Galaxy Story in Bengali Spiritual Stories by Arghya Pramanik books and stories PDF | ছায়াপথের গল্প

Featured Books
Categories
Share

ছায়াপথের গল্প




বড় রহস্য–থ্রিলার ভূতের গল্প



---


অধ্যায় – ১ : অদ্ভুত আমন্ত্রণ


কলকাতার ইতিহাসবিদ অনিরুদ্ধ চৌধুরী সবসময় অজানা ঘটনার খোঁজে ঘুরে বেড়ান। একদিন ডাকযোগে একটি হলুদ খামের চিঠি এল—


> “আপনি যেহেতু হারিয়ে যাওয়া স্থাপত্য নিয়ে গবেষণা করেন, তাই আপনাকে আমন্ত্রণ জানাচ্ছি ‘ছায়াপথ প্রাসাদে’।

রাত বারোটায় আসবেন।

— অজ্ঞাত”




চিঠিটি যেন শতবর্ষ পুরনো কাগজে লেখা; কিন্তু পাঠানো হয়েছে মাত্র দুই দিনের আগে।

ছায়াপথ প্রাসাদ? অনিরুদ্ধ নামটা কখনো শুনেনি।


তবুও অদ্ভুত কৌতূহল তাকে টেনে নিলো। ঠিক করল আমন্ত্রণ রক্ষা করবে।



---


অধ্যায় – ২ : পথের শুরুতে অস্বস্তি


পাহাড়পুরের জঙ্গল ঘেঁষে ছায়াপথ প্রাসাদ। গাড়ি নিয়ে যত এগোতে লাগল, ততই মোবাইলে নেটওয়ার্ক হারাতে থাকল।

পথ ধরে হঠাৎ এক বৃদ্ধা দেখা দিলেন। তাঁর গলায় গলা শুকিয়ে যাওয়া স্বর—


“প্রাসাদে যাবেন? ওখানে গেলে ফেরার পথ কেউ খুঁজে পায় না...”


অনিরুদ্ধ একটু থমকালেও এগিয়ে গেল।

রাত বাড়তেই চারদিক দমবন্ধ-করা নীরবতা।



---


অধ্যায় – ৩ : প্রাসাদের প্রথম দর্শন


মধ্যরাতের কিছু আগে সে পৌঁছোল।

প্রাসাদটা দেখে মনে হলো—ভগ্নপ্রায় হলেও যেন নিজের গায়ে ছায়া জড়িয়ে বেঁচে আছে।

তিনতলা উঁচু, কালো দেয়াল, উঁচু খিলান জানলা, আর সবচেয়ে রহস্যজনক—ঘড়ির কাঁটা ঠিক ১২টা বাজতেই প্রাসাদের সব জানলায় একসাথে আলো জ্বলে উঠল।


অনিরুদ্ধ অবাক।

কে আগুন বা আলো জ্বালল এত রাতে?


দরজা কড়কড় করে খুলে গেল, যেন কেউ ভেতর থেকে টেনে খুলল।



---


অধ্যায় – ৪ : ছায়া–মানুষ


ভেতরে ঢুকতেই দেখতে পেল—দেয়ালে বড় বড় ছবির গ্যালারি।

সবাই যেন জমিদারবাড়ির প্রাচীন সদস্য, কিন্তু ছবিগুলোর চোখে এক অদ্ভুত বিষণ্ণতা।


হঠাৎ সিঁড়ির ওপাশে হালকা নড়াচড়া।

কারো ছায়া।


অনিরুদ্ধ টর্চ ধরতেই ছায়াটি সরে গেল।

সে দৌড়ে গিয়ে দেখল—লম্বা করিডোর, কিন্তু কেউ নেই।


ফিরে আসতেই সে খেয়াল করল যে দেয়ালের একটি ছবিতে লোকটার চোখ এখন আর তাকে দেখছে না—বরং ছবির ভিতর এক অন্ধকার দাগ বাড়ছে।


ছবিটি যেন রক্ত–কালিতে ভিজছে!



---


অধ্যায় – ৫ : রক্তের চিঠি


প্রাসাদের লাইব্রেরিতে পচা বইয়ের মধ্যে একটি ছোট ডাইরি পেল।

প্রথম পাতায় লেখা—


> “আমার নাম রুদ্রেশ সেন।

এই প্রাসাদে এক অভিশাপ লুকিয়ে আছে।

যদি কেউ এই লেখা পড়ে— তাহলে বুঝবেন আমি আর বেঁচে নেই।”




অনিরুদ্ধের গা শিউরে উঠল।

পরের পাতায় লেখা—


> “ছায়াপথ প্রাসাদের ছায়ারা জীবন্ত। তারা শরীর নয়, আত্মা।

সত্য খুঁজতে গেলে তারা তোমাকে দেখে ফেলে।”




ঠিক সেই মুহূর্তে লাইব্রেরির জানলার কাঁচে ঠক…ঠক… ঠক!

চোখ তুলে দেখল—জানলার ওপাশে ঝাপসা এক মুখ।

চোখ দুটো যেন গর্ত—অন্ধকার।


অনিরুদ্ধ দৌড়ে বেরিয়ে এল।



---


অধ্যায় – ৬ : গোপন কক্ষ


প্রাসাদের মাঝামাঝি অংশে একটি সিঁড়ি নীচের দিকে নামছে।

মেঝেতে মৃত পাতার গন্ধ, আর্দ্র দেয়াল।


নিচে গিয়ে দেখতে পেল এক বিশাল গোল কক্ষ।

মাঝখানে পাথরের টেবিলে রাখা একটি পুরনো ঘড়ি—যার কাঁটা দাঁড়িয়ে আছে—১২:০০ তে।


ঘড়ির পাশে রক্ত শুকনো দাগ, আর দাগের কেন্দ্রে লেখা—


“সময় থামলে ছায়া জেগে ওঠে।”


অনিরুদ্ধের মাথা ঝাপসা।

এমন সময় টেবিলের নিচ থেকে ছায়া নড়ল!

ছায়াটা মানুষের, কিন্তু শরীর নেই। শুধু কালো আকৃতির মতো।


সেটি দেয়ালে উঠে অন্য ছায়াদের সাথে মিশে গেল।



---


অধ্যায় – ৭ : প্রাসাদের সত্য


অন্ধকার ছেয়ে আসতেই প্রাসাদের দেওয়াল যেন জেগে উঠল।

চিত্রগুলো নড়তে শুরু করল।

কোনো একজন ফিসফিস করে বলল—


“পালানোর চেষ্টা কোরো না।”


অনিরুদ্ধ ভয়ে টেবিলের নিচে লুকিয়ে পড়ল।

সেখানে একটি লোহার বাক্স মিলল। খুলতেই একটি নথি—


> “১৮৯৮ সালে ছায়াপথ প্রাসাদে ৫৭ জন মানুষ রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ।

তাদের দেহ পাওয়া যায়নি।

শুধু ছায়া রয়ে গেছে।

এ প্রাসাদের মালিক দেবাংশ সেন মানুষের ছায়াকে বন্দি করে অমরত্ব পেতে চাইতেন।

তার অভিশাপ আজও আছে।”




অনিরুদ্ধ বুঝল—

যে ছায়াগুলো ঘুরে বেড়াচ্ছে… তারা আসলে হারিয়ে যাওয়া মানুষের আত্মা।



---


অধ্যায় – ৮ : মধ্যরাত্রির আক্রমণ


১২টা বাজার সাথে সাথে প্রাসাদের সব দরজা নিজে থেকেই বন্ধ হয়ে গেল।

দেয়ালে ছায়ারা কাঁপতে কাঁপতে বেরিয়ে এলো—

হাজারো ছায়া যেন দেয়াল ভেদ করে জীবন্ত হলো।


সেগুলি একসাথে এগিয়ে আসছে অনিরুদ্ধকে ঘিরে!

হাওয়া জমে গেল ঠান্ডা কুয়াশায়।


মাঝখান থেকে এক ছায়া সামনে এল—

দেবাংশ সেন।


তার গম্ভীর, ভাঙা গলা—


“তুমি আমার সত্য খুঁজতে এসেছ?

এবার তুমি-ও আমাদের একজন হবে…”



---


অধ্যায় – ৯ : শেষ প্রতিরোধ


অনিরুদ্ধ হঠাৎ খেয়াল করল—

ঘড়ির কাঁটা যদি ১২:০০ থেকে সরানো যায়,

সময় চলতে শুরু করলেই ছায়ারা দুর্বল হয়ে যাবে।


সে ছুটে গেল পাথরের ঘড়ির কাছে।

ছায়ারা পিছন থেকে তার শরীর টানছে, ঠান্ডা হাত লাগছে গলায়, কিন্তু সে মরিয়া—


এক ঝটকায় সে ঘড়ির কাঁটা ১২:০০ থেকে ঠেলে দিল ১২:০১ এ।


সেই মুহূর্তে প্রবল ঝড়ের শব্দ!

প্রাসাদ কেঁপে উঠল…

ছায়ারা আর্তনাদ করতে লাগল—


“না-আ-আ!! সময় চলতে দিও না!!”


ক্রমে ছায়াগুলো অদৃশ্য হতে লাগল, দেয়ালে ফিরে ঢুকে গেল।



---


অধ্যায় – ১০ : অদৃশ্য প্রস্থান


যেই ছায়ারা শেষবারের মতো মিলিয়ে গেল,

প্রাসাদের দরজা নিজে থেকেই খুলে গেল।

অনিরুদ্ধ দৌড়ে বেরিয়ে এলো।


প্রাসাদের বাইরে এসে ঘুরে তাকাল—

এক মুহূর্তেই আলো নিভে গেল, জানলাগুলো আঁধার হয়ে গেল।


মনে হলো প্রাসাদটা যেন কখনো জীবন্ত ছিলই না।


ভোরের আলো ফুটতেই সে রাস্তার দিকে হাঁটল।


কিন্তু যাওয়ার শেষে সে শুনতে পেল—

দূর থেকে কারো ফিসফিস—


“এবারও স

ময়ের সাথে পালালে?

তুমি ফিরবে… আবার ঠিকই ফিরবে…”


অনিরুদ্ধ থমকে দাঁড়াল।


পেছনে তাকালো—

ছায়াপথ প্রাসাদ নেই।

স্থানে আছে শুধু ফাঁকা মাঠ।


তাহলে সে কোথায় ছিল এতক্ষণ?



---


শেষ… নাকি এখানেই শুরু?



---