Meditation in Bengali Motivational Stories by KRISHNA DEBNATH books and stories PDF | আধুনিক যুগের ধ্যান

Featured Books
Categories
Share

আধুনিক যুগের ধ্যান

ধ্যান শব্দটি শুনলেই আমাদের চোখের সামনে ভেসে ওঠে এক প্রাচীন ছবি— একজন সন্ন্যাসী পদ্মাসনে বসে আছেন, বনভূমির গভীর নীরবতায়। চোখ বন্ধ করে একেবারে আত্মমগ্ন।কিন্তু সময়ের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে এখন ধ্যানের প্রকৃতি এবং অর্থ দুটোই বদলে গেছে। এখনকার যুগে, যেখানে প্রতিদিন মানুষ ছুটছে চাকরি, প্রযুক্তি, কাজ, অর্থ আর সম্পর্কের টানাপোড়েনে, সেই অবস্থায় ধ্যান আর কোনো সাধক জীবনের বিলাসিতা নয়, বরং মানসিক ও আধ্যাত্মিক সুস্থতার অপরিহার্য ভিত্তি হয়ে দাঁড়িয়েছে।আজকের যুগে ধ্যানের আসল অর্থ হলো— দৈনন্দিন জীবনের সঙ্গে সম্পূর্ণ সচেতনভাবে একাত্ম হয়ে যাওয়া।

আসুন বর্তমান সময়ের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ ধ্যানের পর্যায়গুলো সম্পর্কে কিছু আলোচনা করা যাক।

১. Mindfulness (সচেতনতা) : আগে ধ্যান মানে ছিল— চোখ বন্ধ করে বসা, বাইরের জগত থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে থাকা। কিন্তু এখন ধ্যান মানে হলো— প্রতিটি কাজকে পূর্ণ মনোযোগ দিয়ে করা। খাবার খাওয়ার সময় শুধু খাওয়া— প্রতিটি কণার স্বাদ, গন্ধ, অনুভূতি উপলব্ধি করা। হাঁটার সময় শুধু হাঁটা— পায়ের তালুর স্পর্শ, বাতাসের ছোঁয়া, শরীরের নড়াচড়া অনুভব করা। কারো সঙ্গে কথা বলার সময় শুধু তার দিকে মনোযোগ— ফোন দেখা নয়, মাথায় অন্য চিন্তা আনা নয়।আধুনিক ধ্যান তাই আলাদা কোনো কাজ নয়, বরং বর্তমান মুহূর্তগুলোর মধ্যে পুরোপুরি ডুবে থাকা।

২. Witnessing (সাক্ষী থাকা) : আমাদের মন অবিরাম দৌড়ায়— অতীতের স্মৃতি, ভবিষ্যতের চিন্তা, অস্থিরতার ঢেউ। পুরোনো ধারণা ছিল, ধ্যান মানে মনকে থামিয়ে রাখা। কিন্তু আজকের যুগে ধ্যানের আসল শিক্ষা হলো— মনকে থামানো নয়, বরং মনকে পর্যবেক্ষণ করা। রাগ ওঠেছে ? চেপে ধরো না, কেবল দেখো— রাগ উঠছে। দুঃখ এসেছে ? অস্বীকার কোরো না, দেখো— হৃদয় ভারী হয়ে যাচ্ছে। আনন্দ এলো ? আঁকড়ে ধরো না, তাকাও— মুখে হাসি ফুটছে।

তুমি যদি এইভাবে মনকে “দেখতে” শেখো, তবে তার ওঠানামা তোমাকে আর বাঁধতে পারবে না।এটা অনেকটা সিনেমা দেখার মতো— পর্দায় যা-ই ঘটুক, তুমি জানো সেটা শুধু চলচিত্র ছাড়া আর কিছুই নয়।

৩. Integration (মিলিয়ে নেওয়া) : আজকের ধ্যান মানে শুধু পাহাড়ে গিয়ে যোগী হওয়া নয়।বরং ধ্যান হলো তোমার প্রতিদিনের কাজের ভেতর প্রবাহিত অভিজ্ঞতার এক কেন্দ্রীভূত স্রোত। কবিতা লেখা, সংগীত শোনা, শরীরচর্চা— সবই ধ্যান হতে পারে, যদি তুমি তাতে পূর্ণভাবে নিমগ্ন থাকো। অফিসের কাজের চাপের মাঝেও ২ মিনিট চোখ বন্ধ করে শ্বাসের প্রবাহ অনুভব করা— এটাই ধ্যান। বন্ধু বা প্রিয়জনের সঙ্গে মনের কথা বলার সময় সম্পূর্ণ উপস্থিত থাকা— এটাও ধ্যান।

আধুনিক ধ্যান মানে হলো— ধ্যানকে জীবনযাপনের ভেতর মিশিয়ে দেওয়া, তাকে আলাদা করে না দেখা। কারণ আমরা জানি যে আমাদের মনের প্রক্ষোভগুলিকে ব্যালান্স রাখতে হলে এবং মনের স্ট্রেসকে কন্ট্রোল করতে হলে ধ্যানের কোনো বিকল্প নেই। কিন্তু আগেকার দিনের মতো চোখ বন্ধ করে বসে বসে ধ্যান করা এখন অনেকের পক্ষেই সম্ভব নয়। তাই যুগের সাথে তাল মিলিয়ে ধ্যানকেও আধুনিক ভাবনায় জীবনের অঙ্গ করে তুলতে হবে।

তবে চুপচাপ চোখ বন্ধ করে বসার কি কোনো প্রয়োজন নেই ? অবশ্যই এরও প্রয়োজন আছে। আমরা সারাদিন সংসারের সকলের জন্য ব্যস্ত হয়ে থাকি, পরিশ্রমের মধ্যে ডুবে থাকি। নিজের সঙ্গে কথা বলি কি আমরা ? নিজের সঙ্গে সঙ্গ করা, নিজের সঙ্গে কথা বলা, নিজের কষ্টগুলো, নিজের আনন্দগুলো, নিজের আবেগগুলোকে নিজের সঙ্গে শেয়ার করার সবচেয়ে সহজ উপায় হলো কিছুক্ষণ চুপচাপ বসে সময় কাটানো। সেটা হোক ভোরবেলা, নয়তো ঘুমোতে যাওয়ার আগে; চেষ্টা করুন কিছুক্ষণ একা একা বসে নিজের সঙ্গে নিজেকে একাত্ম করে নিতে। কিছুদিনের মধ্যেই এর সুফল বুঝতে পারবেন।

সেই পুরনো যুগে ধ্যান ছিল “অভ্যাস” (practice)— নির্দিষ্ট সময়ে নির্দিষ্ট ভঙ্গিতে কিছু করা।আজকের যুগে ধ্যান হলো “অভিজ্ঞতা” (experience)— যে কোনো কাজকে পূর্ণ সচেতনতা দিয়ে করা। ধ্যান মানে শুধু বসা নয়, ধ্যান মানে উপস্থিত থাকা। ধ্যান মানে চোখ বন্ধ করা নয়, ধ্যান মানে চোখ মেলে মুহূর্তকে দেখা।