Jongoler Prohori 39 in Bengali Thriller by Srabanti Ghosh books and stories PDF | জঙ্গলের প্রহরী - 39

Featured Books
Categories
Share

জঙ্গলের প্রহরী - 39

জঙ্গলের প্রহরী

পর্ব - ৩৯

♥♠♥♠♥♠♥

সব ভাল যার শেষ ভাল। সন্ধ্যা হচ্ছে, সকলকে ফিরতে হবে। পুলিশের কর্তাব্যক্তিরা আর সঙ্কর্ষণবাবুর পরিবার তো বটেই, সিদ্ধার্থ আর ঋষির জন্য এ্যালট করা বাংলোয় সিদ্ধার্থর বাড়ির সবার জায়গা হবে না। তাই ওরাও নেমে গিয়ে স্টেশনের কাছে হোটেলেই থাকবে। সবাই উঠে পড়েছে, এ ওর কাছে বিদায় নিচ্ছে, আগামীকাল কে কখন কোন কাজ সারবে, সেসব অফিশিয়াল কথাও এগিয়ে রাখছে কেউ কেউ। 

সিদ্ধার্থ আর তথাগতর সঙ্গে গল্প করছে শৌর্য্য আর বৈদুর্য্য। পাশেই দাঁড়িয়ে ওদের মা অপর্ণাদেবী খুবই আদর করছেন তথাগতর স্ত্রী রাজশ্রীকে। সঙ্গে আক্ষেপও চলছে, এমন খালি হাতে বৌমাকে দেখলেন বলে। শৌর্য্যও বিবাহিত, তার স্ত্রী সন্তানসম্ভবা, তাই আসেনি এখানে। সেসব গল্প হচ্ছে। 

সবই শুনছে, কিন্তু মাথায় ঢুকছে না সিদ্ধার্থর। ওর একবার শুক্লার সঙ্গে কথা বলা দরকার ছিল। গতকাল বলেছিল, আজ কথা বলবে। দুজনের যা যেটুকু কথা হয়েছিল, তারপর অনেক জল বয়ে গেছে তিস্তায়। এমনকি কেসের আর পরিবারের হারিয়ে যাওয়া শাখার খোঁজ পাওয়ার জন্য সিদ্ধার্থ শুক্লার গোপন কথাও সকলের সামনে, শুক্লাকে বসিয়ে রেখে বলতে বাধ্য হয়েছে। এরপর শুক্লার সঙ্গে একবার কথা না বলে, শুক্লা এখন কি ঠিক করল, নিজের কানে না শুনে কি করে চলে যায়? এদিকে এত লোকজনের মাঝখানে ! 

শৌর্য্যকে একমিনিট বলে শুক্লার বন্ধুদের বৃত্তের একপাশে এসে দাঁড়ায় ও। সিদ্ধার্থর পরিচয় এই ছেলেমেয়েদের উচ্ছ্বাস বন্ধ করে দিয়েছে। চুপচাপ দাঁড়িয়ে ছিল সব। সিদ্ধার্থ নিজেই ওদের দিকে এগিয়ে যেতে অস্বস্তিতেও পড়ে যায় সবাই। 

ওরা কি বলবে ঠিক করার আগেই সিদ্ধার্থ বলে, "এখন আর বাইরের খারাপ লোকের উৎপাতের ভয় নেই। ফলে জঙ্গলের প্রাণীরা শান্তিতে থাকবে আশা করি। আর শাক্য আছে, ফরেস্ট গার্ডরা আছে। এবার তোমরা সবাই খুব ভাল করে বেড়াতে পারবে, জঙ্গলেও।"

সহজ কথায় সবাই কলকলিয়ে ওঠে, সিদ্ধার্থ কেমন আছে জানতে চায়। সিদ্ধার্থর চোখ দেখে নিয়েছে, শুক্লাও প্রশ্ন করেছে। সকলের মুখের দিকে পালা করে তাকিয়ে ভাল আছে বলে ও। মনে মনে ভাবে, যাক শুক্লার কথার উত্তর তো দিতে পারলাম। 

মণীষা জানতে চায়, "আপনি আর ঋষিদা একেবারেই চলে যাচ্ছেন? নিচের হোটেল থেকেই ফিরে যাবেন? 

- "ঠিক বলতে পারছি না। আসলে এখন দুদিন প্রচুর চাপ আছে আমাদের। এবার আমাদের কেসটা সাজিয়ে দিতে হবে জাজের সামনে। চার্জশিটে যদি একটুও খুঁত থাকে, ওদের দিকে যে ল ইয়ার দাঁড়াবে, সে ড্যাং ড্যাং করে ওদের বের করে নিয়ে যাবে। আমাদের সব পরিশ্রম জলে যাবে। তার সঙ্গে মিডিয়ার গাল তো আছেই। এন্ড ইটস এ টীমওয়ার্ক। আমাকে তাই উপস্থিত থাকতেই হবে সবার সঙ্গে।" সিদ্ধার্থ বুঝতে পারে, ওর কথা শুনে শুক্লার মুখটা কালো হয়ে যাচ্ছে। 

এদিকে রাজীব এগিয়ে এসে ওর দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়েছে, "কনগ্র্যাচুলেশনস। আপনি তো সব হিসেব ওলটপালট করে দিলেন। ফ্রেন্ডস?"

- "ইয়েস, অফকোর্স। আমরা সবাই তো বন্ধুই। আবার নিশ্চয়ই আপনার সঙ্গে দেখা হবে।" রাজীবের হাতটা মুঠো করে ধরে ঝাঁকায় সিদ্ধার্থ। 

- "হ্যাঁ, সিদ্ধার্থদা, কলকাতায় ফিরে গিয়ে নিশ্চয়ই দেখা হবে। আপনার বোনের সঙ্গে আলাপ করাবেন না?" মণীষাও রাজীবের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। 

- "হ্যাঁ হ্যাঁ, ওর সঙ্গে আলাপ করে নাও। তোমাদের ব্যাচমেট। ভাল লাগবে ওর। সোমা, এখানে আয়।" 

সোমাকে ডাকা মাত্র সে "কি রে সোনাদা" বলে মায়ের পাশ থেকে এদিকে চলে আসে। রাজীবের গার্লফ্রেন্ডের খবরে যথেষ্ট উৎসাহ আছে ওর নিজেরই। 

সিদ্ধার্থ সবার নাম বলে ওর সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয় ছেলে মেয়েদের। অমনি সবাই প্রায় একসঙ্গে কথা শুরু করে দেয়, তোমাকে তো দেখেছি, তুমি কোন ডিপার্টমেন্ট, স্যার আপনি দারুণ গান করেন, তোমার দাদাও তো খুব ভাল গান করে, তুমি দাদাকে সোনাদা বলো, মাই গড তোমার ওরকম ড্যাশিং ফাইটার দাদার নাম সোনাই? 

সবাই চোখ কপালে তুলে ফেললেও সোমা নির্বিকার, "হ্যাঁ, দাদাভাইয়ের ডাকনাম তাতাই। আর সোনাদার নাম সোনাই। মা ডাকে এই নামে।" মেয়েরা শুধু নয়, শমীকও হেসে ফেলে এমন হিরোমার্কা ইনটেলিজেন্স অফিসারও বাড়িতে সোনাই শুনে। 

সিদ্ধার্থ তখন জমিদারবাড়ির সামনে গিয়ে দাঁড়িয়েছিল। একরকম ভাবে নিজের জীবন, তার প্রায়োরিটি সেট করে নিয়েছিল ও। এই কেস সব এলোমেলো করে দিল। সব রহস্যের সমাধান হয়েছে। অপরাধীর শাস্তি শুধু প্রোসেসিং মাত্র। কেসের সমাধানের সঙ্গে রঙ্গিলার প্রাণ বাঁচানোর জন্যও এখানকার মানুষ ওকে হয়ত মনে করে রাখবে। কিন্তু ওর নিজেরই তো এখানেই থাকার কথা ছিল। অভয় ধরের জন্য একবার ওর পরিবার ভেঙে গেছে। এটুকুই ওর সান্ত্বনা, তার বংশধরকে অন্ততঃ দেশদ্রোহিতার জন্য আইনের হাতে তুলে দিতে পেরেছে। 

তারপর? এখন কি হবে ওর জীবনে? 

[ ❤ সব রহস্যের সমাধান হওয়ার পরও কি সামান্য একটুখানি দ্বিধা সিদ্ধার্থ আর শুক্লাকে দূরে দূরে রেখে দেবে? 

❤ জানা যাবে পরের পর্বে। অনেক ধন্যবাদ এই পর্বটি পড়ার জন্য। আপনার মতামতের অপেক্ষা করছি। দয়া করে মন্তব্য করে জানাবেন। ]