Qualifications in Bengali Motivational Stories by DR RAJESH CHOUDHURI books and stories PDF | যোগ্যতা

Featured Books
Categories
Share

যোগ্যতা

একজন ভদ্রলোক - ঠিকাদারি করেন। যখন যে পার্টি ক্ষমতায় থাকুক,- সেই  পার্টির নেতাদের সাথে সুসম্পর্ক সৃষ্টি করে কাজ বাগিয়ে বিশাল অর্থের মালিক, অট্টালিকা সম বাড়ি, কয়েকটা গাড়ী। কালী পূজা, দুর্গা পূজায় ক্লাবে সবচেয়ে বেশী চাঁদা দেন। ইলেকশন আসলে পার্টি ফান্ডে লক্ষ লক্ষ টাকা দেন।

 কথায় কথায় তিনি বলছিলেন,- " জানেন ডাক্তারবাবু,- আমার পাড়াতেই একজন পুরানো মাস্টারমশাই আছেন। পাড়াতে যেকোনো সভাসমিতি হোক, সালিশি হোক সবাই উনাকেই ডেকে এনে সভাপতি বানায়। এলাকার সবাই উনাকে খুব সম্মানের চোখে দেখে, উনার যেকোনো আপদে বিপদে সবাই ঝাঁপিয়ে পড়ে। উনার প্রতি কি কারনে যেন একটা সমীহ সবার মনে, সবাই যেন মন থেকে উনাকে ভালবাসে। অথচ আমার অর্থ, ক্ষমতা, প্রতিপত্তি উনার চেয়ে অনেক অনেক বেশী, উনার চেয়ে অনেক বেশী চাঁদা আমি পাড়ার পূজা পার্বনে দেই। কিন্তু উনার মত সম্মান, সমীহ কোনদিন আমি পাইনি। রাস্তাঘাটে দেখা হলে মানুষ আমার সাথে হাসিমুখে কথা বলে ঠিকই,- কিন্তু সেই ব্যাবহারে আন্তরিকতা পাইনা, একটা কৃত্রিমতা টের পাই, একটা স্বার্থ জড়িত  আছে টের পাই।  সেই মাস্টারমশাইয়ের মত নিঃস্বার্থ ভালবাসা, সম্মান, সমীহ কখনো পাইনি।

 তখন মাঝে মাঝে দুঃখ হয়। এত টাকা পয়সা, এত ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও আমি যেন সেই গরীব মাস্টারমশাইয়ের কাছে তুচ্ছ। এই বিশাল বাড়ী, দামী গাড়ী সব ফালতু মনে হয়। " 

একটি ছেলে সবজি বিক্রি করে। বেশ কয়েকজন আমায় ছেলেটির প্রশংসা করে বলল,- দাদা ঐ ছেলেটির দোকান থেকে সবজি কিনবেন। কখনো ঠকবেন না,- সঠিক দাম নেয় সবসময়। ব্যাবহার কি মিষ্টি ছেলেটির!!  সব্জির ব্যাগটা পর্যন্ত আপনার গাড়ীতে  নিজে এগিয়ে এসে উঠিয়ে দেবে। 

একটি লোক বাজারে জুতো সেলাই করে। আশেপাশে অনেক জুতো সেলাইয়ের লোক আছে,- কিন্তু ঐ লোকটির কাছেই খুব ভীড়। কারন তিনি খুব সুন্দর কাজ করেন, কাউকে গলাকাটা দাম বলে না, ব্যাবহার খুব ভদ্র।

 এইভাবেই দেখা যায়,- একটা মানুষের যোগ্যতাই তার আসল পরিচয়। যে যতটুকু যোগ্য ততটুকু সম্মান, ভালবাসা, সমীহ সে পাবেই। যে যেকাজই করুক,- যোগ্যতা থাকলে, সততা থাকলে, নিষ্ঠা থাকলে সে উন্নতি করবেই। সময় একটু বেশী লাগতে পারে, পরিশ্রম খুব করতে হতে পারে,- কিন্তু তাতেই প্রকৃত সম্মান, শান্তি, ভালবাসা পাওয়া যায়।

 একজন মানুষ ভাল কাঠের কাজ জানে,- এটাই তার প্রকৃত পরিচয়। এলজন ভাল জুতো সেলাই করতে পারে,- এটা তার পরিচয়। কেউ ভাল টিউশন করে,- এটা তার পরিচয়৷ ভাল ব্যাবসায়ী, ভাল রাধুনি, ভাল উকিল, ভাল ডাক্তার, ভাল শিক্ষক,ভাল ড্রাইভার,ভাল গায়ক, ভাল অভিনেতা, ভাল খেলোয়াড়   ইত্যাদি বিভিন্ন মানুষের বিভিন্ন যোগ্যতা রয়েছে।

 যোগ্যতা মানে নিজেকে এমন একটা কাজে দক্ষ করে তোলা,- যে কাজের মধ্য দিয়ে আমি পরিবেশকে সেবা দিতে পারি। এই যোগ্যতা অর্জন করতে সাধনা করতে হয়, অনুশীলন করতে হয়, সততা বজায় রাখতে হয়। শুধু অর্থ উপার্জন বা নিজের স্বার্থ পূরনের ধান্ধা থাকলে যোগ্য হওয়া যায়না। ফাঁকিবাজির ধান্ধা মাথায় ঢুকে সব নষ্ট করে দেয়। অর্থ কম থাকুক-বেশী থাকুক, বড় বাড়ি থাকুক আর না'ই থাকুক,- যার প্রকৃত যোগ্যতা আছে সে ঠকে না, সে নষ্ট হয়না৷ 

আর যোগ্যতা অর্জন না করেই কেউ হয়ত বাবার টাকায়, শ্বশুর বাড়ীর সম্পত্তি অর্জন করে, ঘুষ খেয়ে, দুই নম্বরী উপায়ে, ফাটকাবাজি করে, জুয়া খেলে, লটারী পেয়ে,  প্রতারনা করে, লোক ঠকিয়ে খুব অল্প সময়ে প্রচুর অর্থের মালিক হয়ে গেল, বিশাল বাড়ী, দামী গাড়ির মালিক হয়ে গেল,- কিন্তু যোগ্যতার অভাবের দরুন তার অন্তরে একটা হীনমন্যতা ক্রিয়া করে৷  আর এই হীনমন্যতা ঢাকতে সে শো-অফ শুরু করে৷ তার নিজের হয়ত প্রয়োজন নেই, - কিন্তু তার আশেপাশের মানুষের চেয়ে নিজেকে বড় প্রমান করতে ভীষণ  দামী একটা গাড়ী কিনল, লক্ষাধিক টাকার ঘড়ি কিনে ফেইসবুকে পোস্ট করে সবাইকে দেখাল, ঘন ঘন ফাইভ স্টার হোটেলে গিয়ে ডিনার করতে শুরু করল আর স্যোসাল মিডিয়ায় ছবি পোস্ট করল, হঠাৎ  বহুমূল্য ব্রেন্ডেড পোশাক পরিধান করতে শুরু করল, বিয়েশাদিতে দামী দামী গিফট দিতে শুরু করল। আর এই শো-অফ করতে গিয়ে প্রায়শই সে অকারন বহু খরচ করে ফেলে ঋনের জালে জড়িয়ে পড়ে৷ একবার এই লোকদেখানো বড়লোকি আচরনে অভ্যস্ত হলে সেই অভ্যাস থেকে আর বেরিয়ে আসতে পারেনা৷ 

প্রকৃত সুখে থাকার জন্য, আনন্দে থাকার জন্য খুব বেশী টাকাপয়সার প্রয়োজন হয়না। নিজের সুখ আর বড়লোকি আচরন মানুষের সামনে প্রচার করতেই বেশী টাকা খরচ হয়। 

যার প্রকৃত যোগ্যতা আছে,- সে শো অফের ধার ধারেনা৷ রতন টাটা এত পয়সার মালিক,- কিন্তু নিজে ড্রাইভ করেন৷ খুব সাধারণ চলাফেরা। মার্ক জাকারবার্গ, - একটা টি-শার্ট পড়ে খুব সাধারণ পোশাকেই অফিসে আসেন। মুখেশ আম্বানির গলায় মোটা সোনার চেইন নেই, হাতে সোনার ব্রেসলেট নেই, হাতে আইফোন নিয়ে ফেইসবুকে ছবি পোস্ট করেন না৷ 

তাই,- খুব অল্প সময়ে রাতারাতি অনেক টাকার মালিক হওয়ার স্বপ্ন  নয়,- প্রত্যেকেই যদি নিজেকে যেকোনো একটা কাজে প্রকৃত যোগ্য করার সাধনার রত থাকে, পরিবেশকে পোষন দিতে পারে এমন একটা কাজে দক্ষ হতে পারে সততা বজায় রেখে,- তবেই সে প্রকৃত আনন্দ, শান্তি ও সম্মানের অধিকারী হয়। যার যোগ্যতা আছে অর্থের অভাব তার হয়না। রাতারাতি বড়লোক হয়ত সে হতে পারে না।