপাশে দেওয়ালগুলোতে কোন রং নেই দেখে মনে হচ্ছে কেউ যেন থাকেই না এই বাড়িতে
হেমকান্তি: ঠাকুরদা ও ঠাকুরদা..
এত ডাকাডাকি অনেক পরে একজন বয়স্ক ভদ্রলোক ঘর থেকে বেরিয়ে আসলো। দেখে মনে হল বয়স একশোর কাছাকাছি তার বেশি নয়..
হেমকান্তি: এই দেখো ভায়া বয়স হয়েছে বুঝতেই তো পারছো, পুরো বাড়িতে উনি একা থাকেন উনি আর কদিনই বা আছে তুমি ওনাকেও দেখে রেখো কেমন..
আমি: হ্যাঁ হ্যাঁ আপনি নিশ্চিন্তে থাকুন
আমার দিকে সেম কান্তি বাবু ঠাকুরদা অর্থাৎ বিষ্ণুচরন বাবু কেমন কৌতূহলের চোখে তাকিয়ে রইল তার কিছুক্ষণ পরে উনি বলল
বিষ্ণুচরন: "শোনো এখানে যা ভাল মনে হচ্ছে তা কিন্তু ভালো নয় আর যা খারাপ মনে হচ্ছে তাই প্রকৃত ভালো" এই কথাটা প্রত্যেকদিন মাথায় রাখবে
এরপর থেকে বিষ্ণচরন বাবুর সাথে আমার ভালই জমে গেল ওনাকে ঠিক টাইমে খাবার দেওয়া ওষুধ খাওয়ানো সবই আমি করতাম উনিও আমাকে তার ছেলের মতই দেখতো তার বেশ কিছুদিন পরে-
আমি: সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে, বিষ্ণুচরণ বাবুকে ডাকতে গিয়ে দেখি তিনি মারা গেছেন তার মৃতদেহটা মাটিতে পড়ে রয়েছে। কেউ যেন তাকে ভারী কিছু একটা জিনিস দিয়ে আঘাত করে মেরেছেন..
সেসব দেখে আমি হেমকান্তি বাবুকে আগে ফোন করি।
তারপর দাহ কার্য মিটে যাওয়ার ঠিক পরেই সেদিন রাত্রিবেলা। সেদিনটা ছিল প্রবল ঝড় বৃষ্টির রাত..
আমি আর হেমকান্তি বাবু ঘরে বসে ছিলাম এমন সময়। দরজা ঠক ঠকের আওয়াজ
দরজা খুলে দেখলাম একজন মহিলা দাঁড়িয়ে আছেন |
আমি: আমি অনেকটা অবাক হয়ে থাকে জিজ্ঞেস করলাম 'কে আপনি? আপনাকে তো ঠিক চিনতে পারলাম না'
অচেনা মহিলা: আপনি আমাকে চিনবেন না আমাকে ভেতরে যেতে দিন হেমকান্তি বাবুর সাথে আমার কিছু দরকার আছে, শুনলাম উনি নাকি এখানেই আছে।
তারপর আর কোন কথা না বলে আমাকে ধাক্কা দিয়ে সোজা ঘরে ঢুকে গেল
আমি খেয়াল করে দেখলাম ওই মহিলার তো কোন ছায়া নেই মানুষের তো একটা ছায়া থাকে উনার নেই কেন এই প্রশ্নের মনটা যেন ভয়ে আতকে উঠল আমি তাড়াতাড়ি করে হেমকান্তি বাবুর কাছে গেলাম।
গিয়ে সেখানে দেখি এক অদ্ভুত দৃশ্য-
সেই মহিলা হেমকান্তি তাকে বলছে আমাকে কেন মারলে আমাকে কেন মারবে? সঙ্গে সঙ্গে দেখি তার গলার আওয়াজটা কেমন পাল্টে গেল সে আর কোন মেয়ের গলায় নয় বয়স্ক ছেলের গলায় কথা। তার চেহারাটা আস্তে আস্তে পাল্টে গেল। হুবহু বিষ্ণুচরন বাবুর মত তার কপাল থেকে রক্ত ঝরছে হাতে পায় তেমনি কাটা দাগ যেমন তার মৃত দেহটা ছিল..
আমাকে মেরে এই পুরো সম্পত্তিটা তুই পাবে ভেবেছিস বলে সঙ্গে সঙ্গে আমাকে যেন কোন একটা শক্তি ঠেলে ঘর থেকে বের করে দিল দরজাটা অমনি বন্ধ হয়ে গেল ভেতর থেকে হেমকান্তিদার সেই আর্তনাদ শোনা যাচ্ছে আর দরজার নিচের ফাঁকা থেকে দেখে মনে হচ্ছে তাকে কেউ মেরে ফেলছে আমি ভয় সেখান থেকে দৌড়ে অনেক দূরে চলে গেলাম আমি যখন সেখানে কি বা করতাম....|