জঙ্গলের প্রহরী
পর্ব - ২৫
❤♣❤♣❤♣❤
শুক্লা কথা শুরু করার আগেই সিদ্ধার্থর টনক নড়েছিল। আসলে রাজীবকে প্রথমবার দেখেই ওর বদ্ধমূল ধারণা হয়েছিল, শুক্লার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক আছে এর। কেস সলভ করতে পারেনি বলে সেই রাজীবই আবার ওকে খুঁচিয়েছিল কাল। এতজনের সামনে সিদ্ধার্থর মাথা গরম হয়ে গেছিল। ওও পালটা টীজ করে বসেছিল। তার জন্য কি শুক্লার সঙ্গে রাজীবের কোনো সমস্যা হয়েছে?
মুহূর্তে নিজের মন নিজের কাছে ধরা পড়ে সিদ্ধার্থর। ছি ছি ছি !! কি করে বসেছে ! শাক্যর উপর একটা সন্দেহ ছিল, সেটা সকলের উপরই প্রথমে ছিল। ওটা ওর কাজের অঙ্গ। তার উপর শুক্লা নিজের বইটার বদলে নতুন একটা বই দেওয়ায় ওর শুক্লার উপরেও সন্দেহ হয়েছিল। এদিকে যে শুক্লাকে ভীষণ ভালও লাগছে ! সেটা না নিজে বুঝতে পারছিল, না নিজের কাছে স্বীকার করতে পারছিল ! তার উপর হাজির হল রাজীব ! এখন বুঝল, এইজন্যই ওর কিচ্ছু ভাল লাগছিল না। আর তার শোধ নিয়ে বসে আছে শুক্লার উপর !
মাথা নিচু করে বসে ছিল সিদ্ধার্থ। শুক্লা যদি এই অপরাধের ঘটনার সঙ্গে যুক্ত হত, তার শাস্তি হত আইনের পথে। এটা কি করে বসে আছে ও? শুক্লাকে থামিয়ে বলে ওঠে, "শুক্লা প্লিজ, আর কিছু বলতে হবে না। কাল তোমাদের বাড়িতে যা হয়েছে... " অন্ততঃ এখন শুক্লার কাছে ক্ষমা চেয়ে তারপর দরকার হয় রাজীবের কাছেও ক্ষমা চাইতে রাজি ও। এবং ওর ধারণা শুক্লা সেজন্যই এসেছে। মুখে বলতে পারছে না ওকে, তাই কান্নাকাটি করছে।
এদিকে গতকালের কথা উঠতেই শুক্লা ভাবে রাজীবের কথায় সিদ্ধার্থর এখনও রাগ রয়েছে। সিদ্ধার্থকে নিজের কথাগুলো বোঝাতে পারছে না বলে যে রাগ, উষ্মা তৈরি হচ্ছিল, তার বদলে লজ্জায় সংকুচিত হয়ে পড়ে শুক্লা। বিভ্রান্তের মতো তাকিয়ে থাকে সিদ্ধার্থর দিকে।
সিদ্ধার্থ বলে যাচ্ছে, "গতকাল আমি কিছু মীন করে বলতে চাইনি। কথার পিঠে কথা হচ্ছিল। তাও যদি, মানে আমি বলছি কি, আমি সরি শুক্লা, প্লিজ আমাকে ক্ষমা করে দাও।" জীবনে বোধহয় প্রথম কারও কাছে নত হল সিদ্ধার্থ রায়। শুক্লা বিস্ফারিত চোখে চেয়ে আছে। ও ক্ষমা চাইছে কেন?
- "শুক্লা, আমাকে বলো প্লিজ, কি হয়েছে। রাজীবের সঙ্গে ঝগড়া হয়েছে তোমার? উনি কিছু মনে করেছেন আমার কথায়? শুক্লা, কথা বলো, তুমি তো বোঝো, আমি সম্পূর্ণ বাইরের একটা লোক," ওর সামনে থেকে উঠে আসে সিদ্ধার্থ, জানালার সামনে এসে দাঁড়ায়, "আমি দুদিন পর চলে যাব। তোমরা দুজন তখন হাসবে আমাকে নিয়ে। আমি.... তুমি বললে আমি রাজীবের কাছেও ক্ষমা চাইব। কথা দিচ্ছি। কিন্তু প্লিজ আজ না। আজ আমি যেতে পারব না। এই একটা রাত সময় দাও আমাকে।"
সিদ্ধার্থর একটানা কথা শুনতে শুনতে শুক্লা বুঝেছে ও কি বলতে চায়। আর সেটা বোঝামাত্র শুক্লার সিদ্ধার্থর উপরেই রাগ হয়ে যায়, লোকটা কি কিচ্ছু বোঝে না? কে অপরাধী সেটা তো ধরতে পারছেই না, এখন ওর কথাটাও বুঝতে পারছে না? শুক্লা ওকে দেখতে দৌড়তে দৌড়তে এল আর ও যাবে রাজীবদার কাছে? তাও ক্ষমা চাইতে?
- "তুমি থামবে? তোমাকে এখন রাজীবদার কাছে যেতে কে বলেছে?" শুক্লা আবার ঝাঁঝিয়ে ওঠে, সিদ্ধার্থ থতমত হয়ে মুখ ঘুরিয়ে ওর দিকে তাকায়। শুক্লার ধমক থামে না, "রাজীবদা এক জিনিস, সব তাতে নাক গলিয়ে মাথা গরম করে দিচ্ছে, সবেতে হামবড়াই। তুমি আরেক জিনিস, তার চিন্তায় ইয়ে হয়ে যাচ্ছ। কোনোমতে আমি এসেছি, যাতে রাজীবদা না জানতে পারে, সেখানে আমি কি বলছি শুনছই না।"
- "রাজীবদাকে না জানিয়ে আসা উচিত হয়নি তোমার।" গম্ভীর গলায় কথাটা বলে সিদ্ধার্থ এসে খাটে বসে।
- "রাজীবদার পাঁচালী বন্ধ করবে?"
- "শুক্লা তুমি বাচ্চা মেয়ে না। যতই শ্রীতমা সঙ্গে আসুক, রাজীবদাকে লুকিয়ে আমার সঙ্গে দেখা করতে আসা উচিত হয়নি।"
- "ও আমি তোমাকে দেখতে এসেছি, সেটা তোমার ভাল লাগছে না ! আর তুমি যেটা করেছ সেটা খুব ভাল করেছ? কে তোমাকে বলেছিল বুনো হাতিদের সামনে হিরোগিরি করতে?"
- "আমি হিরোগিরি করিনি। ঐ সময়ে একজন মানুষ যা করে আমি তাই করেছি। ঋষি, সঞ্জয়, হাটের লোকেরা সবাই অন্যকে ডেকে সরিয়ে নিয়েছিল, জিনিস সরাতে হেল্প করেছিল। তুমি ছিলে না, তাই দেখোনি।" সকলের প্রশংসায় সিদ্ধার্থর সত্যিই ব্যাপারটা নিয়ে লজ্জা করছিল।
- "সেটা সবাই করেছে, মানলাম। তারপর তুমি কি করেছ? হাতিদের সামনে দৌড়লে? যদি, যদি ওরা খেপে যেত আরও? তুমি যদি পালাতে না পারতে?" শুক্লার গলা কেঁপে যায়।
শুক্লা কি তার মৃত্যুর আশঙ্কায় তার জন্য এতখানি চিন্তা করছে? সিদ্ধার্থর মাথা কাজ করে না। তবে এটুকু সিদ্ধান্তে আসে, ওর জন্য শুক্লার এত চিন্তা হতেই পারে না।
- "কি হল? উত্তর নেই কেন তোমার?" শুক্লা আবার প্রশ্ন করে।
- "উত্তর আবার কি? বাচ্চা একটা মেয়ে, এগারো বারো বছর বয়েস। স্কুল যাওয়ার কথা। হয়ত যায়। ছুটিতে বাবার সঙ্গে হাটে জিনিস বেচতে এসেছে। ভয় পেয়ে হাতির দিকে চলে গেছে দেখলে সবাই এটাই করত। ঋষিও ছুটে এসেছিল।"
- "জানি, আমরা হাটে শুনেছি। তোমাকে বাঁচাতে এসেছিল ঋষিদা। তুমি ওপারে যাচ্ছ দেখে থেমে গেছে।"
- "তাহলে?"
- "কি তাহলে?"
- "তাহলে হঠাৎ এসব কথা বলছ কেন? কান্নাকাটি করছ কেন?" অবাক সিদ্ধার্থ গুছিয়ে বসে প্রশ্ন করে।
[ ❤ শুক্লা আর সিদ্ধার্থ সামনাসামনি কথা বললে কি দুজনের মন দুজনের কাছে ধরা পড়বে? আশীষের মৃত্যু আর চোরাচালানের সঙ্গে শাক্য আর শুক্লার যোগই বা কতটা?
❤ জানা যাবে পরের পর্বে। অনেক ধন্যবাদ এই পর্বটি পড়ার জন্য। আপনার মতামতের অপেক্ষা করছি। দয়া করে মন্তব্য করে জানাবেন। ]
চলবে