Why is Netaji still so feared? - 10 in Bengali Biography by Yogi Krishnadev Nath books and stories PDF | এখনও নেতাজীকে কেন এত ভয় ? - 10

Featured Books
Categories
Share

এখনও নেতাজীকে কেন এত ভয় ? - 10


## ষষ্ঠ পর্ব 

# **অদৃশ্য হয়েও সক্রিয়তা** 

দালাই লামার ভারতে আশ্রয় গ্রহণ: ১৯৫৯ সালের মার্চ মাস। তিব্বতের রাজধানী লাসা তখন রক্তে ভাসছে। চীনের সেনারা প্রবল শক্তি নিয়ে ঢুকে পড়েছে। তিব্বতের তরুণ আধ্যাত্মিক নেতা, **দালাই লামা**, তখন কার্যত জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে।  

কথিত আছে—  
সেই সময় তিব্বতের পাহাড়ি পথে দালাই লামাকে নিরাপদে বের করে আনার পিছনে ভারতীয় গোয়েন্দাদের পাশাপাশি  
কোনও এক **অদৃশ্য কণ্ঠের** পরামর্শ ছিল।  
তিনি ছিলেন একজন মানুষ, যিনি ভারতের ভবিষ্যৎ আর সীমান্ত রাজনীতিকে গভীরভাবে বুঝতেন।  

জওহরলাল নেহেরু তখন ভারতের প্রধানমন্ত্রী।  
চীনের সঙ্গে সদ্য গড়া ‘হিন্দি-চীনি ভাই ভাই’ সম্পর্ক ভেঙে ফেলতে তিনি দ্বিধায় পড়েছিলেন।  
চীনের রোষানলে পড়ার ভয় ছিল প্রবল।  
প্রথম দিকে তিনি দালাই লামাকে ভারতের মাটিতে আশ্রয় দিতে রাজি ছিলেন না বলেই বিভিন্ন সূত্রের খবর।

কিন্তু হঠাৎ করেই নীতি বদলে গেল।  
ভারত ঘোষণা করল—**দালাই লামা ভারতের মাটিতে আশ্রয় পাবেন।**  

প্রশ্ন উঠল—  
এমন আকস্মিক পরিবর্তনের কারণ কী?  
কে এমন সাহস জুগিয়েছিল নেহেরুকে? নাকি অন্য কোনো বড় নেতৃত্বের পক্ষ থেকে চাপ দেওয়া হয়েছিল তাঁকে?

গবেষকদের মতে, সেই সময়ে ফৈজাবাদের রাম ভবনেও ছিল অস্বাভাবিক নড়াচড়া।  
কথিত আছে, রাতের আঁধারে কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি সেখানে যেতেন।  
তাঁরা ভেতরে ঢুকতেন, আর কয়েক ঘণ্টা পর বেরিয়ে আসতেন, মুখে অদ্ভুত গাম্ভীর্য নিয়ে।  

লোকমুখে বিশ্বাস—  
দালাই লামাকে আশ্রয় দেওয়ার সিদ্ধান্তের পিছনে গোপনে ভূমিকা ছিল নেতাজী, ওরফে গুমনামী বাবার।  
তিনি নাকি নেহেরুকে বার্তা পাঠিয়েছিলেন—  
**“চীনকে বিশ্বাস করো না। দালাই লামাকে আশ্রয় দাও,  
কারণ একদিন তিব্বতের প্রশ্নই চীনের মুখোশ খুলে দেবে।”**  

আজ আমরা জানি, সেই ভবিষ্যদ্বাণী কতটা সত্যি হয়েছিল।  
১৯৬২ সালে চিন–ভারত যুদ্ধের সময় তিব্বত হয়ে ওঠে সবচেয়ে বড় বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দু।  
ভারতের সীমান্ত রাজনীতিতে তিব্বতের গুরুত্ব অসীম।  

যদি দালাই লামাকে আশ্রয় না দেওয়া হতো,  
তাহলে ভারত শুধু নৈতিক দিক থেকেই নয়,  
কৌশলগত দিক থেকেও মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হতো।  

পরে দালাই লামা নিজেই বলেছেন—  
**“ভারত আমাকে শুধু আশ্রয়ই দেয়নি, নতুন জীবন দিয়েছে।”**  
কিন্তু কখনও তিনি প্রকাশ্যে বলেননি, কার সহায়তায় তিনি চৈনিক সৈন্যদের নজর এড়িয়ে ভারতের মাটিতে এসে আশ্রয় নিতে সক্ষম হয়েছিলেন। যদিও তিনি সবকিছুই জানেন। এই অপ্রকাশিত লোকটির সহায়তা না পেলে তাঁর বাকি জীবনটা হয়তো চীনের গোপন কোনো কারাগারেই কাটাতে হতো।


গুমনামী বাবা বা ভগবানজী, দৃশ্যত একজন সাধু। তিনি কেবল ধ্যান আর তপস্যায় নিমগ্ন থাকবেন, এটাই স্বাভাবিক ছিল। কিন্তু তিনি কেন তিব্বত-চীন-ভারতের মতো জটিল ভূরাজনীতির বিষয়ে এত আগ্রহ দেখাবেন?  
উত্তর স্পষ্ট—  
তিনি সাধু ছিলেন না।  
তিনি ছিলেন সেই মানুষ, যিনি সারা জীবন এশিয়ার রাজনীতিকে নতুন করে গড়তে চেয়েছিলেন।  

চীনের বিপদের আঁচ আগেভাগেই বুঝে গিয়েছিলেন,  
আর ভারতের নিরাপত্তার স্বার্থেই দালাই লামাকে আশ্রয় দেওয়া জরুরি বলে মনে করেছিলেন।  


সরকারি নথিতে এই ভূমিকাটির কোনও উল্লেখ নেই।  
না কোনও সাক্ষ্য, না কোনও ছবি।  
কিন্তু ইতিহাস বারবার বলে—  
ভারতের সবচেয়ে বড় সিদ্ধান্তগুলোতে এক অদৃশ্য প্রভাব কাজ করেছে।  

আর সেই প্রভাবের ছায়া যতবার খুঁজতে যাই,  
ততবার উঠে আসে একটাই নাম—  
**নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু।**  

তিনি আড়ালে থেকেও নেহেরুকে এক গুরুত্বপূর্ণ বার্তা পাঠিয়েছিলেন—  
চীনের মুখোশ খুলে যাবে,  
তাই তিব্বতের প্রশ্নে ভারতকে পিছিয়ে গেলে চলবে না।  

আজও প্রশ্নটা রয়ে গেছে—  

ভারতের কূটনীতির ইতিহাসে এত বড় একটা মোড়ের পিছনে কেবল নেহেরুর সিদ্ধান্ত কাজ করেছিল, নাকি রাম ভবনের আড়াল থেকে গুমনামী বাবার বজ্রকণ্ঠ নীরবে শোনা গিয়েছিল?  

উত্তরটা অজানা।  
কিন্তু ইতিহাসের প্রতিটি মোড়েই দেখা যায়,  
নেতাজীর ছায়া স্বাধীন ভারতের নীতিনির্ধারণের ক্ষেত্রে অদৃশ্যভাবে কাজ করেছে।  

এবং এটাই প্রমাণ করে—  
**তিনি বেঁচে ছিলেন, তিনি ভাবছিলেন, তিনি চাল দিচ্ছিলেন—  
কেবল প্রকাশ্যে আসেননি।**


চিন–ভারত যুদ্ধেও তাঁর অদৃশ্য ছায়া: ১৯৬২ সালের অক্টোবরে হঠাৎই বিস্ফোরিত হলো চিন–ভারত সংঘাত।  
‘হিন্দি–চীনি ভাই ভাই’-এর মিষ্টি স্বপ্ন ভেঙে গিয়ে সীমান্তে রক্ত ঝরতে শুরু করল।  
অভ্যস্ত নয় এমন ভারতীয় সেনারা দারুণ সাহসিকতা দেখালেও  
অপরিণত কূটনীতি আর শাসকের অদূরদর্শিতার কারণে  
ভারত ভয়াবহ বিপর্যয়ের দিকে ধাবিত হতে লাগল।  

কিন্তু ঠিক এই সময়ই কিছু রহস্যময় কাহিনী ছড়াতে শুরু করল উত্তর ভারতের অন্দরে।  
কথিত হলো—  
এক অদৃশ্য শক্তি নাকি যুদ্ধের গতিপথে প্রভাব ফেলেছিল।  
চিন একতরফাভাবে যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করল, হঠাৎই সেনা সরিয়ে নিল সীমান্ত থেকে।  
কেন?  
কীসের এত ভয় পেল চীন?  

ফৈজাবাদের রাম ভবনের গোপন কক্ষে তখন বসবাস করছিলেন এক রহস্যময় সাধু।  
লোকমুখে তিনি গুমনামী বাবা।  
কিন্তু আশেপাশের মানুষরা বলতেন—  
তাঁর আচরণ, তাঁর ভাষা, তাঁর হুকুমের মতো নির্দেশ—  
সবকিছুই মনে করিয়ে দিত নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসুকে।  

গবেষকদের মতে, চিন–ভারত যুদ্ধে তাঁর অবস্থান একেবারেই নিষ্ক্রিয় ছিল না।  
কিছু গোয়েন্দা রিপোর্টেও ইঙ্গিত মেলে—  
ভারত সরকারের শীর্ষ স্তরে, এমনকি সেনা মহলেও, কিছু পরামর্শ নাকি গোপনে পৌঁছে যাচ্ছিল রাম ভবন থেকে।  
পরে উদ্ধার হওয়া কিছু কাগজে পাওয়া যায় তাঁর লেখা সতর্কবাণী—  
**“চিন ভারতের বন্ধু সাজে, কিন্তু এরা বিশ্বাসঘাতক।  
সীমান্তে আঘাত অনিবার্য।”**  

অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি—এই সতর্কবার্তার কয়েক বছরের মধ্যেই সত্যি হলো ১৯৬২ সালের যুদ্ধে।  
প্রশ্ন হলো—  
একজন সাধারণ সাধু কিভাবে এত স্পষ্টভাবে আন্তর্জাতিক রাজনীতির ভবিষ্যৎ আন্দাজ করতে পারেন?  
এটা কি নিছক কাকতালীয়?  
না কি তিনি ছিলেন সেই মানুষ, যিনি সারা জীবন আন্তর্জাতিক কূটনীতির দাবা খেলায় পারদর্শী ছিলেন?  

সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হলো—  
চীন যখন অগ্রসর হচ্ছিল, তখন হঠাৎ করেই কেন যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করল?  
ইতিহাস বই বলে—এটা ছিল চীনের কৌশল।  
কিন্তু লোকমুখে অন্য কাহিনীও শোনা যায়।  

কথিত আছে—  
চীন বুঝতে পেরেছিল, ভারতীয় সেনারা যতটা দুর্বল মনে হয়েছিল, আসলে ততটা নয়।  
বরং দেশের ভেতরে এক অদৃশ্য নেতৃত্ব কাজ করছে।  
একজন অভিজ্ঞ যোদ্ধা, যিনি সেনাদের মনোবল জাগাতে জানেন,  
যিনি কৌশলের মন্ত্রণা দিতে জানেন।  
চীন সেই অদৃশ্য ছায়ার ভয়েই নাকি পিছিয়ে যায়।  

কিছু প্রত্যক্ষদর্শী দাবি করেন—  
ফৈজাবাদের আশেপাশে ১৯৬২ সালের যুদ্ধ চলাকালীন হঠাৎ করেই  
অচেনা কিছু মানুষ আসতে-যেতে শুরু করে।  
তাঁরা নাকি রাম ভবনে ঢুকতেন রাতের আঁধারে,  
আর বের হতেন গোপন নথি হাতে নিয়ে।  

কেউ বলেছে তাঁরা সেনা অফিসার,  
কেউ বলেছে তাঁরা গোয়েন্দা।  
কিন্তু সবাই একমত—  
এই আসা–যাওয়ার কেন্দ্রে ছিলেন গুমনামী বাবা।  

যুদ্ধবিরতি, চীনের আকস্মিক সেনা প্রত্যাহার, গুমনামী বাবার সতর্কবাণী আর গোপন সাক্ষাৎকার—  
সব মিলিয়ে প্রশ্ন জাগে—  
এটা কি নিছক কাকতালীয়,  
না কি সত্যিই নেতাজী আড়াল থেকে ভারতের ভবিষ্যৎ রক্ষা করছিলেন?  

যদি তিনি শুধুমাত্র একজন সাধুই হতেন, তবে কেন আন্তর্জাতিক যুদ্ধ নিয়ে এমন সূক্ষ্ম বিশ্লেষণ করতেন?  
যদি তিনি নিছক দর্শনার্থীদের নিয়ে ব্যস্ত থাকতেন, তবে কেন সেনা অফিসাররা তাঁর কাছে যেতেন?  

উত্তর একটাই—  
**তিনি ছিলেন নেতাজী।**  
নিজেকে গোপন রেখেও তিনি ভারতকে বিপদের মুখ থেকে বাঁচাতে চাইছিলেন।  

চীন–ভারত যুদ্ধের শেষে একটা জিনিস পরিষ্কার হয়ে গেল—  
ভারত শুধু ভেতরের দুর্বলতার কারণে নয়,  
বরং কোনও এক অদৃশ্য শক্তির কারণে রক্ষা পেল।  

শাসকেরা এই কাহিনী স্বীকার করেনি।  
সরকারি নথি আজও নীরব।  
কিন্তু লোকমুখে প্রচলিত হলো একটাই কথা—  
**“নেতাজী আছেন, আর তাঁর ছায়া এখনও এই দেশকে রক্ষা করছে।”**