LOVE UNLOCKED - 9 in Bengali Love Stories by Pritha Das books and stories PDF | LOVE UNLOCKED - 9

Featured Books
Categories
Share

LOVE UNLOCKED - 9

Love Unlocked :9
Pritha 🎀:

পরিবর্তন! শব্দটা পাঁচ অক্ষরের হলেও জিনিসটা বড় অদ্ভুদ। এর সাথে তাল মেলাতে না পারলে বোধকরি সময়ের মাঝে থমকে যেতে হয়। এক নিমেষে মেনে নিতে হয় এর গতিকে। মান্যতা দিতে হয় এর অস্তিত্বের। তা নাহলে বোধহয় পিছিয়ে পড়তে হয় সময়ের স্রোতে। পরিবর্তন থেমে থাকে না, সে অবিরাম চলে, কখনো ধীরে, কখনো প্রবল বেগে। যাকে সে ছুঁয়ে যায়, তার চিহ্ন রেখে যায়—কখনো স্মৃতিতে, কখনো বাস্তবতায়।
তেমনই মানুষ বদলায়, বদলায় সমাজ আর চিন্তাধারা । কখনো স্বেচ্ছায়, কখনো পরিস্থিতির চাপে। পরিবর্তন কখনো আশীর্বাদ, কখনো অভিশাপ। কখনো স্বপ্নের দুয়ার খুলে দেয়, আবার কখনো চেনা গণ্ডি ভেঙে দেয়।
কিন্তু একথা সত্য—পরিবর্তনকে অস্বীকার করা যায় না। চাইলেও নয়। কারণ, জীবন নিজেই এক প্রবহমান পরিবর্তনের নাম।

ক্যাফের চেনা পরিবেশটা আজ  আরিয়ার কাছে অচেনা লাগছে। সবকিছু একই রকম, অথচ যেন কেমন বদলে গেছে। কফির মৃদু সুগন্ধ, মিউজিকের নরম সুর—সবই আগের মতো, কেবল ওর নিজের অবস্থানটা বদলে গেছে।
বাকি স্টাফদের দৃষ্টি অস্বস্তিকরভাবে পিছলে যাচ্ছে ওর দিকে। ফিসফাস হচ্ছে, চাপা হাসি ফুটে উঠছে কারও মুখে। আরিয়া টের পাচ্ছে—সবাই জানে। সবাই জানে, সে এখন এই ক্যাফের ওনারের স্ত্রী। মি. দেবর্ষি সিংহ রায়ের স্ত্রী মিসেস আরিয়া সিংহ রায়।
সকালে বাড়ি থেকে বেরোনোর আগেও বুঝে ওঠেনি পরিস্থিতি আজ ওকে এমন জায়গায় এনে দাঁড় করাবে। এমন দোটানায় ভুগতে হবে। নিজের জীবনের লাগাম অন্যের হাতে তুলে দিতে হবে। চোখ থেকে না চাইতেও অবিরাম জল পড়ে যাচ্ছে। আজ ওর খুব বাবা মা এর কথা মনে পড়ছে। মনে হচ্ছে, যদি ওর কোনো অভিভাবক থাকতো তাহলেও কি ওর উপর দিয়ে এমন ঝড় বয়ে যেতো ?  সবার তীক্ষ্ণ নজর, কৌতুক এর ফিসফাস হাসি আজ ওর বুকে কাটার মত বিঁধছে। এরাও কি হাসতে পারত ওর পরিস্থিতির উপর ? যদি ওর নিজের কেউ এখানে থাকতো ?

তবে যার জন্য এমন পরিস্থিতি সে একটু দূরেই নির্বিকার ভাবে বসে আছে। যেন তাকে আজকের কোনো কিছুই কোনো ভাবে প্রভাবিত করেনি। রাগে দুঃখে বিরক্তিতে আরিয়ার মুখটা কুঁচকে গেলো। আজ গা ঘিনঘিন করে উঠলো মানুষটাকে দেখে। হঠাৎ মনে হলো আচ্ছা ওর দাভাই যদি এসব জানে তার রিয়েকশন কেমন হবে ? সেও কি ভুল বুঝবে আরিয়া কে ? এখানের কিছুজনের মত তারও কি মনে হবে আরিয়া টাকার জন্য দেবর্ষি সিংহ রায়ের মত মানুষকে প্রেমের জালে ফাসিয়েছে ? কিন্তু সে তো এসব পারে না। এসব তো তাকে কেউ শিখিয়ে দেয়নি সে পারবে কেমন করে !এই সমাজের জন্য, এই সমাজের মানুষের মেন্টালিটি আর রীতিনীতির জন্য ও যে ভীষণ ছোট ! আজ হাত ধরে পথ দেখানোর মত ওর পাশে কেউ নেই ! কেউ না !

পাশ থেকে কানে এলো "আরিয়া তোমার নাকে সিঁদুর পড়েছে যে, দেখো স্যার তোমাকে খুব সুখে রাখবে।" 
কথাটা কানে আসতেই একটা তাচ্ছিল্যের হাসি বেরিয়ে এলো ভিতর থেকে। বিড়বিড় করে বলে উঠলো "ভালো থাকা ! এসব তো আমার কপালে নেই। ভালো থাকা নিয়ে আমি জন্মাইনি।"

বলতে বলতে চোখ পড়ল দূরে দাঁড়িয়ে থাকা দেবর্ষির দিকে। সে এখন আবিরের সাথে কথা বলছে। আরিয়ার চোখের সামনে ভেসে উঠল কিছুক্ষণ আগের মুহুর্ত টা।

সকালে মনমরা হয়ে কলেজ গেছিল ও। তবে সোনালীর সাথে না চাইতেও দেখা হয়ে গেছিল। পরে সোনালী সাথে ছিল বলে দাদার সাথে দেখা না করেই ক্যাফেতে চলে আসতে হয়েছিল ওকে। তবে সময়ের সাথে সাথে মনটা আরো খারাপ হয়ে গেছিল। না জানি হাসপাতালে ওর দাদার কি অবস্থা। দুদিন দাদার সাথে কোনো দেখা সাক্ষাৎ নেই। সকালে কানের দুল খুঁজে না পেয়েও মন খারাপ ছিল। ওর তখন মন চাইছিল আজ দিন টাকে মন খারাপের দিন বলে ঘোষিত করতে। কিন্তু ভগবান যে ওর জন্য আরো অনেক কিছু তৈরি করে রেখেছেন টের পায়নি সেটা। ক্যাফেতে পৌঁছে রোজকার মত ব্যস্ত হয়ে গেছিল নিজের কাজে। মনে মনে ভাবছিল সোনালীর সাথে আজকে সারাদিনটার কথা। শত খারাপের মাঝে একটা আনএক্সপেক্টেড ভালো ব্যাপার হলো সোনালীর সাথে ওর বন্ধুত্বটা বেশ গভীর হয়েছে। সোনালীকে যেমন ভেবেছিল ও তেমন টাও নয়। বরং দিশাকে বারণ করা সত্ত্বেও ও সোনালীকে ওর ব্যাপারে সব কথা বলে দিয়েছে। এটা নিয়ে দিশার উপর বেশ একটু রেগেই ছিল ও। কিন্তু সোনালী যে ওকে নিয়ে খারাপ কিছু ভাবেনি এটা ভেবেও সোনালীর উপর ভালো লাগা তৈরি হয়েছে। ওকে এত ভাবুক হয়ে থাকতে দেখে সোনালী বলে উঠেছিল "কি হয়েছে তোর ? এত ভাবছিস কি !"

"অনেক কথাই রয়েছে ভাবার মতো ! জানিস দাভাই এর সাথে দুদিন দেখা হয়নি। কি জানি কি অবস্থা ওখানে ! হাসপাতালের ওরা আর দাভাইকে রাখতে চাইছে না। শেষবার তো রীতিমত হাতে পায়ে ধরে রিকোয়েস্ট করে এসেছিলাম।"

"আরেহ এত ভাবিস না। সব ঠিক হয়ে যাবে। আজকে ছুটির পর যাস নাহয় দেখা করতে। ওতো চিন্তা করতে নেই।"

"আমি চিন্তা করছি না। শুধু ভাবছি যে আজকে আমার কোনো অভিভাবক থাকলে বোধহয় এমন পরিস্থিতিতে পড়তে হতো না। কলেজে মিশকা, আকাশ ওরা অভাবে আজও অপমান করতে পারত না। তাই না ?"

"ওদের কথা এত কে ভাবে ! কথায় আছে না ! পাগলে কি না বলে ছাগলে কি না খায় ! তাছাড়া অভিভাবক নিয়ে এত আফসোসের কি আছে ! একদিন না একদিন বিয়ে তো করবি। আর আমাদের মেয়েদের বিয়ের পরে বরই তো অভিভাবক। সেই তোকে আগলে রাখবে দেখিস !"

"তুই পাগল ? বিয়ে আর আমি ? শোন এসব বিয়ে টিয়ে নিয়ে আমার বেশি এক্সাইটমেন্ট নেই। আমার দাদার সুস্থতাই আমার কাছে আগে। যে আমার দাদাকে ভালবেসে কাছে টেনে নেবে আমি এমন কাউকেই বেছে নেবো। ব্যস!" 

"আচ্ছা বাবা আচ্ছা সব হবে তুই যে কাজটা করছিস কর এখন আমি যাই।" বলে সোনালী আরেকটা কফির ট্রে হাতে নিয়ে বেরিয়ে গেলো। আরিয়াও কফির ট্রেটা হাতে নিয়ে বেরোতে যাবে এমন সময় কারোর সাথে ধাক্কা খেয়ে গরম কফির কাপগুলো ওর গায়ে পড়ে গেলো।

"উফ দেখে চলা যায় না ! অন্ধ নাকি।" সাদা অ্যাপ্রন থেকে কফির দাগ তুলতে ব্যস্ত হয়ে গেল আরিয়া।

"অন্ধ তো তুমি। যখনই দেখছি গায়ের উপর দুম করে এসে পড়ে যাচ্ছো। স্পিড যখন কন্ট্রোল করতে পারো না ওতো স্পিডে চলাফেরা করো কেন !"

গলার স্বর শুনেই আরিয়া বুঝতে পেরে গেল এই কণ্ঠের মালিক কে ! তার মানে দেবর্ষি সিংহ রায় এখানে ! এই মানুষ টাকে নিজের আদর্শ মনে করত একটা সময় ও। তখন ওর বাবা মা ও বেঁচে ছিলেন। ছোট বেলায় বাবাকে গর্ব করে বলতো "বাপি আমি একদিন মস্ত বড় ফ্যাশন ডিজাইনার হবো। রূপকথা ফ্যাশন হাউজের মত নিজের কোম্পানি বানাবো।" 
ওর এমন কথা শুনে ওর বাবা খালি হাসত আর বলতো তুই ঠিক পারবি। 
কিন্তু এখন কোথায় কি ! তবে স্বপ্ন মরে যায় না। কখনও কোথাও একটু আড়ালে আবডালে সুযোগ পেলেই তা মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে। সেই জন্যই তো এই জীবন যুদ্ধে লড়াই এর মাঝেও নিজের স্বপ্ন বাঁচাতে পড়াশোনাটা আঁকড়ে ধরেছে। তবে রূপকথা ফ্যাশন হাউসের নাম শুনলেও ও দেবর্ষি সিংহ রায় কে চিনত না ! তাই প্রথম দিন বুঝে উঠতে পারেনি। তবে আজ দ্বিতীয়বার দেখা হতেই চোখের  সামনে স্বপ্ন গুলো ভেসে উঠলো। নিজেকে তার জায়গায় বসিয়ে কিছুটা সুখ অনুভব করার অনুভূতি হাতছাড়া করতে চাইছিল না।

"What happened ! এরম ভাবে তাকিয়ে আছ কেন ? আবার কিভাবে ধাক্কা মারা যায় তার প্ল্যান করছো নাকি ? "
.
.
.
.
চলবে....