Jongoler Prohori - 29 in Bengali Thriller by Srabanti Ghosh books and stories PDF | জঙ্গলের প্রহরী - 29

Featured Books
Categories
Share

জঙ্গলের প্রহরী - 29

জঙ্গলের প্রহরী

পর্ব - ২৯

❤♣❤♣❤♣❤

গাড়ি ঘুরিয়ে নেমে এসে বাংলোর কাছাকাছিই অপেক্ষা করছিল ঋষি। হেডলাইট নেভানো, কৃষ্ণা অষ্টমী তিথিতে গাছের ছায়ার আড়ালে গাড়ি রেখেছে ও। হাতি, চিতাবাঘ এবং শীতঘুমে যাওয়ার আগে খাবার খোঁজা সাপের ভয়ে, ওদের মতো যাদের শিয়রে শমন, এমন হাতে গোণা কয়েকটি লোক ছাড়া কেউ পথে বেরোবে না এখন। তবে কাঁচতোলা গাড়িতেও শীত করছে ঋষির। পল্টনকে বাড়িতে রেখে হেঁটে গাড়িতে ফিরে আসার দায়িত্ব নিয়েছে শাক্য, কারণ বন্যপ্রাণীদের সম্পর্কে সবচেয়ে অভিজ্ঞ ও। 

শাক্য এসে গাড়ির কাছে দাঁড়ানো মাত্র ঋষি চিনতে পারে। তবুও অপেক্ষা করে কাঁচের জানালায় ওদের ঠিক করা নির্দিষ্ট সংখ্যক টোকার সংকেতের জন্য। ঋষি দরজা খুলতে শাক্য পিছনের সিটে ওঠে, কারণ অন্যপাশে খাদ। দরজা তখনও বন্ধ হয়নি, গাড়ির চালে গুরুভার কিছু পড়ার শব্দ। দুজনেই চমকে যায়, তবে দুরকম অর্থ করে ঘটনার। 

শাক্য সেকেন্ডের আগে দরজা টেনে বন্ধ করে চাপাস্বরে বলে, "ঋষি, ফাস্ট, স্টার্ট দাও। তবে জোরে চালাবে না। হেডলাইট জ্বেলো না।"

গাড়ি স্টার্ট দিয়ে ঋষি বলে, "চালে বোধহয় গাছের ডাল ভেঙে পড়ল। আমি তো হঠাৎ চমকে গেছিলাম।"

শাক্য পিছন থেকে ওর কাঁধে হাত রাখে, "ঋষি, বি কুল, গাড়ির চালে পাইথন। পাখি খেতে গাছে ছিল। ঐজন্য ওজনটা ছড়িয়ে গেছে। গাছের ডাল হলে নিচে পড়ত, বা একধারে ভারী হয়ে থাকত। পাইথনটা চালেই আছে, এমনকি সামনের কাঁচ বেয়ে নামতে পারে। তোমাকেই নার্ভ ঠিক রাখতে হবে। কারণ এখন গাড়ি থামিয়ে আমি ড্রাইভিং সিটে যাওয়াও সম্ভব নয়।"

ঋষির হাত একবার কেঁপেছিল। পরমুহুর্তেই ও মন শক্ত করে। নিজেকে বোঝায়, সাপটা কাঁচে নেমে এলেও ওকে ড্রাইভ করতে হবে। একটাই ভয়, চোখ কুঁচকে সামান্য আলোয় সামনে তাকিয়ে ও বলে, "গাড়ির চাল বা কাঁচ ভেঙে ফেলতে পারবে না তো? আরেকটু পথ বাকি।"

- "না না। কত হবে? ফুট দশ বারো লম্বা, দশ বারো ইঞ্চি ব্যাসের একটা সাপ হবে। এই কাঁচ ভাঙতে পারবে না।"

ওকে সাহস দিতে শাক্য সাপটার যা বর্ণনা দেয়, তাতে বরং ঋষি আরও নার্ভাস হয়ে যায়। 

তবে ওদের কপাল ভাল, সাপটা গাড়ির সামনের দিকে নামার চেষ্টা না করে পাশের দিকে বোধহয় মুখ বাড়িয়েছিল, হঠাৎ ঝাঁকুনিতে ছিটকে পড়ে যায় গাড়ি থেকে। ঋষি আবার চমকে ওঠে, সামলেও নেয়। 

শাক্য রিল্যাক্স হয়ে হেলান দেয়, "যাক বাবা, সাপটা পড়ে গেছে।" 

এই ঠান্ডাতেও জামার হাতায় কপালের ঘাম মোছে ঋষি। তবে গাড়ি থামায়নি বা স্পীড কমবেশি করেনি। বাকি পথটাও একইরকম ঘন্টায় দশ কিলোমিটার স্পীডে চালিয়ে ও আরও পনেরো মিনিট পর বাংলোর সামনের গেটে আসে। 

কথা ছিল, সিদ্ধার্থকে ফোন করে ঋষিই নেমে গেট খুলবে। এবার দেখা গেল, গেট খোলা। শাক্য এমনিতেই ঋষির ছায়া হয়ে বসে ছিল, এখন চাপাগলায় ঋষি গেট খোলা বলতেই ও সিট থেকে নেমে পা রাখার স্পেসটায় বসে পড়ে। ঋষি গেট দিয়ে গাড়ি ঢোকায়, পরম মমতায় নিজের হোলস্টারে হাত বুলিয়ে সিদ্ধার্থকে ফোন করে। বাংলোর হাতায় গাড়িটাকে দেখেই বুঝেছে কে এসেছে। 

❤♣❤♣❤♣❤

সিদ্ধার্থ ফোন ধরেই বলে, "পল্টনকে খুঁজে পেলি? কোথায় ছিল? নিয়ে আয় এখানে। তাপসও বসে আছে ওকে পাওয়া যাচ্ছে না শুনে।"

ক্লান্তগলায় ঋষি বলে, "দাদা দরজা খোলো। পল্টনকে পাইনি। আমি বিরাট বিপদে পড়েছিলাম।" 

গাড়ির চাবিটা খুলে শাক্যর কোলে দিয়ে দরজাটা শুধু চেপে বন্ধ করে নেমে যায় ঋষি, একবারও পিছনে ফিরে গাড়ির দিকে তাকায় না। হোলস্টারটা আছে ওর জামার তলায়, বাঁ দিকে, স্ট্র্যাপ দিয়ে কাঁধের সঙ্গে বাঁধা। সেটাতেও হাত দেয়না, বরং ঘাড়টা ডলতে ডলতে বারান্দায় ওঠে, দরজা খুলে ধরে তাপস। 

ও ঢুকতেই সিদ্ধার্থ উঠে আসে, "কি হয়েছে তোর? এরকম লাগছে কেন? বড় মুখ করে গেলি, পল্টন আর কতদূর যাবে, এখানেই আছে। ধরে নিয়ে আসবি বলে গেলি। ফিরলি উলটো এরকম শুকনো মুখ করে, ঋষি কি হয়েছে?"

বিচলিত সিদ্ধার্থর কাঁধে হাত রাখে ঋষি, "উপরের বাঁক পর্যন্ত গেছি। পুরো রাস্তা ফাঁকা। আরও উপরে, আরও জঙ্গুলে জায়গায় এইরাতে গাড়ি থেকে নামা সম্ভব নয়। তাই ফিরেই আসছিলাম। আমার গাড়ির চালে একটা পাইথন পড়েছিল।"

- "হোয়াট? পাইথন? কি বলছিস?" সিদ্ধার্থ চেঁচিয়ে ওঠে। 

- "হ্যাঁ দাদা পাইথন। এই রাতে আর বাইরে থাকা ঠিক নয়। পল্টনকে ছাড়ো। এই জঙ্গলে কিছু ঘোটালা আছে। সব পশুপাখি উলটো পালটা কাজ করছে।"

সিদ্ধার্থ ঋষির হাত ধরে বলে, "তোর হাত তো একদম ঠান্ডা হয়ে গেছে। থ্যাঙ্ক গড, তুই ফিরে আসতে পেরেছিস। আয় আয় এখানে বোস।"

- "স্যার, বলছিলাম ঋষিস্যার একদম কাবু হয়ে গেছেন। ওকে একটু ডক্টর'স ব্র্যান্ডি খাওয়ালে ভাল হতো। আপনাদের কাছে আছে?" তাপস উদ্বিগ্ন হয়ে ওঠে। 

- "না, কোনো রকম স্পিরিটই কিছুই নেই এখানে।" সিদ্ধার্থ আপশোষে মাথা নাড়ে। 

- "আমি তো স্যারের গাড়িটা নিয়ে এসেছি। এটাতে একটা ছোট্ট রামের বোতল আছে, তাতে কয়েক আউন্স এখনও আছে। আমি নিয়ে আসব?"

"রাম?" সিদ্ধার্থ এমনভাবে নাক কুঁচকোয়, যেন পচা ইঁদুরের গন্ধ পাচ্ছে, "তাতে কি হবে? ওর তো ঘুম পেয়ে যাবে?"

[ ❤ সিদ্ধার্থ আহত, ঋষি ঘাবড়ে গেছে, ঘরের ভিতরে তাপস আর বাইরে শাক্য। এবার কি জানা যাবে প্রকৃত অপরাধী কে? 

❤ জানা যাবে পরের পর্বে। অনেক ধন্যবাদ এই পর্বটি পড়ার জন্য। আপনার মতামতের অপেক্ষা করছি। দয়া করে মন্তব্য করে জানাবেন। ]

চলবে