Quotes by Rezwanul Haque in Bitesapp read free

Rezwanul Haque

Rezwanul Haque

@rezwanulhaque448526


মানবাধিকার হলো সেই মৌলিক অধিকারসমূহ যা প্রতিটি মানুষ তার জন্মের সাথে সঙ্গেই পায় এবং যার মাধ্যমে সে সম্মান ও মর্যাদার সঙ্গে জীবন যাপন করার সুযোগ পায়। মানবাধিকার কোনো বিশেষ জাতি, ধর্ম, বর্ণ, লিঙ্গ, বয়স বা সামাজিক অবস্থানের উপর নির্ভর করে না; এগুলো সর্বজনীন ও অবিচ্ছিন্ন। প্রতিটি মানুষের সমান অধিকার ও স্বাধীনতা নিশ্চিত করা মানবাধিকার বোধের মূল ভিত্তি। মানবাধিকার ধারণাটি মানুষের মুক্তি, সমতা ও নিরাপত্তার প্রতীক। এটি মানুষের অস্তিত্বের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত এবং জীবনকে মানবসুলভ করে তোলার অন্যতম প্রধান হাতিয়ার। মানবাধিকার সাধারণত ব্যক্তিগত, রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক বিভিন্ন দিককে স্পর্শ করে। ব্যক্তিগত অধিকার বলতে বোঝায় ব্যক্তির স্বাধীনতা যেমন জীবন যাপনের অধিকার, যেকোনো ধরণের অত্যাচার বা নির্যাতন থেকে মুক্তি, ব্যক্তিগত নিরাপত্তা, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, ধর্ম পালনের স্বাধীনতা, শিক্ষালাভের অধিকার ইত্যাদি। রাজনৈতিক অধিকার বলতে বোঝায় ভোট দেওয়ার অধিকার, নিজের পছন্দের নেতা নির্বাচনে অংশগ্রহণের অধিকার, বিচার পাওয়ার অধিকার এবং নাগরিক স্বাধীনতা। সামাজিক ও অর্থনৈতিক অধিকার বলতে বোঝায় স্বাস্থ্যসেবা পাওয়ার অধিকার, কাজের সুযোগ, উপযুক্ত বাসস্থান, খাদ্যের নিরাপত্তা, সামাজিক সুরক্ষা এবং সংস্কৃতির প্রতি সম্মান প্রদানের অধিকার। মানবাধিকার রক্ষা ও প্রয়োগের জন্য বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন আন্তর্জাতিক দলিল এবং চুক্তি প্রণীত হয়েছে। ১৯৪৮ সালের "মানবাধিকার সাধারণ ঘোষণাপত্র" সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক দলিল, যা জাতিসংঘ কর্তৃক গৃহীত এবং যার মাধ্যমে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ মানবাধিকার রক্ষায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়। এর মাধ্যমে নিশ্চিত করা হয়েছে যে, সকল মানুষ স্বাধীনভাবে বাঁচার অধিকার রাখে, হিংসা ও শোষণ থেকে মুক্তি পায় এবং তাদের মৌলিক চাহিদাগুলো পূরণ হয়। মানবাধিকার লঙ্ঘন মানে কোনো ব্যক্তির মৌলিক স্বাধীনতা ও মর্যাদার অবমূল্যায়ন, যা জাতীয় ও আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী দণ্ডনীয় অপরাধ। দুঃখজনক হলেও সত্য যে, অনেক দেশ ও সমাজে এখনও মানবাধিকার লঙ্ঘন ঘটে থাকে। ধর্ষণ, হত্যা, নির্যাতন, বর্ণবাদ, ধর্মীয় সহিংসতা, শিশু শ্রম, নারীর প্রতি বৈষম্য, সংখ্যালঘুদের প্রতি অত্যাচার ইত্যাদি মানবাধিকার লঙ্ঘনের দৃষ্টান্ত। এসব লঙ্ঘনের কারণে সামাজিক অস্থিরতা, দারিদ্র্য বৃদ্ধি, জাতির মেরুদণ্ড ভঙ্গ হয় এবং মানুষের মধ্যে অবিশ্বাস ও ভয় তৈরি হয়। তাই মানবাধিকার রক্ষার জন্য প্রতিটি দেশকে কার্যকর আইন প্রণয়ন এবং সঠিক বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি, জনগণকেও মানবাধিকার সম্পর্কে সচেতন হতে হবে এবং নিজ অধিকার রক্ষার পাশাপাশি অন্যের অধিকারকে সম্মান করা শিখতে হবে। শিক্ষা, সাংস্কৃতিক উদ্যোগ এবং সামাজিক আন্দোলনের মাধ্যমে মানবাধিকার সচেতনতা বৃদ্ধি করা যেতে পারে। মানবাধিকার কেবল একটি আইনগত বিষয় নয়, এটি একটি নৈতিক এবং সামাজিক দায়িত্ব যা মানবজীবনের মান উন্নত করে এবং মানবসমাজের সুস্থ ও শান্তিপূর্ণ বিকাশ নিশ্চিত করে। সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রের সব শ্রেণির মানুষের অধিকার সুরক্ষিত হলে একটি দেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন সুগম হয়। মানবাধিকার রক্ষার মাধ্যমেই গড়ে ওঠে ন্যায়পরায়ণ, সহনশীল ও সাম্যবাদী সমাজ। বিশ্বায়নের এই যুগে মানবাধিকারকে আরও শক্তিশালী করতে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ও সংলাপ অপরিহার্য। বিভিন্ন দেশের মধ্যে পারস্পরিক সম্মান ও বোঝাপড়ার ভিত্তিতে বিশ্বজুড়ে মানবাধিকার রক্ষায় কাজ করতে হবে। উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোকে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিতে হবে এবং বৈশ্বিক মানবাধিকার মানদণ্ড প্রতিষ্ঠায় অংশগ্রহণ করতে হবে। মানবাধিকার সংরক্ষণ শুধুমাত্র আইনগত বাধ্যবাধকতা নয়, এটি মানুষের মনের মধ্যে সহানুভূতি, ভালোবাসা ও মানবতার বিকাশ ঘটায়। যে সমাজে মানবাধিকারকে সম্মান জানানো হয়, সেখানে মানুষ তার সম্ভাবনার সর্বোচ্চ পর্যায়ে উন্নীত হয়, এবং সেই সমাজে শান্তি, সম্প্রীতি ও উন্নয়ন নিশ্চিত হয়। এজন্য সকল স্তরের মানুষকে মানবাধিকার রক্ষায় সচেতন ও উদ্যমী হতে হবে। রাষ্ট্র ও সরকারকে অবশ্যই নিরপেক্ষ ও কার্যকর মানবাধিকার নীতি গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করতে হবে, যাতে সকল নাগরিক তাদের অধিকার ভোগ করতে পারে। এক কথায় বলা যায়, মানবাধিকার হলো মানুষের জন্য শান্তি, স্বাধীনতা, মর্যাদা ও উন্নয়নের ভিত্তি। এর মধ্যেই নিহিত মানবতার আসল অর্থ। তাই মানবাধিকার রক্ষা করা প্রতিটি মানুষের মৌলিক কর্তব্য, কারণ মানবাধিকার নিশ্চিত করার মধ্য দিয়ে আমাদের সমাজ ও জাতি সমৃদ্ধি ও উন্নতির পথে এগিয়ে যেতে পারে।

Read More

প্রকৃতি
—রেজওয়ানুল হক

নীল আকাশে ভাসে সাদা মেঘ,
ধানের খেতে বাজে বাতাসের বেগ।
পাখির ডাকে ভোর হয় যে গ্রামে,
সেই তো প্রকৃতি—নির্জন এক স্বর্গধামে।

সবুজ পাতায় রোদের খেলাঘর,
বৃষ্টির ফোঁটায় ছড়ায় সুরের অন্তর।
ঝরনার ধারে চুপচাপ বসে,
মনে হয় যেন—সব দুঃখ গেছে ভেসে।

নদীর ধারে জোছনার আলতো ছোঁয়া,
প্রকৃতির প্রেমে হৃদয় যায় রোঁয়া রোঁয়া।
গাছের ছায়া, মাটির গন্ধ,
সৃষ্টিকর্তার রহমতে লাগে অসংখ গন্ধ।

মানুষ ভুলে যায় এই মায়ার ডাকে,
নগরের ধোঁয়ায় মন খালি থাকে।
কিন্তু প্রকৃতি দেয় নিঃস্বার্থ ভালোবাসা,
সে চায় না কিছু, কেবল শান্তির আশ্বাসটা।

তাই ফিরে যাই, কখনো বনপথে হাঁটি,
আকাশের নিচে দাঁড়াই, মাটির মতো নীচু হই পাঁটি।
প্রকৃতি শেখায়—নীরবতাই শব্দের মায়া,
এই ভালোবাসা চিরকাল, কখনো নয় ছায়া।

Read More

প্রকৃতির নিষ্ঠুরতা
—রেজওয়ানুল হক

তুমি কি দেখেছো গাছপালার কান্না,
ঝড় এলে যারা হারায় আপন প্রাণটা?
তুমি কি শুনেছো নদীর দীর্ঘশ্বাস—
তীরে ধাক্কা খেয়ে বলছে, “আর পারি না, আস!”

সূর্য উঠে, ঠিকই—আলোর আহ্বান,
কিন্তু কখনো সে পুড়িয়ে দেয় প্রাণ।
মেঘ আসে ছায়া দিতে—সেই মেঘে বাজ পড়ে,
বাঁচতে চাওয়া শিশুও হারায় মা’র কোলে পড়ে।

প্রকৃতি যে মা, সেই মা-ও রাগে,
ভূমিকম্পে কাঁপে ধরণী, ঘুম ভাঙে।
সমুদ্র কখনো টানে, আবার গিলে ফেলে—
একদিন যেথায় খেল, আজ শবদেহ মেলে।

পাখির ডাকে যে সকাল জাগে হেসে,
সেই পাখি পড়ে যায় বন্দুকের দেশে।
সবুজ মাঠে যে শিশুরা দৌড়ায় প্রাণে,
তাদের মুখে আজ ধুলো, রক্ত রাঙা টানে।

এই কি তবে প্রকৃতির ভালোবাসা?
নাকি সে শেখায়, "ভুলে যেও না আশা।
নরম ও কঠিন—দুই রূপই তার,
ভালোবাসে যেমন, তেমনি ছুঁড়ে দেয় মার।"

তবু তার বুকেই তো জীবন গড়ে ওঠে,
তবু তার বুকে মাথা রেখে কেউ জোটে।
প্রকৃতি নিষ্ঠুর, তাই নয় ভুলে,
সে শেখায়—ভালোবাসাও আসে কাঁটার ফুলে।

Read More

প্রকৃতির বর্বরতা
– রেজওয়ানুল হক

একদিন হঠাৎ দেখি, আকাশ কালো
সন্ধ্যার আগেই লুটিয়ে পড়ে ভয়,
ঝড়ের শিসে কেঁপে ওঠে দিগন্ত,
পাখির ডানায় ভর করে কান্নার অসীম সুর।

বৃক্ষেরা জড়োসড়ো,
মাটির বুক চিরে ওঠে ক্ষোভের কাঁপন,
প্রকৃতি তখন আর কোমল নয়—
সে এক অভিশপ্ত জ্বালামুখ,
যেখানে গলে যায় সভ্যতার মুখোশ।

এক এক করে ভেঙে পড়ে কুঁড়েঘর,
ভেসে যায় শিশুর পালঙ্ক,
কৃষকের মুঠো মুঠো স্বপ্ন—
মাটির মতোই বিচূর্ণ হয়ে ছড়িয়ে পড়ে বাতাসে।

নদীটা, যে একদিন ছিলো মায়ের মতো,
সে-ই এখন মাতাল সাপ,
ডুবে যায় জনপদ, ডুবে যায় ইতিহাস,
ডুবে যায় আমাদের অহংকার।

প্রতিটি বজ্রপাত যেন এক একটি চিৎকার,
একটি প্রশ্ন ছুঁড়ে দেয় আকাশের দিকে—
"তোমরা কি ভেবেছিলে আমি চিরকাল নীরব থাকবো?"
"তোমরা কি বুঝোনি, আমি রক্ত নয়—
প্রকৃতি, যার ধৈর্য সীমাহীন,
তবে প্রতিশোধ হলে তা ভয়ংকর!"

শুষ্ক মৌসুমে সূর্য পোড়ায়
যেন আগুনে বাঁশের কঞ্চি,
কৃষকের চোখে জল শুকিয়ে যায়
তৃষ্ণার চেয়ে গভীর এক দহন নিয়ে।

অরণ্যের কোল ছিঁড়ে ফেলে দালানের কঙ্কাল,
নির্বিচারে কাটা গাছের কান্না,
জলে মিশে যায়, বায়ুতে ভাসে—
তবু কে শুনে? কে বোঝে?

আমরা বানিয়েছি রাস্তা,
মাটি চাপা দিয়েছি নদীর হৃদয়,
দিয়েছি কংক্রিটের অলংকার,
কিন্তু সে অলংকার যখন বিষ হয়ে ফিরে আসে
তখন প্রকৃতি বলে না কিছু—
শুধু প্রতিক্রিয়া দেয়।

প্রতিটি দুর্যোগ এক একটি প্রতিবাদপত্র—
ভূমিকম্পের আঘাতে ফাটে ইট,
কিন্তু ফাটে আমাদের বিবেক না!
সাইক্লোনে ভেসে যায় শহর,
কিন্তু আমরা শুধু সংখ্যা গুনে—
“মৃত ৩২, আহত ৭১…”

এবং তারপর, আবারও ব্যস্ত হই বিলবোর্ডে,
নতুন মলের উদ্বোধনে,
পুরনো বন কাটতে কাটতে
নতুন উন্নয়নের গান গাই।

প্রকৃতি কি বর্বর?
নাকি আমরাই সেই বর্বর,
যারা পাখির বাসা চুরি করে বাড়ি বানাই,
যারা সাগরের বুকে তেলের কল বসাই,
জীবন বাঁচাতে নয়—
লোভ বাঁচাতে।

তবু সেই প্রকৃতিই একদিন ফেরত দেয়—
একটি কুঁড়ি, একটি শিশিরবিন্দু,
একটি বসন্তের কোকিল ডাক,
যেখানে টিকে আছে আশা,
যেখানে সুযোগ আছে ক্ষমার।

প্রকৃতির এই বর্বরতা নয় প্রতিহিংসা,
এ যেন মা’র কঠিন শাসন—
যার ভেতরেও লুকিয়ে থাকে স্নেহের গভীর রঙ।

তাই আজ দাঁড়িয়ে আছি আমরা,
পায়ের নিচে কাঁপা মাটি, মাথার উপর বিপন্ন নীল,
আর বুকের ভেতর একটাই প্রার্থনা—
“প্রকৃতি, ক্ষমা করো,
আমরা শিখবো—
এবার সত্যি শিখবো।”

Read More