Jongoler Prohori 35 in Bengali Thriller by Srabanti Ghosh books and stories PDF | জঙ্গলের প্রহরী - 35

Featured Books
Categories
Share

জঙ্গলের প্রহরী - 35

জঙ্গলের প্রহরী

পর্ব - ৩৫

❤♠❤♠❤♠❤

- "আমিই বলছি, এখন তো কোনো বাধা নেই। বর্ষায়, বৃষ্টি, জলোচ্ছ্বাসে কোনোভাবে একজোড়া চিতাবাঘ ভূটানের দিক থেকে চলে এসেছিল এখানে। আমরা ফরেস্ট ডিপার্টমেন্টের লোকেরা টের পেয়েছিলাম। এবং ভীষণ খুশি ছিলাম। এক তো চিতা এখন ভারতেই বিলুপ্তপ্রায়, তার উপর এরা পূর্ণবয়স্ক, জোড়ায় এসেছে। একই রকম জঙ্গল, পরিবেশ, আবহাওয়া, মানিয়ে নিতে অসুবিধা হবে না। যদি এরা থেকে যায়, আগামী মরসুমে আমরা এদের ছানা হওয়ার আশা করি। হ্যাঁ, উপরমহলে আমি রিপোর্ট করেছি নিয়মমাফিক, কিন্তু স্থানীয় মানুষ যাতে এদের বিরক্ত না করে, তাই খবরটা চেপে রেখেছিলাম উপরমহলে জানিয়েই।" শাক্যর মুখে চাপা হাসি। 

- "শাক্য শাক্যর কাজ করছিল। এদিকে বিডিকে একবছরের বেশি সময় ধরে সেট করা সিস্টেম পালটাতে হয়েছিল। আসলে আর্মস পাচার হতো সোজা রাস্তায়। এই জঙ্গলে আসতই না। ওগুলো নিচেই বিডি নিজে রিসিভ করত। তাপস বা বিডি সুবিধেমতো সেগুলো জমা করত, সরিয়ে ফেলত। সেজন্য শাক্য, ওসি মিঃ নাথ নজর রাখলেও কিছু টের পাননি। এবার পুলিশের কেউ এতে জড়িত সন্দেহটা যেন আমার মনে না আসে, তাই কাঁটাটা শাক্যর দিকে ঘোরানোর জন্য বিডি প্ল্যান করল, চার্চের পিছনের পাকদন্ডী বেয়ে জিনিস নিয়ে উপরে উঠে জঙ্গলের গায়ে গায়ে এদিকে এসে তুলে দেবে আশীষকে। সে চলে যাবে রাতারাতি। ডুলুং বা অন্য কোনো দিক ঘুরে আসল ঘাঁটিতে পৌঁছবে। বিডি জানত না, জঙ্গল পাহারা দিচ্ছে তার নিজের প্রহরীরা।" সিদ্ধার্থর কথায় সম্পূর্ণ ছবিটা পরিষ্কার হচ্ছে ধীরে ধীরে। 

- "হ্যাঁ, জঙ্গলের সন্তান, তার প্রহরীরাই এবার প্রথম অপরাধ আটকেছে। জঙ্গলের নিজস্ব আইনে সব প্রাণী উদ্ভিদ, সবাই কিন্তু সবাইকে সুযোগ দেয় তার জীবনটা উপভোগ করার। আমরা জানি, খাদ্য খাদক ছাড়া ওদের মধ্যে কেউ কারও নিরাপত্তায় হাত দেয় না। এক্ষেত্রেও তাই হয়েছিল। চিতারা নতুন এলেও, জঙ্গলে ওদের উপস্থিতি মেনে নিয়েছিল হাতিরা। আবার চিতারাও হাতিদের এলাকার বাইরেই থাকতে চেয়েছিল। যেহেতু ঐ পাকদন্ডী আর তার পূবের জঙ্গলটা এলিফ্যান্ট করিডর নয়, ওদিকে হাতিরা বিশেষ ঘোরাঘুরি করে না, তাই চিতা দম্পতি ওদিকেই সংসার পেতেছিল। হয়ত সত্যিই এরা ঠাকুরাণীর চিতা। তাই অন্যায়কারীকে আঘাত করেছে।" শাক্য ব্যাখ্যা করে। 

- "আর সবটাই তোমার গার্ডদের নিয়ে তুমি নজর রাখছিলে?" 

- "হ্যাঁ। আমরা সবটা চোখে চোখে রাখছিলাম। এরপর চিতাদের রেডিও কলার পরানোর জন্যও আমরা তৈরি হচ্ছিলাম। ক্রমশঃ চিতা আর হাতিরা সহাবস্থানে অভ্যস্ত হচ্ছে বুঝতে পারছিলাম। তবুও বলা যায় না, হঠাৎ কিসে কোন তরফকে প্রোভোক করবে, আমার চিন্তা ছিল।" শাক্যর নিজের মুখে সব শুনে এতক্ষণে সবাই বোঝে সিদ্ধার্থ আর শাক্যর লড়াই আর বন্ধুত্বের গল্পটা। 

- "শাক্যদার আশঙ্কাই ঠিক হল। কারণ চিতারা বিরক্ত হল, এবং জঙ্গলে বাইরের লোক ঢোকার জন্যই বিরক্ত হল। পাকদন্ডী বেয়ে দুজন এসেছিল বিস্ফোরক ভর্তি ব্যাগ নিয়ে। আর সেই বাইরের লোককে ওরা এড়িয়ে যাচ্ছিল প্রথমে, শেষে আক্রমণ করতে গেল, নিজেদের এলাকা দখলে রাখতে। আশীষ যদিও এপাশ থেকে জঙ্গলে ঢোকে, ওরা মুখোমুখি হয় আশীষের। আরও বিরক্ত হয়, তাতেই আশীষ শেষ হল।" ঋষি এবার ঠিক সাতদিন আগে কি হয়েছিল সেটা বলে। 

- "চিতা কোত্থেকে এল, তা নিয়ে অন্যরা যখন নানান আলোচনা করছে, আমরা ফরেস্টের লোকেরা পাগলের মতো জঙ্গল তোলপাড় করছিলাম। চিতা আছে আমরা জানি। কেন আগে থেকেই বাইরে প্রচার করিনি, তাতেও উপরমহল আমার সঙ্গেই আছে। সেসব নিয়ে ভাবছিলাম না। কিন্তু আমার মাথা খারাপ হয়ে গেছিল দুটো কারণে। এক তো চিতারা জায়গা কেন পালটাল। আর দুনম্বর, সেটা আমার মতো রেঞ্জারের কাছে সবচেয়ে বড় বিপদ।" শাক্যর কথায় সবাই বোঝে, আরও না জানা কথা আছে। 

- "বিপদ? তাও রেঞ্জারদের? সেটা কিরকম বুঝলাম না তো !" এতক্ষণে মুখ খোলেন সিদ্ধার্থর জেঠুমণি। 

- "আসলে আমি আশীষের কাছাকাছি একটা গাছে বুলেট পেয়েছিলাম। যদিও সেটা বিডির সার্ভিস গানের। তাতে চিতাটা কতটা আহত হয়েছে তক্ষুণি জানার দরকার ছিল। ওর ট্রীটমেন্টের জন্যও, এলাকার লোকের সিকিউরিটির জন্যও।"

- "জঙ্গল তোলপাড় করে খুঁজে ওরা চিতাটাকে পেয়ে দেখল, তার কানের লতি ছিঁড়েছে কেবল। তাতে কিছুটা স্বস্তি মিলল। আর বাকি কথা শাক্য চেপে রেখেছিল। কারণ ন্যাশনাল লেভেলের লঙ রেঞ্জ শুটিং চ্যাম্পিয়ন শাক্য খুব সহজেই চিনতে পেরেছিল, বুলেটটা কোন ধরণের লোকের গান থেকে এসেছে। তাই ও পুলিশের মধ্যেই যে ঐ লোকটা বা লোকগুলো আছে, আর আমি তার সঙ্গে আছি, সন্দেহ করতে শুরু করে। পরদিন ওরা ব্যাগটাও পেয়ে গেল। যে লোকদুটো আশীষকে ব্যাগ দিয়েছিল, তারা তো চিতাবাঘ যখন এসেছে, তখন পাকদন্ডী বেয়ে নেমে গেছিল। আর আশীষের উপর আক্রমণ হতে গুলি চালিয়েও কিছু হবে না বুঝে বিডি রাস্তা ধরে পালিয়েছিল। তাই ব্যাগটা জঙ্গলেই পড়ে ছিল।" সিদ্ধার্থ মিসিং লিঙ্কটা জোড়ে। 

- "এজন্যই শাক্য সিদ্ধার্থকেও বিশ্বাস করতে পারছিল না। অন্য যারা অনেকদিন ধরে পোস্টেড, তাদের তো না ই। তবে ওরা সব প্রমাণ কালেক্ট করার ভিডিও করে রেখেছে। তাই সেগুলো কোর্টে প্রোডিউস করা যাবে।" এডিজি দুপুরেই এই গল্প শুনেছেন, এখন নিজেই বললেন। 

[ ❤ শুধু মিথ নয়, সত্যিই চিতা আছে? কিন্তু সিদ্ধার্থ আর শাক্য পরস্পরকে সন্দেহ করা বন্ধ করল কখন থেকে? 

❤ জানা যাবে পরের পর্বে। অনেক ধন্যবাদ এই পর্বটি পড়ার জন্য। আপনার মতামতের অপেক্ষা করছি। দয়া করে মন্তব্য করে জানাবেন। ]

চলবে