Jongoler Prohori - 12 in Bengali Thriller by Srabanti Ghosh books and stories PDF | জঙ্গলের প্রহরী - 12

Featured Books
Categories
Share

জঙ্গলের প্রহরী - 12

জঙ্গলের প্রহরী

পর্ব - ১২

💟💕💟💕💟💕💟

- "না রে। তোর উপর আমি রাগ করতে পারি? আসলে এবার সত্যিই সিগারেট ছেড়ে দেব ভাবছি। বরং তোর সঙ্গে গাইব। চল কি গাইবি?"

- "ওরেত্তারা, তোমার হল কি গুরু?" লাফিয়ে এল ঋষি, আরেকটা টুলে বসে টেবিল বাজিয়ে গান ধরল -

প্রথমত আমি তোমাকে চাই
দ্বিতীয়ত আমি তোমাকে চাই
তৃতীয়ত আমি তোমাকে চাই
শেষ পর্যন্ত তোমাকে চাই…

ছেলেমানুষি ছাপিয়ে দুজনের গলা চড়ছে। ছোটবেলা থেকে পাড়ার পুজো প্যান্ডেলে শোনা গান, ভুলে যাওয়ার পরেও স্মৃতির ভিতরে শিকড় ছড়িয়ে রেখেছিল। আজ সুর খুঁজে পেল। 

সেদিন অনেক রাতে যখন সিদ্ধার্থ চিত হয়ে শুয়ে, শুক্লার কাছ থেকে আনা বইটা মুখের সামনে খুলে ধরল তখন ওর মনটা কিসের ভারে যেন হাঁসফাঁস করছে। একদিকে এত ঘটনা, তার উপর হঠাৎ জীবন কেমন চেনা পথ ছেড়ে মোড় বদলাতে চাইছে। 

বইয়ের পাতা উলটোতে উলটোতে ও ভাবছে, "অনেকগুলো মানুষ, অনেকগুলো ভাবনা। প্রতি কেসের শুরুতে এমনই থাকে। তারপর আকাশ পাতাল এক করে সিদ্ধার্থ রায় তাদের গল্পটা ঠিক জেনে যায়। তবে এবার কি সিদ্ধার্থ রায়ের নিজেরই একটা গল্প আছে পাশাপাশি? গল্পটা সমান্তরাল, নাকি ওভারল্যাপ করবে? বুঝতে পারছি না।"

ততক্ষণে এই রায়চৌধুরী বাড়ির ইতিহাস খুঁজে পেয়েছে বইয়ের পাতায়। বর্গী আক্রমণের আগে রায়চৌধুরীরা এসেছিল রাজপুতানা থেকে ভাগ্য অন্বেষণে। তারা আসলে রাজপুত ক্ষত্রিয়। ধীরে ধীরে বইয়ের কাহিনীতে ডুবে যায় সিদ্ধার্থ।  

💟💙💟💙💟💙💟

পরদিন সকালে তাপস হালদারের সঙ্গে দেখা করার কথা। চটপট তৈরি হয়ে বাইরে এসে সিদ্ধার্থ সঞ্জয়কে বলল, "একটু শাক্য গোস্বামীর বাড়ি হয়ে চলো।" যথারীতি স্করপিও গাড়ির সামনে উঠে বসে। 

পিছনের দরজা খুলতে খুলতে ঋষি বলল, "ও কিছু বলবে আশা করছ?"

- "না না জেরা নয়। শুক্লার খবর নিতে যাব। কাল ওরা আমাকে সন্ধেবেলা লিফট দিয়েছে।" 

ঋষি ঢোঁক গেলে, তাও জানে না সিগারেট খাওয়ার বারণটাও শুক্লার। তাহলে অবশ্যই এস্পার ওস্পার হয়ে যেত। কারণ সিদ্ধার্থর সামনে ঋষিও আর সিগারেট খেতে পারছে না। যে ছেড়ে দেবে তাকে লোভ দেখাতে আছে নাকি? 

শাক্যর বাংলো গাড়িতে পনেরো মিনিটের পথ। ঝপ করে এসে এবার একটু কিন্তু কিন্তু লাগছে সিদ্ধার্থর। বাংলোর ঢালু টিনের চালে ঢাকা বারান্দা আর সামনের বাগানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে চেয়ার পেতে বসে আছে সবাই, শুক্লার বন্ধুরা আছে, শাক্যও। একটা মোড়ায় পা তুলে বেতের চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে আছে শুক্লা। 

সকালের সূর্যের নরম আলোয়, বাগানের মরসুমী ফুলের মাঝে এমন গল্পের আসরে মন ভাল হয়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু যতটা খোলামনে সিদ্ধার্থ এসেছিল, এখন মেজাজটা খিঁচড়ে গেছে। এমন অদ্ভুত এলাকা, কারও বাড়ি এলে ভদ্রতা করে কিছু যে হাতে করে আনবে, তারও উপায় নেই। এতগুলো কলকাতার লোকের সামনে অভদ্রের মতো ও এসে উপস্থিত। 

তবে ওদের দেখেই হাসিমুখে শাক্য এগিয়ে এসেছে। 

ঋষিও দেখা গেল টকটক করে শুক্লার সামনে গিয়ে একগাল হেসে বলল, "কেমন আছেন ম্যাডাম? এদিক দিয়ে যাচ্ছিলাম, ভাবলাম আপনাকে একবার দেখে যাই।"

শুক্লাও মুখে হোস্টের হাসি ফুটিয়ে বলে, "আবার ম্যাডাম কেন ঋষিদা? বসুন বসুন। খুব ভাল লাগছে আপনারা আসায়।" শুক্লার বন্ধু ছেলেটি উঠে পড়ে জায়গা দেয়, ঋষিও বেশ চেয়ার টেনে শুক্লার পাশে এনে বসে পড়ে, "আপনাকে হাসিখুশি দেখে খুব ভাল লাগল।"

মনে মনে ঋষির উপর দাঁত কিড়মিড় করছিল সিদ্ধার্থ। কারণ জিজ্ঞেস করলে বলতে পারবে না। ততক্ষণে আসুন আসুন করে ওকেও এনে বসিয়েছে শাক্য। শুক্লার অন্যপাশে বসে সিদ্ধার্থও একই প্রশ্ন করে, "কেমন আছেন?" 

শুক্লার মুখে হাসি, "অনেক ভাল। দেখুন না আমরা একটু ঘুরতে বেরোব ভাবছিলাম, দাদা কিছুতেই আমাকে যেতে দিচ্ছে না।"

একেবারেই ব্যক্তিগত কথা, সিদ্ধার্থ অস্বস্তি নিয়ে শাক্যর দিকে তাকায়। শাক্য মাথা নাড়ে, "না না, এই উঁচুনিচু জমিতে ওকে আজ হাঁটতে দিচ্ছি না। আমার সঙ্গে সবাইকে নিয়ে গিয়ে চারিদিক দেখিয়ে দিচ্ছি।"

- "সেটাই ভাল শুক্লা, আপনি দুদিন রেস্ট নিন।" সিদ্ধার্থ কি বলবে কথা খুঁজে পাচ্ছে না। 

- "আপনাকে বোধহয় কাল দেখলাম?" রাজীব আলাপ করতে চায়। 

সিদ্ধার্থর আগেই শাক্য বলে, "হ্যাঁ, উনি ইনটেলিজেন্স অফিসার সিদ্ধার্থ রায়, ইনি ঋষিপ্রতিম বসু।"

- "আচ্ছা আপনারাই? গতকাল এসে থেকে আমরা শুক্লার কাছে শুধু আপনাদের গল্প শুনছি। চটপট সব রহস্য মিটিয়ে দিন তো। আমরা তারপর চুটিয়ে সবদিকে ঘুরে আসি।" শুক্লার এক বান্ধবী কলকল করে ওঠে। 

- "সবার সঙ্গে আলাপ করিয়ে দিই," শুক্লা হাত তুলে একে একে চেনায়, "ইনি রাজীবদা, আমাদের লেকচারার, ও মণীষা, এই যে শ্রীতমা, ও হল দিয়া। আর এই যে শমীক।" মণীষাই কথা বলেছিল ওদের সঙ্গে। 

এবার রাজীব বলে, "আমরা সবাই ঘুরতে এলাম, আর আপনারা এলাকার কি অবস্থা করে রেখেছেন? বাইরে থেকে আপনাকে আনার পরও একই অবস্থা ! পাচার চলছেই। এদিকে শাক্য বলছেন, চিতাবাঘ বেরোতে পারে, সাবধানে থাকতে হবে। এই যদি দেশের অবস্থা হয়, আপনারা যে কি করছেন !" ঋষি আড়চোখে সিদ্ধার্থর মুখটা দেখে। শাক্যসহ বাকিদের মাথা নিচু। 

[ ❤ সিদ্ধার্থ - শাক্য টক্কর কি ঘুরে গেল সিদ্ধার্থ - রাজীবে? মুখে মুখে কথা ছোঁড়াছুঁড়িই চলবে কেবল? 

❤ জানা যাবে পরের পর্বে। অনেক ধন্যবাদ এই পর্বটি পড়ার জন্য। আপনার মতামতের অপেক্ষা করছি। দয়া করে মন্তব্য করে জানাবেন। ]

চলবে