Jongoler Prohori 38 in Bengali Thriller by Srabanti Ghosh books and stories PDF | জঙ্গলের প্রহরী - 38

Featured Books
Categories
Share

জঙ্গলের প্রহরী - 38

জঙ্গলের প্রহরী

পর্ব - ৩৮

♥♠♥♠♥♠♥

জেঠুমণি উঠে দাঁড়িয়ে বলেন, "যে বইটা সিদ্ধার্থ পড়েছে, সেটা থেকে এই বাড়ি নিয়ে লেখা পাতাগুলো ও ছবি তুলে পাঠিয়েছিল। আমি প্রিন্ট করে পড়েছি। তাতে দেখছি নলিনাক্ষ রায়চৌধুরী এই অঞ্চল ছেড়ে চলে যাওয়ার ঘটনাটা উনিশশো বারো সালের। স্ত্রী আর দুই ছেলেকে নিয়ে পৈত্রিক বাড়ি ছাড়লেন উনি। আর ঐ বছরই বহরমপুরে নলিনাক্ষ রায় বলে এক ভদ্রলোক জমি কিনে বাড়ি করেছেন। পাটের ব্যবসা শুরু করলেন। ধীরে ধীরে উন্নতি করছেন। দুই ছেলে ওনারও।"

- "মানে?" লাফিয়ে উঠলেন শাক্যর বাবা, "নামেও তো মিল। আত্মগোপনের জন্য পদবীতে একটু বদল করেছিলেন হয়ত। সেখানে খোঁজ নিলে তো দুজন একই ব্যক্তি কিনা জানা যেতেও পারে ! তার ব্যবস্থা করুন।"

- "ইনি আমাদেরই পূর্বপুরুষ। আমার ঠাকুর্দার বাবা।" জেঠুমণি হাসিমুখে বলেন, "আমার যতটা জানা ছিল, ওঁর নিজের হাতে লেখা কিছু ডায়রির মতো দিনলিপি আছে পুরনো সিন্দুকে। লাল শালু বাঁধানো। যেমন হিসেবের খাতা ব্যবসায়ীরা ব্যবহার করেন, তেমন খাতায় লিখে রেখেছিলেন পৈত্রিক বাড়ির বর্ণনা। সেই জমিদার বাড়ি কোথায়, উল্লেখ নেই। তবে পাহাড়, জঙ্গলের কথা আছে, ইংরেজ পুলিশের ভয়ে আত্মগোপন করার কথা আছে। সেই আত্মগোপন কালেই এক পোড়ো ভাঙা মন্দিরে লুকিয়ে ছিলেন, যে মন্দিরে পুজো বন্ধ হয়ে পড়ে থাকা পিতলের দেবীমূর্তি উনি সঙ্গে নিয়ে আসেন, একথাও আছে। কুলদেবতা মদনমোহনের আশ্রয়চ্যুত হয়ে গভীর বেদনা পেয়েছিলেন, এই দুর্গামূর্তি তাঁর হৃদয়ের আশ্রয় হল।" জেঠুমণি বলে যান। 

সঙ্কর্ষণবাবু লাফিয়ে ওঠেন, "আমি তো কাল ট্রেনেই কিছুটা শুনে আপনাকে বলেছি, ইনি আমাদের বংশের কেউ হতেই পারেন। কারণ আমাদের কুলদেবতাও হলেন মদনমোহন।" হাতজোড় করে কপালে ঠেকান উনি।

- "এই দুজন একই ব্যক্তি আমিও নিশ্চিত। সিদ্ধার্থ এই বাড়ির ছবি পাঠিয়েছিল, যা ওঁর বর্ণনার সঙ্গে মেলে। চার্চ তৈরির সময় যে প্রথমে আপত্তি এলেও পরে পাহাড়ের নিচে জমির বন্দোবস্ত করা হয়েছিল, তাও উনি লিখেছেন।" জেঠুমণি এবার আরও জোর দিয়ে বলেন। 

- "আমি ছোটবেলা থেকেই এসব গল্প শুনেছি জেঠুমণির কাছে। তাই জমিদার বাড়ির ছোটছেলে স্বদেশী করতেন আর চার্চের গল্প, এই দুটো শুনেই সঞ্জয়ের কাছে ডিটেলে শুনতে চাই। আর জেঠুমণিকে সব জানাই।" সিদ্ধার্থ আবার জেঠুমণির দিকেই তাকায়। 

অসম্ভব উত্তেজিত সবাই ! এমনটা কেউ ভাবেইনি ! পলাতক বিপ্লবী নলিনাক্ষ রায়চৌধুরীকে নলিনাক্ষ রায় নামে খুঁজে পাওয়া গেল ! আবার সিদ্ধার্থর পূর্বপুরুষ তিনি ! 

সুশোভনবাবু বলেন, "তাহলে কি দাঁড়াল ব্যাপারটা? কতদূর জানতে পেরেছেন আপনারা? সব বলুন আমাদের। কিছুই যেন বাদ না পড়ে।"

- "দেখুন, সবাই যা ভাবছেন এতটা শুনে, আমরাও সেরকমই ভাবছি। তবে ভাবনাটা ঠিক কিনা পরীক্ষা করে দেখা যায়।" এই প্রথম কথা বলল সিদ্ধার্থর জ্যাঠতুতো দাদা তথাগত, "আর আমার এবং বাবার ইচ্ছে, উপযুক্ত তথ্য পেলে এটা মিলিয়ে দেখে পরীক্ষা করে নেওয়া। কারণ একটা বংশের একশো বছর আগে আলাদা হয়ে যাওয়া দুই ধারা যদি আবার মেলে, তার থেকে তো ভাল কিছুই নেই।"

- "কি পরীক্ষা চাও বলো। ডিএনএ টেস্ট? আমি রাজি। পরীক্ষায় যে আমরা আত্মার আত্মীয়, সেটা প্রমাণ হবেই আমার মন বলছে। সেক্ষেত্রে সকলের সামনে আমি কথা দিলাম, আমার বংশানুক্রমিক সম্পত্তি সমান ভাগ করে তোমাদের অর্ধেক দেব।" সঙ্কর্ষণবাবু এই কথাতেই প্রমাণ দিয়ে দিলেন, কমলাক্ষ রায়চৌধুরী, যিনি ভাইয়ের জন্য, দেশের জন্য সবসময় ভালো চেয়েছিলেন, তাঁর বংশধর উনি। 

- "না না, একেবারেই না।" আঁতকে ওঠে তথাগত আর সিদ্ধার্থ, দুই ভাই।

সিদ্ধার্থ বলে, "আমরা একটা টাকাও চাই না। আমরা শুধু আমাদের নিজেদের আত্মীয় স্বজনদের খোঁজ চাই। তার জন্য ডিএনএ টেস্ট না, অন্য পরীক্ষা করার কথা বলছি। নলিনাক্ষ রায়ের কাগজপত্রের মধ্যে তাঁর পূর্বপুরুষদের নামের তালিকা আছে। বংশপঞ্জী, যেটা নাকি বাড়িতে বিয়ে, অন্নপ্রাশন থেকে শুরু করে পূর্বজদের তর্পণ অর্থাৎ মহালয়ার রিচুয়ালে লাগে। সেই বংশপঞ্জীর সঙ্গে আপনার কাছে এরকম পুরনো বংশপঞ্জী থাকলে মিলিয়ে দেখলেই নিঃসন্দেহে প্রমাণ হয়ে যাবে কোনটা ঠিক।"

- "ঠিক বলেছে ওরা দুই ভাই। আমরা আত্মীয় স্বজনদের সঙ্গে মিলিত হতে চাই। নলিনাক্ষ রায়ের লেখায় উনি দুঃখ করেছেন, পরিবার ছেড়ে যেতে হয়েছে বলে। আর সেই পথে দাদার আশীর্বাদ এবং অর্থসাহায্য, দুটোই পেয়েছিলেন লিখেছেন। তাহলে তো বাকি সম্পত্তির উপর ওঁর বংশধরদের কোনো দাবী নেই। আমার ভাই আজ নেই, আছে এই দুই ছেলে আর মেয়েটা। আপনি আর আপনার ছেলেদের পাশে পেলে আমাদের পরিবার সম্পূর্ণ হবে।" জেঠুমণি সীতাংশু রায় নিজের হাত বাড়িয়ে সঙ্কর্ষণবাবুর হাত ধরেন। 

- "ভাইকে এখনও আপনি বলবেন দাদা?" সঙ্কর্ষণবাবুর কথা শুনে সীতাংশুবাবু এবার নতুন ভাইটিকে বুকে জড়িয়ে ধরেন। 

- "তাহলে আমিও আপনাদের দুই ভাইয়ের অন্তরঙ্গ বন্ধুর জায়গাটা পেতে পারি। আমার পূর্বজ স্মরণ গোস্বামী যেমন এই পরিবারের ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন।" সুশোভনবাবু এগিয়ে আসেন। ওর সঙ্গেও কোলাকুলি করেন এরা দুজন। এমন মধুর দৃশ্য অল্প কয়েকজন ছাড়া, এখানে উপস্থিত কারও ভাবনাতেও ছিল না আগে থেকে। 

[ ❤ একশো বছরেরও বেশি আগে আলাদা হয়ে যাওয়া তিনটি পরিবারের মানুষের আবার মিলন হল। সিদ্ধার্থ আর শুক্লা এবার এক হবে তো? 

❤ জানা যাবে পরের পর্বে। অনেক ধন্যবাদ এই পর্বটি পড়ার জন্য। আপনার মতামতের অপেক্ষা করছি। দয়া করে মন্তব্য করে জানাবেন। ]

চলবে