Story of Mahabharat Part 131 in Bengali Spiritual Stories by Ashoke Ghosh books and stories PDF | মহাভারতের কাহিনি – পর্ব 131

Featured Books
Categories
Share

মহাভারতের কাহিনি – পর্ব 131

মহাভারতের কাহিনি – পর্ব-১৩১

অর্জুনের স্বপ্ন দর্শনের কাহিনি

 

প্রাককথন

কৃষ্ণদ্বৈপায়ন বেদব্যাস মহাভারত নামক মহাগ্রন্থ রচনা করেছিলেন। তিনি এই গ্রন্থে কুরুবংশের বিস্তার, গান্ধারীর ধর্মশীলতা, বিদুরের প্রজ্ঞা, কুন্তীর ধৈর্য, বাসুদেবের মাহাত্ম্য, পাণ্ডবগণের সত্যপরায়ণতা এবং ধৃতরাষ্ট্রপুত্রগণের দুর্বৃত্ততা বিবৃত করেছেন। নানা কাহিনি সংবলিত এই মহাভারতে সর্বমোট ষাট লক্ষ শ্লোক আছে। কৃষ্ণদ্বৈপায়ন বেদব্যাস পূর্বে নিজের পুত্র শুকদেবকে এই গ্রন্থ পড়িয়ে তার পর অন্যান্য শিষ্যদের শিখিয়েছিলেন। তিনি ষাট লক্ষ শ্লোকে আর একটি মহাভারতসংহিতা রচনা করেছিলেন, তার ত্রিশ লক্ষ শ্লোক দেবলোকে, পনের লক্ষ পিতৃলোকে, চোদ্দ লক্ষ গন্ধর্বলোকে এবং এক লক্ষ মনুষ্যলোকে প্রচলিত আছে। কৃষ্ণদ্বৈপায়ন বেদব্যাসের শিষ্য বৈশম্পায়ন শেষোক্ত এক লক্ষ শ্লোক পাঠ করেছিলেন। অর্জুনের প্রপৌত্র রাজা জনমেজয় এবং ব্রাহ্মণগণের বহু অনুরোধের পর কৃষ্ণদ্বৈপায়ন বেদব্যাস তাঁর শিষ্য বৈশম্পায়নকে মহাভারত শোনাবার জন্য আজ্ঞা দিয়েছিলেন।

সেইসব মানুষের সংখ্যা অত্যন্ত নগণ্য, যাঁরা বিশালাকার মহাগ্রন্থ মহাভারত সম্পূর্ণ পাঠ করেছেন। অধিকাংশ মানুষই মহাভারতের কিছু কিছু গল্প পড়েছেন, শুনেছেন বা দূরদর্শনে সম্প্রসারিত ধারাবাহিক চলচ্চিত্রায়ণ দেখেছেন, যা মহাভারতের খণ্ডাংশ মাত্র এবং মূলত কৌরব ও পাণ্ডবদের বিষয়ীভূত ও শ্রীকৃষ্ণের ভূমিকাকে কেন্দ্র করে নির্মিত।

মহাগ্রন্থ মহাভারত রচিত হয়েছে অসংখ্য কাহিনির সমাহারে, যে কাহিনিসমূহের অধিকাংশই কৌরব ও পাণ্ডবদের কাহিনির সঙ্গে বিশেষভাবে সম্পর্কিত।

সেই সমস্ত কাহিনিসমূহের কিছু কিছু কাহিনি সহজবোধ্য ভাষায় সুহৃদ পাঠক-পাঠিকাদের কাছে ধরাবাহিকভাবে উপস্থাপনা করার জন্য আমার এই ক্ষুদ্র প্রয়াস আশা করি ভালো লাগবে।

অশোক ঘোষ

 

অর্জুনের স্বপ্ন দর্শনের কাহিনি

সুভদ্রা প্রভৃতির নিকট বিদায় নিয়ে কৃষ্ণ অর্জুনের জন্য কুশ দিয়ে একটি শয্যা রচনা করলেন এবং তার চারদিকে মালা, গন্ধদ্রব্য, খই ও অস্ত্রশস্ত্রে সাজিয়ে দিলেন। পরিচারকগণ সেই শয্যার নিকটে মহাদেবের পূজার উপকরণ রেখে দিলো। কৃষ্ণের উপদেশ অনুসারে অর্জুন পূজা করলেন, তারপর কৃষ্ণ নিজের শিবিরে ফিরে গেলেন।

সেই রাতে পাণ্ডবশিবিরে কারও ঘুম হোলো না, সকলেই উদ্বিগ্ন হয়ে অর্জুনের  প্রতিজ্ঞার বিষয় ভাবতে লাগলেন। মাঝরাতে কৃষ্ণ তার সারথি দারুককে বললেন, আমি কাল এমন কাজ করবো যাতে সূর্যাস্তের পূর্বেই অর্জুন জয়দ্রথকে বধ করতে পারবে। অর্জুনের চেয়ে প্রিয়তর আমার কেউ নেই, তার জন্য আমি কৌরবগণকে সংহার করবো। সকাল হলেই তুমি আমার রথ প্রস্তুত করবে এবং তাতে আমার কৌমোদকী গদা, দিব্য শক্তি, চক্র, ধনুর্বাণ, ছাতা প্রভৃতি রাখবে এবং চারটি ঘোড়া যুক্ত করবে। পাঞ্চজন্যের আওয়াজ শুনলেই তুমি দ্রুত আমার কাছে আসবে। দারুক বললেন, আপনি যাঁর সারথ্য স্বীকার করেছেন সেই অর্জুন নিশ্চয় জয়ী হবেন। আপনি যে আদেশ করলেন আমি তা পালন করবো।

অর্জুন শিবমন্ত্র জপ করতে করতে নিদ্রিত হলেন। তিনি স্বপ্ন দেখলেন, কৃষ্ণ তার কাছে এসে বলছেন, তোমার বিষাদের কারণ কি তা বলো। অর্জুন উত্তর দিলেন, আমি প্রতিজ্ঞা করেছি যে কাল সূর্যাস্তের পূর্বে জয়দ্রথকে বধ করবো, কিন্তু কৌরবপক্ষের মহারথগণ এবং বিশাল সেনা তাঁকে বেষ্টন করে থাকবে। কি করে তাকে আমি দেখতে পাবো? এখন সূর্যাস্তও তাড়াতাড়ি হয়। কৃষ্ণ, আমার প্রতিজ্ঞারক্ষা হবে না, আমি জীবিত থাকতেও পারবো না।

কৃষ্ণ বললেন, যদি পাশুপত অস্ত্র তোমার জানা থাকে তবে তুমি কাল জয়দ্রথকে বধ করতে পারবে। যদি জানা না থাকে তবে মনে মনে মহাদেবের ধ্যান ও মন্ত্রজপ করো। অর্জুন আচমন করে ভূমিতে বসে একাগ্রমনে ধ্যান করতে লাগলেন। ব্রাহ্মমুহূর্তে তিনি দেখলেন, কৃষ্ণ তাঁর ডান হাত ধরে আছেন, তারা আকাশপথে বায়ুবেগে হিমালয় অতিক্রম করে মন্দর পর্বতে উপস্থিত হয়েছেন। সেখানে শূলপাণি জটাধারী গৌরবর্ণ মহাদেব, পার্বতী ও প্রমথগণ রয়েছেন, গান, বাজনা, নাচ হচ্ছে, ব্রহ্মবাদী মুনিগণ স্তব করছেন। কৃষ্ণ ও অর্জুন ভূমিতে মাথা ঠেকিয়ে সনাতন ব্রহ্মস্বরূপ মহাদেবকে প্রণাম করলেন, মহাদেব সহাস্যে স্বাগত জানালে কৃষ্ণ ও অর্জুন হাত জোড় কোরে স্তব করলেন। অর্জুন দেখলেন, তিনি যে পূজা করেছিলেন তার উপাচার মহাদেবের নিকট এসেছে। মহাদেবের কৃপায় অর্জুন পাশুপত অস্ত্রের প্রয়োগ শিক্ষা করলেন। তার পর কৃষ্ণ ও অর্জুন মহাদেবকে বন্দনা করে শিবিরে ফিরে এলেন।

সকাল হলে বৈতালিকদের স্তব ও গান-বাজনার ধ্বনিতে যুধিষ্ঠিরের নিদ্রাভঙ্গ হোলো। সুশিক্ষিত পরিচারকগণ মন্ত্রপূত চন্দনাদিযুক্ত জলে তাকে স্নান করিয়ে দিলো। যুধিষ্ঠির একটি ঢিলা উষ্ণীষ পরলেন এবং মালা ও কোমল বস্ত্র ধারণ করে যথাবিধি হোম করলেন। তার পর মহার্ঘ অলংকারে ভূষিত হয়ে কৃষ্ণ, বিরাট, দ্রুপদ, সাত্যকি, ধৃষ্টদ্যুম্ন, ভীম প্রভৃতির সঙ্গে মিলিত হলেন। যুধিষ্ঠির কৃষ্ণকে বললেন, তুমি সকল বিপদ থেকে আমাদের রক্ষা করো, পাণ্ডবগণ অগাধ কৌরবসাগরে ডুবে যাচ্ছে, তুমি তাদের ত্রাণ করো। অর্জুনের প্রতিজ্ঞা সত্য করো। কৃষ্ণ বললেন, অর্জুনের তুল্য ধনুর্ধর ত্রিলোকে নেই, সমস্ত দেবতা যদি জয়দ্রথের রক্ষক হন তবুও অর্জুন আজ তাকে বধ করবেন।

এমন সময়ে অর্জুন এসে যুধিষ্ঠিরকে বললেন, কৃষ্ণের অনুগ্রহে আমি এক আশ্চর্য স্বপ্ন দেখেছি। অর্জুনের মহাদেবকে দর্শনের বৃত্তান্ত শুনে সকলে মাটিতে মাথা রেখে প্রণত হয়ে সাধু সাধু বলতে লাগলেন। তারপর অর্জুন বললেন, সাত্যকি, শুভলক্ষণ দেখতে পাচ্ছি, আজ আমি নিশ্চয় জয়ী হবো। আজ কৃষ্ণ আর আমি তোমাদের কাছে থাকব না, তুমি সযত্নে রাজা যুধিষ্ঠিরকে রক্ষা করো।

______________

(ক্রমশ)