Story of Mahabharat Part 123 in Bengali Spiritual Stories by Ashoke Ghosh books and stories PDF | মহাভারতের কাহিনি – পর্ব 123

Featured Books
Categories
Share

মহাভারতের কাহিনি – পর্ব 123

মহাভারতের কাহিনি – পর্ব-১২৩

দ্রোণের সেনাপতি পদে অভিষেক ও দুর্যোধনকে বরদানের কাহিনি

 

প্রাককথন

কৃষ্ণদ্বৈপায়ন বেদব্যাস মহাভারত নামক মহাগ্রন্থ রচনা করেছিলেন। তিনি এই গ্রন্থে কুরুবংশের বিস্তার, গান্ধারীর ধর্মশীলতা, বিদুরের প্রজ্ঞা, কুন্তীর ধৈর্য, বাসুদেবের মাহাত্ম্য, পাণ্ডবগণের সত্যপরায়ণতা এবং ধৃতরাষ্ট্রপুত্রগণের দুর্বৃত্ততা বিবৃত করেছেন। নানা কাহিনি সংবলিত এই মহাভারতে সর্বমোট ষাট লক্ষ শ্লোক আছে। কৃষ্ণদ্বৈপায়ন বেদব্যাস পূর্বে নিজের পুত্র শুকদেবকে এই গ্রন্থ পড়িয়ে তার পর অন্যান্য শিষ্যদের শিখিয়েছিলেন। তিনি ষাট লক্ষ শ্লোকে আর একটি মহাভারতসংহিতা রচনা করেছিলেন, তার ত্রিশ লক্ষ শ্লোক দেবলোকে, পনের লক্ষ পিতৃলোকে, চোদ্দ লক্ষ গন্ধর্বলোকে এবং এক লক্ষ মনুষ্যলোকে প্রচলিত আছে। কৃষ্ণদ্বৈপায়ন বেদব্যাসের শিষ্য বৈশম্পায়ন শেষোক্ত এক লক্ষ শ্লোক পাঠ করেছিলেন। অর্জুনের প্রপৌত্র রাজা জনমেজয় এবং ব্রাহ্মণগণের বহু অনুরোধের পর কৃষ্ণদ্বৈপায়ন বেদব্যাস তাঁর শিষ্য বৈশম্পায়নকে মহাভারত শোনাবার জন্য আজ্ঞা দিয়েছিলেন।

সেইসব মানুষের সংখ্যা অত্যন্ত নগণ্য, যাঁরা বিশালাকার মহাগ্রন্থ মহাভারত সম্পূর্ণ পাঠ করেছেন। অধিকাংশ মানুষই মহাভারতের কিছু কিছু গল্প পড়েছেন, শুনেছেন বা দূরদর্শনে সম্প্রসারিত ধারাবাহিক চলচ্চিত্রায়ণ দেখেছেন, যা মহাভারতের খণ্ডাংশ মাত্র এবং মূলত কৌরব ও পাণ্ডবদের বিষয়ীভূত ও শ্রীকৃষ্ণের ভূমিকাকে কেন্দ্র করে নির্মিত।

মহাগ্রন্থ মহাভারত রচিত হয়েছে অসংখ্য কাহিনির সমাহারে, যে কাহিনিসমূহের অধিকাংশই কৌরব ও পাণ্ডবদের কাহিনির সঙ্গে বিশেষভাবে সম্পর্কিত।

সেই সমস্ত কাহিনিসমূহের কিছু কিছু কাহিনি সহজবোধ্য ভাষায় সুহৃদ পাঠক-পাঠিকাদের কাছে ধরাবাহিকভাবে উপস্থাপনা করার জন্য আমার এই ক্ষুদ্র প্রয়াস আশা করি ভালো লাগবে।

অশোক ঘোষ

 

দ্রোণের সেনাপতি পদে অভিষেক ও দুর্যোধনকে বরদানের কাহিনি

যুদ্ধের দশম দিনে ভীষ্মের পতনের পর দুর্যোধন কর্ণকে বললেন, বয়স, বিক্রম, শাস্ত্রজ্ঞান ও যোদ্ধার উপযুক্ত সমস্ত গুণের জন্য ভীষ্ম আমার সেনাপতি হয়েছিলেন। তিনি দশ দিন শত্রুবিনাশ ও আমাদের রক্ষা করে স্বর্গযাত্রায় প্রস্তুত হয়েছেন। এখন তুমি কাকে সেনাপতি করা উচিত মনে করো? কর্ণ বললেন, এখানে যারা আছেন তারা প্রত্যেকে সেনাপতি হওয়ার যোগ্য, কিন্তু সকলেই একসঙ্গে সেনাপতি হতে পারেন না। এঁরা প্রত্যেকেই নিজেকে শ্রেষ্ঠ মনে করেন, তাই একজনকে সেনাপতি করলে বাকিরা ক্ষুব্ধ হয়ে যুদ্ধে বিরত হবেন। দ্রোণ সকল যোদ্ধার শিক্ষক, প্রাজ্ঞ, মাননীয় এবং শ্রেষ্ঠ অস্ত্রধর, ইনি ভিন্ন আর কেউ সেনাপতি হতে পারেন না। এমন যোদ্ধা নেই যিনি যুদ্ধে দ্রোণের নির্দেশ মানবেন না।  

দুর্যোধন তখনই দ্রোণকে সেনাপতি হবার জন্য অনুরোধ করলেন। দ্রোণ বললেন, আমি ষড়ঙ্গ বেদ ও মনুর নীতিশাস্ত্রে অভিজ্ঞ, পাশুপত অস্ত্র ও বিবিধ বাণের প্রয়োগও জানি। তোমার বিজয় কামনায় আমি পাণ্ডবদের সঙ্গে যুদ্ধ করবো কিন্তু ধৃষ্টদ্যুম্নকে বধ করবো না, কারণ সে আমাকে বধ করবার জন্যই সৃষ্ট হয়েছে। আমি বিপক্ষের সকল সৈন্য বিনষ্ট করবো, কিন্তু পাণ্ডবরা আমার সঙ্গে খুশিমনে যুদ্ধ করবেন।

দুর্যোধন দ্রোণাচার্যকে যথাবিধি সেনাপতিত্বে অভিষিক্ত করলেন। দ্রোণ বললেন, কুরুশ্রেষ্ঠ গাঙ্গেয় ভীষ্মের পর আমাকে সেনাপতির পদ দিয়ে তুমি আমাকে সম্মানিত করেছ, তার যোগ্য ফল লাভ করো। তুমি অভীষ্ট বর চাও, আজ তোমার কোন্ কামনা পূর্ণ করব বলো। দুর্যোধন বললেন, রথিশ্রেষ্ঠ, এই বর দিন যে যুধিষ্ঠিরকে জীবিত অবস্থায় আমার কাছে ধরে আনবেন। দ্রোণ বললেন, যুধিষ্ঠির ধন্য, তুমি তাকে ধরে আনতে বলছ, বধ করতে চাইছ না। আমি তাকে মারব এ বোধ হয় তুমি অসম্ভব মনে করো, অথবা ধর্মরাজ যুধিষ্ঠিরের প্রতি কেউ ঈর্ষান্বিত নয় তাই তুমি তার জীবনরক্ষা করতে চাও। অথবা পাণ্ডবগণকে জয় কোরে তুমি তাদের রাজ্যাংশ ফিরিয়ে দিতে ইচ্ছা করো। যুধিষ্ঠির ধন্য, তার জন্ম সফল, অজাতশত্রু নামও সার্থক, কারণ তাকে তুমি শ্রদ্ধা করো।

দ্রোণের এই কথা শুনে দুর্যোধন তার অভিপ্রায় প্রকাশ কোরে ফেললেন, কারণ বৃহস্পতির মতো বুদ্ধিমান লোকেও অনেক সময় মনোভাব গোপন করতে পারেন না। দুর্যোধন বললেন, আচার্য, যুধিষ্ঠিরকে মারলে আমার বিজয়লাভ হবে না, অন্য পাণ্ডবরা আমাদের হত্যা করবে। তাদের যদি একজনও অবশিষ্ট থাকে তবে সে আমাদের বধ করবে। কিন্তু যদি সত্যপ্রতিজ্ঞ যুধিষ্ঠিরকে ধরে আনা যায় তবে তাকে আবার পাশা খেলায় পরাস্ত করলে তাঁর অনুগত ভাইয়েরা আবার বনে যাবে। এমন জয়ই দীর্ঘকাল স্থায়ী হবে, সেজন্য ধর্মরাজকে বধ করতে চাই না।

দুর্যোধনের কুটিল অভিপ্রায় জেনে বুদ্ধিমান দ্রোণ চিন্তা কোরে এই বর দিলেন – যুদ্ধের সময় অর্জুন যদি যুধিষ্ঠিরকে রক্ষা না করেন তবে ধরে নিও যে যুধিষ্ঠির আমাদের বশে এসেছেন। বৎস, অর্জুন দেবতা ও অসুরেরও অজেয়, তাঁর কাছ থেকে আমি যুধিষ্ঠিরকে হরণ করতে পারবো না। অর্জুন আমার শিষ্য, কিন্তু যুবা, পুণ্যবান ও একাগ্রচিত্ত, সে ইন্দ্র ও রুদ্রের নিকট অনেক অস্ত্র লাভ করেছে এবং তোমার প্রতি তার ক্রোধ আছে। তুমি যে উপায়ে পারো অর্জুনকে অপসারিত করো, তা হলেই ধর্মরাজ বিজিত হবেন। অর্জুন বিনা যুধিষ্ঠির যদি মুহূর্তকালও যুদ্ধক্ষেত্রে আমার সম্মুখে থাকে তবে তাকে নিশ্চয় তোমার বশে আনবো।

দ্রোণের এই কথা শুনে নির্বোধ দুর্যোধন মনে করলেন যে যুধিষ্ঠির ধরা পড়বেন। তারা জানত যে দ্রোণ পাণ্ডবদের পক্ষপাতী। তার প্রতিজ্ঞা দৃঢ় করবার জন্য দুর্যোধন দ্রোণের বরদানের সংবাদ সৈন্যগণের মধ্যে ঘোষণা করলেন।

______________

(ক্রমশ)