Vote color - 1 in Bengali Classic Stories by SAKTI BISWAS books and stories PDF | ভোটের রঙ - 1

Featured Books
  • The Devil (2025) - Comprehensive Explanation Analysis

     The Devil 11 दिसंबर 2025 को रिलीज़ हुई एक कन्नड़-भाषा की पॉ...

  • बेमिसाल यारी

    बेमिसाल यारी लेखक: विजय शर्मा एरीशब्द संख्या: लगभग १५००१गाँव...

  • दिल का रिश्ता - 2

    (Raj & Anushka)बारिश थम चुकी थी,लेकिन उनके दिलों की कशिश अभी...

  • Shadows Of Love - 15

    माँ ने दोनों को देखा और मुस्कुरा कर कहा—“करन बेटा, सच्ची मोह...

  • उड़ान (1)

    तीस साल की दिव्या, श्वेत साड़ी में लिपटी एक ऐसी लड़की, जिसके क...

Categories
Share

ভোটের রঙ - 1

গ্রামের সকাল, ভোটের গন্ধ

পশ্চিমবঙ্গের এক প্রত্যন্ত গ্রাম—গোপালপুর। এই ছোট্ট গ্রামের, চারদিকে সবুজ ধানক্ষেত, গাঁয়ের ভেতর দিয়ে আঁকাবাঁকা কাঁচা রাস্তা চলে গেছে। একদিকে নদীর বাঁধ, অন্যদিকে বনজঙ্গল। ভোরের সূর্য ওঠার সাথে সাথে গ্রাম জেগে ওঠে।

পাখির ডাক, গরুর ঘণ্টার টুংটাং শব্দ, আর কাকের ডাক মিলেমিশে এক অদ্ভুত সকাল তৈরি করে। কিন্তু এই সকালের মাঝেও একটা চাপা উত্তেজনা বিরাজ করছে—কারণ আর কয়েকদিন বাদেই বিধানসভা নির্বাচন।


চায়ের দোকানে ভিড়

গ্রামের চায়ের দোকান যেন নির্বাচনী আলাপের মঞ্চ। ভোরে মাঠে যারা কাজ করতে যায়, কিংবা যারা মাছ ধরতে নদীর ধারে নামে, তারা সবার আগে চায়ের দোকানেই বসে।

চা-দোকানদার হরিদা, মোটা গলায় ডাক দেন—
“এই নাও, চা হয়ে গেল! এবার ভোটের খবর শোনাও দেখি!”

চায়ের দোকানের সামনে বাঁশের বেঞ্চে বসে আছেন বৃদ্ধ কৃষক রঘুবর মণ্ডল। সারা জীবন মাটির সাথে লড়াই করেছেন, রাজনীতির সব রঙ দেখেছেন। তাঁর পাশে বসে আছে কলেজপড়ুয়া যুবক অর্জুন—এই কাহিনীর মূল চরিত্র।

রঘুবর হুঁকো টানতে টানতে বলেন,
“বাপু, এ সব নির্বাচন আমাদের কী দিল বল তো? বছর বছর নতুন নেতা আসে, পুরনো নেতা যায়। কিন্তু গরিবের পেট ভরে না।”

অর্জুন চুপ করে শুনছিল। তার ভেতরে অনেক প্রশ্ন, অনেক ক্ষোভ। কিন্তু সে সবসময় সরাসরি কিছু বলে না।


গৃহস্থদের কথা

এই সময় দোকানে ঢুকল শশধর পাল, পঞ্চাশোর্ধ এক গৃহস্থ। তিনি জমির মালিক, গ্রামের মধ্যে প্রভাবশালী। তিনি চা হাতে নিয়ে বললেন—
“আরে রঘুবর কাকা, এত হতাশ হবেন না। এবারের ভোটে কিন্তু পরিবর্তন হবেই। এবার অন্য দল আসবে, দেখবেন গ্রাম উন্নতি করবে।”

এ কথার সঙ্গে সঙ্গে অন্যদের মধ্যে তর্ক শুরু হল।
কেউ বলল—
“দল বদলালেই সবকিছু বদলাবে?”
কেউ বলল—
“আগেরবারও তো তাই ভেবেছিলাম, কিন্তু কিছুই হলো না।”

চায়ের দোকান গরম হয়ে উঠল তর্ক-বিতর্কে।

গ্রামের মহিলারা

এদিকে কিছু মহিলা হেঁটে যাচ্ছিল কলসি নিয়ে জল আনতে। তারা নিজেদের মধ্যে বলছিল—
“শুনেছিস? ভোটের আগে নাকি আবার রেশন কার্ডে চাল-ডাল বেশি দেবে।”
অন্যজন উত্তর দিল—
“এই সব তো শুধু ভোটের সময়। পরে আবার কিছুই থাকে না।”

এই আলাপচারিতা প্রমাণ করে, সাধারণ মানুষ রাজনীতিকে বুঝে, প্রশ্নও তোলে, কিন্তু তারা অসহায়ও।



অর্জুনের ভাবনা

অর্জুন এই তর্কগুলো শুনে মনের মধ্যে ভাবছিল—
“আমাদের গ্রামে কাজ নেই। আমি মাস্টার্স পাশ করেছি, কিন্তু চাকরি পাইনি। বাবা কৃষিকাজ করেন, সংসার টানতে কষ্ট হয়। এই ভোট কি আমাদের ভবিষ্যৎ বদলাতে পারবে?”

সে অনুভব করে তার বয়সী বহু ছেলেমেয়েই শহরে চলে গেছে চাকরির খোঁজে। যারা গ্রামে আছে, তারা বেকারত্ব আর হতাশার মধ্যে দিন কাটাচ্ছে।


গ্রামের রূপ

গ্রামটা দেখতে সুন্দর। সকালের আলোয় মাঠের সবুজ শস্য দুলছে, দূরে দেখা যাচ্ছে নারকেল গাছের সারি। মেয়েরা নদীতে কাপড় কাচছে, বাচ্চারা দৌড়ে বেড়াচ্ছে।

কিন্তু প্রকৃতির এই সৌন্দর্যের মাঝেই লুকিয়ে আছে ভয়। কারণ গ্রামে গোষ্ঠীভিত্তিক রাজনৈতিক বিভাজন গভীর। একদিকে শাসক দলের লোকজন, অন্যদিকে বিরোধী। দু’দলের মধ্যে সবসময় উত্তেজনা, প্রায়ই হাতাহাতি বা ঝগড়া হয়।


রাজনৈতিক প্রভাব

নির্বাচনের আগে প্রতিটি গলিতে ব্যানার-পোস্টার লাগানো হয়েছে। দেয়ালজুড়ে দলীয় স্লোগান। গ্রামের মাটিতে যেন রঙের যুদ্ধ চলছে।

কোনো বাড়িতে শাসক দলের পতাকা উড়ছে, আবার পাশের বাড়িতেই বিরোধী দলের। এর ফলে অনেক পরিবারেই ভাঙন ধরেছে।

শশধর পাল একদিন চায়ের দোকানে গর্ব করে বললেন—
“আমাদের পরিবার সবসময় এই দলে আছে। এবারও সবাই ওই দলে ভোট দেবে।”
তখন পাশ থেকে কৃষক গোপাল বললেন—
“তা তোমাদের পরিবারে আছে, কিন্তু আমার ছেলে এবার অন্য দলে কাজ করছে।”
এতেই বড় ঝগড়া বেঁধে গেল।


বুড়োদের আক্ষেপ

বৃদ্ধরা প্রায়ই বলেন—
“আগে রাজনীতি মানে ছিল মানুষের সেবা। এখন মানে শুধু ক্ষমতার লড়াই। নেতা আসে, নেতা যায়, কিন্তু গরিবের দুঃখ যায় না।”

তাদের মুখে হতাশা। তারা বোঝে, আজকের রাজনীতি যেন এক অদ্ভুত খেলায় পরিণত হয়েছে, যেখানে সাধারণ মানুষ শুধু প্যাদা।


তনয়ার আবির্ভাব

এই সময় গল্পে প্রবেশ করে তনয়া, গ্রামের এক স্কুলশিক্ষিকা। সে অর্জুনের ঘনিষ্ঠ বন্ধু।

তনয়া সবসময় সমাজের প্রতি দায়িত্বশীল। সে শিশুদের পড়ায়, তাদের স্বপ্ন দেখতে শেখায়।

সেদিন চায়ের দোকান ছেড়ে অর্জুন আর তনয়া হাঁটছিল নদীর ধারে। তনয়া বলল—
“অর্জুন, তুমি এত চুপচাপ কেন?”
অর্জুন বলল—
“ভাবছি, ভোটে কী আসবে আমাদের ভাগ্যে। চাকরি নেই, উন্নতি নেই, সবকিছু স্থবির।”
তনয়া উত্তর দিল—
“কিন্তু পরিবর্তন আমাদেরই আনতে হবে। শুধু নেতাদের ওপর ভরসা করে কিছু হবে না।”

এই কথায় অর্জুন একটু চমকে উঠল।

সন্ধ্যা নামতে শুরু করেছে। আকাশ লালচে হয়ে উঠেছে। দূরে মাইকে বাজছে নির্বাচনী গান—
“একবার ভোট দিন, উন্নতি হবে।”

অর্জুন আকাশের দিকে তাকিয়ে ভাবে—
“এই স্লোগানের আড়ালে কি সত্যিই আমাদের স্বপ্ন লুকিয়ে আছে, নাকি এ শুধু প্রতিশ্রুতির খেলা?”

এভাবেই প্রথম অধ্যায় শেষ হয়—
গ্রামের সকাল থেকে দিনের শেষে “ভোটের গন্ধ” মানুষের আশা, হতাশা আর দ্বন্দ্বকে তুলে ধরে।