Samay Ghurni - 2 in Bengali Science-Fiction by Srabanti Ghosh books and stories PDF | সময় ঘূর্ণি - 2

Featured Books
Categories
Share

সময় ঘূর্ণি - 2

সময় ঘূর্ণি ⌛✍️


|| ২ ||


বউবাজারের এক পুরনো শরিকি বাড়িতে, দুজন এখন মুখোমুখি। মেঝেতে ছড়ানো কাগজ, দেয়ালে পেরেক ঠোকার শব্দ, আর ঘরে একটা অদ্ভুত গন্ধ, ছাপার কালি, পাঁজা-কাটা কাগজ আর ধুলোবালির।

অর্ণিলা ব্যাগ থেকে বের করে অনিলাভর হাতে তুলে দিল পুরনো নোটবুকটা।
পাতা উলটোতেই ভিতরের জীর্ণ পাতায় হাতে লেখা:
“𝘛𝘪𝘮𝘦 𝘋𝘪𝘴𝘱𝘭𝘢𝘤𝘦𝘮𝘦𝘯𝘵 𝘔𝘰𝘥𝘦𝘭: 𝘋𝘦𝘭𝘢𝘺 1.45 𝘴𝘦𝘤.”
“𝘚𝘶𝘣𝘫𝘦𝘤𝘵 12A – 𝘈𝘯𝘪𝘭𝘢𝘷 𝘋𝘢𝘵𝘵𝘢”

অনিলাভ থমকে যায়। তার নাম? এইখানে? কিন্তু এই তো প্রথমবার সে এই মেয়েকে দেখছে !

--“এইসব কী? আমার নাম এখানে কীভাবে?”

--"এটা দাদুর প্রজেক্ট। এর কথা পুরনো সায়েন্স জার্নালে আছে… আমার দাদুর নামে। আর দাদু তোমাকে নির্বাচন করে গেছেন।”

অনিলাভ থমকে গেল, "মানে? কী বলছ তুমি?”

--“তুমি হয়তো জানো না, তোমার কেনা ঘড়িটা একটা single-shot time shifter. একবার মাত্র সময় পিছিয়ে নিয়ে যায় — ‘দেড় সেকেন্ড’। কিন্তু সেই দেড় সেকেন্ডেই কোনো সিদ্ধান্ত বদলালে, টাইমলাইন সম্পূর্ণ পাল্টে যায়।”

অনিলাভ হেসে ফেললো, “এটা তো সিনেমার মতো শোনাচ্ছে !”

অর্ণিলা শান্ত গলায় বলল, “হ্যাঁ, ঠিক যেমন তুমি গতকাল দুপুর ১:৩২ এ সেই বাইকটাকে দেখতে পেয়েছিলে। কিন্তু এইবার তুমি ওকে এড়িয়ে গেলে। এইটাই টাইম শিফট।”

📜✍️

ওরা রাস্তার ধারের কফির দোকানে বসে। অর্ণিলা এবার একটু মুচকি হাসে।

--“আমরা এর আগেও ডেট করেছি, মনে আছে?”

অনিলাভ কিছুই বোঝে না। হাঁ করে তাকিয়ে থাকে। অর্নিলার ঠোঁট টেপা হাসিটা ভীষণ মিষ্টি।

--“একটা টাইম লুপে তুমি আটকে গিয়েছিলে একবার। দাদু তোমাকে সেই লুপ থেকে বার করে আনেন। তুমি তখন বলেছিলে, 'জীবনটা একটু হলেও বদলাক, তাও চাই।' মনে পড়ে?”

অনিলাভ মাথা নাড়ল, “না, কিছু মনে নেই।”

অর্ণিলা বলল, “কারণ লুপ কাটার সময়, মেমোরি মুছে যায়। শুধু ওই লাল ঘড়ির ভিতরেই লুপের হাইপার রেজোন্যান্স থেকে যায়। সেটাই একমাত্র প্রমাণ।”

📜✍️

একদিন ওরা দুজনে হাঁটতে হাঁটতে কলেজের প্রাচীন জাদুঘর ঘুরে দেখে। পুরনো তামার তারে বাঁধানো ফিজিক্স ইন্সট্রুমেন্ট, এক কোনায় ধুলোর স্তূপে লুকিয়ে থাকা কয়েকটা ভাঙা ঘড়ি।

হঠাৎ অর্ণিলা থেমে গেল। একটা ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বলল, “এটা… এটাই তো!”

ঘড়িটার মধ্যে কাঠে খোদাই করা নাম : ‘Aniruddha Sen 1968’

--“আমার দাদুর করা প্রথম টাইম প্রোটোটাইপ। যেটা ব্যর্থ হয়েছিল। কিন্তু এইটার মধ্যেই একটা মেসেজ ছিল… এমন কিছু যা ভবিষ্যতের কাউকে বলার ছিল। আমার বিশ্বাস, সেই কাউকে তুমি।”

অনিলাভ এবার হাসে না। তার গলা শুকিয়ে আসে, “মানে তোমার দাদু জানতেন আমি আসব? কবে?”

--“হ্যাঁ, জানতেন। তাই তো লিখেছিলেন — ‘যদি কেউ একদিন এই ঘড়ি খোলে, তার জন্য একটা চিঠি রেখেছি পিছনের কাঠের গহ্বরে।"


বাইরে সন্ধ্যা নামছে। বাতি জ্বলছে রাস্তার মাথায়। ওরা দুজন বুঝতে পারছে, ওদের মাঝে ভালবাসার আলতো স্পর্শেও টাইম মিস্ট্রির অন্ধকার ছায়া ঘনাচ্ছে।

--“তুমি সত্যি জানো আমি কে?” অনিলাভ নিশ্চিত হতে পারে না।

--“হ্যাঁ। প্রথম তোমায় দেখি একটা টাইম রেকর্ডিং ফিডে… আমি তখন রিসার্চার, আর তুমি ছিলে একটা সিমুলেশনের সাবজেক্ট। ভাবিনি বাস্তবেও দেখা হবে।”

--“তুমি ভাবো… আমরা কি বারবার… একে অপরকে চিনে নিতে পারব?” অনিলাভ প্রথমবার, সরাসরি তাকায় ওর চোখে।ওখানে যেন বসন্ত দিনের একটানা বাতাস, পুরোনো পত্রিকায় পাওয়া কোনো কবিতা, কিংবা হারিয়ে যাওয়া কোনো স্মৃতির খোঁজ।

--"সময় কি সত্যিই ফুরোয়?” অর্নিলা ওর হাত ধরে।

সেই রাতে, দুজন পাশাপাশি হাঁটতে থাকে বউবাজার থেকে কলেজ স্ট্রিটের দিকে।বইয়ের দোকান বন্ধ, আলোর নিচে ছায়া দীর্ঘ, আর কথা? শুধু চোখে।

ওদের মন বলে, “আমরা কি একটা ভুল সময়ে একে অপরকে খুঁজে পেয়েছি? নাকি এইটাই ঠিক সময় ছিল?”

📜✍️

ঘড়িটার গোপন শক্তি জানতে পেরেছে অন্য কেউ। একটা কর্পোরেট সংস্থা ChronoCorp। তারা চায়, শেয়ারবাজার আগে থেকেই জানাতে, সময়ের স্রোতকে নিয়ন্ত্রণ করতে, যুদ্ধের আগেই যুদ্ধ শেষ করে দিতে, মানুষের স্মৃতি বদলে দিতে, আর ইতিহাস পাল্টে ফেলতে।

এই সংস্থা অর্ণিলার দাদুর রিসার্চ চুরি করতে চেয়েছিল। তখনই ঘড়িটাকে গোপনে পাঠানো হয় কলেজ স্ট্রিটে, সাধারণ জিনিসের ভিড়ে।

কিন্তু এখন… তারা জানে ঘড়িটার মালিক অনিলাভ।

তারা তৈরি হয়েছে।

📜✍️

ওদিকে সেই রাতে, অর্নিলা আর অনিলাভ ফিরে যায় সেই কোণাটায়। যেখানে প্রথম দেখা হয়েছিল।

ঘড়ির কাঁটা তখন আবার...
১টা ৩২ মিনিট ৪৪ সেকেন্ড।

--“অনেক কিছু বদলাবে এবার,” বলে অর্ণিলা, “তুমি জানো তো, তুমি একমাত্র… যার জন্য এই টাইমলুপ তৈরি হয়েছে।”

--“তুমি কী চাও, অর্ণিলা?”

--“তোমায়… হয়তো আরও আগে থেকেই ভালোবাসতাম, জানো?”

অনিলাভ থেমে যায়। সময় থেমে যায়।
তারপর, দুজনের মাঝের দূরত্বটা ক্রমশ ক্ষয় হতে হতে… একটুকরো চুম্বনের নরম মুহূর্তে গলে যায়।

হঠাৎ… অনিলাভর হাতে ঘড়িটা বেজে ওঠে !
টিক… টিক… টিক…
একটা দরজা খুলে যায় বাস্তবের সীমানায়।

আর সামনে আসে এক ছায়ামূর্তি। গলায় কালো টাই, হাতে মেটাল কেস, “Mr.Dutta… ChronoCorp wants you now. Time is not yours anymore.”

অনিলাভ আর অর্নিলা চোখে চোখে হাসে, "সময় তো কোনোদিনই আমাদের ছিল না। কিন্তু ভালোবাসা ছিল। ভালোবাসা… টাইমলাইনের সবচেয়ে শক্তিশালী একটা ব্যতিক্রম, একটা বেঁচে থাকা চিরকালীন সত্য।

❤️চলবে_____💜💙💚💛🧡❤️

( আগামী অংশে )
[ অনিলাভ আর অর্ণিলা পালাতে শুরু করে, কলকাতার একটা টাইম পকেট দিয়ে।
জানা যায়—ঘড়িটা শুধু সময়ে ফেরে না, এটা একটা "হার্ট সিগন্যাল" এর ওপর কাজ করে।
কার ভালোবাসা যত গভীর, সে তত দূর যেতে পারে—অতীতে, ভবিষ্যতে। ]
💙⌛✍️

কেমন লাগল দ্বিতীয় পর্বটা? 
রেটিং রিভিউ দিয়ে জানাতে ভুলবেন না।