What will you leave for your child? in Bengali Motivational Stories by DR RAJESH CHOUDHURI books and stories PDF | সন্তানের জন্য কি রেখে যাবেন?

Featured Books
Categories
Share

সন্তানের জন্য কি রেখে যাবেন?

একটা মানুষের জীবনে সবকিছুতেই চূড়ান্ত উন্নতি সম্ভব নয়। অর্থ, ক্ষমতা, সৌন্দর্য, যশ, খ্যাতি, জ্ঞান, শিক্ষা, আনন্দ, সুখ, সুন্দর সংসার, শান্তি, সুসন্তান, সুস্বাস্থ্য, সুখনিদ্রা,- সবকিছুই একসাথে লাভ করা সম্ভব নয়। 

কারো জীবনে অঢেল অর্থ হয়ত আছে,- কিন্তু দেখা যায়, - সন্তান মানুষ হয়নি, অথবা স্বাস্থ্য ভাল নয়, বা সাংসারিক সুখ নেই।

 কারো হয়ত অনেক জ্ঞান আছে,- কিন্তু যশ নেই, ক্ষমতা নেই । কারো জীবনে শান্তি আছে,- কিন্তু অর্থ নেই। কারো সন্তান অনেক উন্নত,- কিন্তু ক্ষমতা নেই।

 নেপোলিয়ন সারা বিশ্ব জয় করেছিলেন,- অর্থ,বিত্ত, ক্ষমতা, যশ কোনকিছুর অভাব ছিলনা। কিন্তু তিনি তার উচ্চতা নিয়ে হীনমন্যতায় ভুগতেন। যদিও উনার উচ্চতা খুব একটা কম ছিলনা,- পাঁচ ফুট ছয় ইঞ্চি এক্কেবারে খারাপ উচ্চতা নয়। তবুও তিনি ভাবতেন,- তিনি অনেক বেঁটে। আর এই নিয়ে খুব হতাশায় ভুগতেন। 

ডোনাল্ড ট্রাম্প দুই দুইবার আমেরিকার রাষ্ট্রপতি হয়েছেন। বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর রাষ্টের রাষ্ট্রপতির চেয়ারে দুই দুইবার আসীন হওয়া,- অর্থ বিত্ত ক্ষমতা যশের এক্কেবারে চরম প্রাপ্তি। তারপরও ডোনাল্ড ট্রাম্পের মনে এক হতাশা,- নোবেল প্রাইজটা পাওয়া গেলনা। এই নোবেল প্রাইজের জন্য তিনি হ্যাংলামি করছেন, নিজেই নিজের প্রশংসা করছেন বোকার মত। 

ইলন মাস্ক,- বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যাক্তি। সেই সাথে বিশ্বের চরম ক্ষমতাধরও বলা যায়। অথচ,- উনি সাংসারিক জীবনে সুখী নন। স্ত্রী ছেড়ে চলে গেছেন, কন্যা চলে গেছে, - তিনি একসময় ডিপ্রেসনে ভোগে সাইকিয়াট্রিস্ট ডাক্তারের শরনাপন্ন হয়েছেন।

 মাইকেল জ্যাকশনের জীবনে কিসের অভাব ছিল? অর্থ, যশ, খ্যাতি, বিত্ত, বিলাসীতা সবকিছুর চূড়ান্ত প্রাপ্তি হয়েছিল উনার। তবুও তিনি কেন মানসিক অবসাদের ঔষধ খেতে?

  যদি অঢেল অর্থ রোজগারই কারো জীবনে সার্থকতা নিয়ে আসত, অর্থ দিয়েই জীবনের সব সুখ লাভ করা যেত,- তবে মুকেশ আম্বানি ও নীতা আম্বানি কিছুদিন পর পর মন্দিরে মন্দিরে গিয়ে দেবতার পায়ে মাথা ঠুকতেন না। 

যদি যশ-খ্যাতি ও অর্থই জীবনের সার্থকতা ও পরমতৃপ্তি এনে দিতে পারত,- তাহলে বিরাট কোহলি শ্রী প্রেমানন্দ স্বামীজীর পায়ের কাছে গিয়ে সস্ত্রীক মাটিতে বসে থাকতেন না।

যদি বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, আবিস্কার, প্রতিষ্ঠা লাভ জীবনকে পরিপূর্ণ করে দিতে পারত তাহলে Apple কোম্পানির মালিক স্টিভ জবস ভারতবর্ষে এসে নীম করোলী বাবার আশ্রমে গিয়ে বসে থাকতেন না।

 দিল্লীর একজন মহকুমা শাসক,- যিনি পুরো একটা জেলাকে শাসন করতেন, অনেক গুরত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতেন, লক্ষ লক্ষ মানুষের জীবনের মঙ্গল যার উপর নির্ভর করত,- তিনি বউয়ের সাথে ঝগড়া করে রাত্রিবেলায় শহরের ড্রেনের পাশে আত্মহত্যা করেন ফাঁসি দিয়ে। পুরো একটা জেলাকে যিনি শাসন করার ক্ষমতা রাখতেন,- তিনি তার বউকে শাসন করতে পারেননি, সামান্য মানসিক চাপ সহ্য করতে না পেরে জীবন শেষ করে দিলেন।

মোটকথা,- শুধু অর্থ, বিত্ত, ক্ষমতা, যশ, প্রতিষ্ঠা কারো জীবনে চরম সার্থকতা, সুখ, শান্তি ও আনন্দ এনে দিতে পারেনা। এগুলি প্রাপ্তির পরেও মানুষের মনে এবং জীবনে একটা অভাব, একটা অপূর্ণতা, একটা শূন্যতা থাকেই। সেই অপূর্নতা ও অভাব থেকেই মানুষ ঈশ্বর বা ব্রম্মের সন্ধান করে,- আধ্যাত্মিকতায় লিপ্ত হয়। 

কিন্তু,- যখন এই আধ্যাত্মিকতার প্রয়োজন, গুরুর প্রয়োজন বা ঈশ্বর সন্ধানের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে,- তখন হয়ত অনেক দেরী হয়ে যায়। এই বয়সে আর সাধন ভজনের শক্তি ও উৎসাহ বাকী থাকেনা। আধ্যাত্মিক চর্চা ঠিকঠিকভাবে করার মত সময় পায়না। 

তাই আমাদের ভারতীয় ঋষিরা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন,- ছেলেমেয়ের বয়স বার বৎসর হলেই,- অর্থাৎ বয়:সন্ধিকালের শুরুতেই সদগুরুর দীক্ষা গ্রহন করে আধ্যাত্মিক চর্চায় যুক্ত করতে হয়। তাতে ছেলেমেয়েরা ভবিষ্যৎ জীবনে এক সাম্যতাপূর্ন জীবন লাভ করে। জীবনে হতাশা, অপূর্নতা, দিশেহারা ভাব, হীনমন্যতা আসেনা তখন। জীবনে তৃপ্তি, সন্তুষ্টি, আনন্দ, শান্তি লাভ হয় তাতে। 

আধুনিক পিতামাতাগন,- সন্তানের জন্য উচ্চশিক্ষার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে, তাদের ভবিষ্যৎ জীবনের জন্য অঢেল ধন সম্পত্তি জমা করে, তাদের আনন্দের জন্য বিত্ত বিলাসীতার যথেষ্ট আয়োজন করে। কিন্তু আশ্চর্যজনক ভাবে,- সন্তানের ভবিষ্যৎ জীবনের সুখ, শান্তি, তৃপ্তি ও পরিপূর্ণতার জন্য বার বৎসর বয়সে সদগুরুর দীক্ষা গ্রহনের কথা বললেই নাক সিঁটকায়। 

সন্তান অল্প বয়সে দামী ইংরেজি মিডিয়াম স্কুলের কঠিন সিলেবাসের চাপ নিতে পারে,  নাচ-ক্যারাটে-তবলা-গান সবকিছুই শিখতে পারে,- কিন্তু,- দীক্ষা নিয়ে নাকি পালন করতে পারবে না!! এই আধুনিক উচ্চশিক্ষিত পিতামাতাগন মনে করে,- গুরুর দীক্ষা নিলে, সন্তানকে অল্প বয়সে আধ্যাত্মিকতায় যুক্ত করলে, নিজেরা ঠাকুরের কথা মেনে চললে বুঝি নিজেদের আধুনিকতা, নিজেদের আভিজাত্য ও শিক্ষিত হবার অহংবোধ বুঝি ক্ষুন্ন হবে।

ছেলেমেয়ে অল্প বয়সে মদ খেলে আপত্তি নেই, নাইট ক্লাবে গিয়ে বেলেল্লাপনা করলে অসুবিধা নেই, কাঁচা বয়সে গার্লফ্রেন্ড- বয়ফ্রেন্ড বানিয়ে অবাধ যৌনাচারে লিপ্ত হলে অসুবিধা নেই, স্যোসাল মিডিয়ায় রিল বানিয়ে স্বল্প বসনে নাচানাচি করলে অসুবিধা নেই, গুরুজনদের প্রতি অশ্রদ্ধাশীল ও অবাধ্য হলেও কোন চিন্তা নেই,- কিন্তু বার বৎসর বয়সে দীক্ষা গ্রহন করাতে ভীষণ আপত্তি। 

বন্ধুবান্ধবদের পাল্লায় পড়লে মদ-সিগারেট-ড্রাগস খেলে প্রতিবাদ নেই, হিন্দি সিনেমা ও স্যোসাল মিডিয়ার প্রভাবে যথেচ্চ যৌনাচারে লিপ্ত হলে আপত্তি নেই, ছেলেমেয়ে উৎশৃংখল হলেও ভাবনা নেই।  অল্প বয়সে ছেলেমেয়েদের দীক্ষার জন্য কেন পীড়াপীড়ি করা হয়,- এই নিয়ে সাংঘাতিক প্রতিবাদী হয়ে উঠেন অনেক আধুনিক বিজ্ঞজনেরা।

 নিজেও অন্ধকারে ডুবে মরছে,- নিজের সন্তানদেরও আন্ধকারে ঠেলে দিতে মরিয়া হয়ে উঠছে।