আজ কলেজে তেমন কোন দরকারে ক্লাস ছিল না তাও মনে হলো নিজের চেনা এই কলেজটাকে পরে অনেকদিন দেখতে পাবো তো তাই চলেই এলাম কলেজে। কলেজে এসে দেখি ফার্স্ট ইয়ারের ক্লাস পুরো ফাঁকা। মাত্র দু জন এসেছে। তাদের সাথে আমার আবার ঠিক খাপ খায় না ওরা যদি বলে ডান দিক তবে আমি বলি বাঁ দিক তাই আমি ওদের থেকে কিছুটা সরে জানালার ধারে একটা বেঞ্চে বসলাম আমি আপন মনে জানালার দিকে তাকিয়ে রয়েছি বাইরের দৃশ্য দেখছি পুরো ঘন মেঘে ছেয়ে আছে এই দেখেই সময় কাটাচ্ছি হোস্টেলেও যেতে পারছিনা লাস্ট পিরিয়ডে আবার একটা ক্লাস রয়েছে
| আজকে রাতে ট্রেনে করে আমার দীর্ঘ ৬ মাস পরে বাড়ি ফেরার কথা সেজন্য মনটা একটু বেশিই বাড়ি বাড়ি করছে।
যাই হোক অনেক কষ্ট করে সারাদিনটা কলেজে কাটিয়ে লাস্ট ক্লাসটা করে হোস্টেলে ফিরলাম বাড়ি ফিরে কোনভাবে খেয়ে দেয়ে একেবারে তাড়াতাড়ি করে বেরিয়ে পড়লাম। স্টেশন যে বাড়ি থেকে বেশি দূর ঠিক তাও নয়। অটোতে কুড়ি মিনিট মতো গেলেই স্টেশন তা সত্ত্বেও কেন জানিনা ট্রেন আসার দু'ঘণ্টা আগেই স্টেশনে পৌছালাম বোধহয় মনটা বাড়ি ফেরার জন্য একটু বেশি আনচান করছে। ট্রেন সেই রাত দশটায় আমি আর কি করবো স্টেশনের একটি বেঞ্চে বসে ফোন ঘাটছিলাম। হঠাৎ সামনে দিয়ে একটা ছায়া চলে গেল আমি এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখলাম কিছুই দেখতে পেলাম না | তার কিছুক্ষণ পরেই দেখি আমার পাশে একজন লোক এসে বসলো উনি ওনার মত বসে আছে আর এদিকে আমি ফোন ঘাঁটছি বেশ কিছুক্ষণ কেটে যাওয়ার পর উনি হঠাৎ আমাকে জিজ্ঞেস করলে " আপনি এত রাতে স্টেশনে কি করছেন"( বেশ গম্ভীরভাবে জিজ্ঞেস করল) আমি বললাম ''এইতো লাস্ট ট্রেনটা ধরবো তার জন্যই অপেক্ষা করছি '' উনি বললেন " ও আচ্ছা ও ট্রেন আপনাকে আর আর ধরতে হবে না আপনি বাড়ি চলে যান " এবার আমি ওনার কথায় বেশ রেগে মেগে উত্তর দিলাম " বাড়ি চলে যাব বলে নিশ্চয়ই এখন স্টেশনে আসেনি আর তাছাড়া আমি কি করব না করব সে কৈফিয়ত আপনাকে দেবো কেন?" উনি বললেন " না তা আমাকেও দেবেন কেন তবে মনে রাখবেন রাত্রিবেলা এখানে স্টেশনে বেশি কেউ আসে না রাত্রিবেলায় এ জায়গাটা ভালো নয় এবার দেখুন আপনি কি করবেন " এই বলে লোকটা চলে গেল-
আমি ওনার কথাগুলো যেন শুনলামই না নিজের মনে ফোন ঘাটতে থাকলাম। তারপর এক ঘন্টা মত কেটে যায় হঠাৎ এনাউন্স করল " যাত্রীগন ক্রিপিয়া ধিয়ান দিজিয়ে গাড়িসংখ্যা ০৫৩২১৯২১০০ দিল্লি জানে বালি ইয়ে ট্রেন চার ঘান্তে লেট আয়েগি" ব্যাস আবার কি তাহলে এখন চার ঘন্টা অপেক্ষা কর বাড়িতে একটা ফোন করে বরং বলে দি যা, ফোনে তো চার্জ নেই.. ফোন তো বন্ধ হয়ে গেল। বাড়ি যাওয়ার এত তাড়া যে ফোনে চার্জ দিতেই ভুলে গেছি। ফোন ঘাটতে থাকায় এতক্ষণ স্টেশনটা কে ঠিক করে দেখিনি এখন দেখছি আমার সেই চেনা স্টেশনটাকে কেমন যেন অচেনা লাগছে যদিও এত রাতে কখন স্টেশনে আসেনি স্টেশনের দূর দুরান্ত পর্যন্ত পুরো ঘুটঘুটে অন্ধকার স্টেশন কোন জনমানব নেই শুধু পাশ থেকে শিয়াল কুকুরের ডাক শুনে যাচ্ছে একা বসে থাকতে থাকতে কখন ঘুমিয়ে পড়েছিলাম জানিনা হঠাৎ একটা অদ্ভুত ডাকের আওয়াজ যে ঘুম ভাঙলো।" জল জল কেউ আছেন কেউ আছেন আমাকে একটু জল দিন না আমি বড় তৃষ্ণার্ত" এই আওয়াজটা শুনে মনে হল ডান দিক থেকে আসছে, ঘুরে ডান দিকের তাকাতে গিয়েই দেখি দূরে একটা বেঞ্চে একজন চাদর মুড়ি দিয়ে শুয়ে আছে হাত বের করে আছে দেখে মনে হলো সেই জল চাইছে আমি তার দিকেই ব্যাগ থেকে জল টা নিয়ে এগোতে যাব ঠিক তখনই দেখি স্টেশনে ট্রেন হাজির খবর হলো ৫ মিনিটের মধ্যেই ট্রেনটা ছেড়ে দেবে আমি তাড়াতাড়ি করে জলটা নিয়ে আমি ওনার দিকে এগোচ্ছি এমন সময় হঠাৎ কিসে একটা হোঁচট খেয়ে আমি মাটিতে পড়ে গেলাম। তারপর খেয়াল করে দেখি যে লোকটা আমাকে তখন সাবধান করছিল সেই লোকটাকে কেউ মেরে দিয়ে চলে গেছে, অথচ আমি তো বেশি দূরে ছিলাম না আমি তো কিছুই দেখতে বা শুনতে পাইনি। দেখে মনে হচ্ছে কেউ তাকে গলা টিপে মেরেছে। আমার এবার সত্যিই ভয় করতে লাগলো আমি ওনাকে কোনভাবে জলটা দিয়ে ট্রেনে উঠে যাব ভাবনা। কিন্তু সামনে এগো তেও আমার ভয় লাগছে ভয়ে ভয়ে তৃষ্ণার্ত লোকটার দিকে এগোলাম জলটা ওনার হাতে দিতে যাব ঠিক তখনই তার গায়ের চাদরটা মাটিতে পড়ে গেল সেই সময় আমি যা দেখলাম তা দেখে আমার হাত পা ঠান্ডা হয়ে গেল। আমি দেখলাম লোকটার বডি এর দিকে মাথাটা আরেক দিকে কাটা গলা থেকে অজস্র রক্ত ঝরছে, সে দেখে আমি কিছুক্ষণের জন্য স্তব্ধ হয়ে গেলাম দেখি সেই গলাকাটা দেহটা থেকে একটা হাত আমার দিকে এগিয়ে আসছে। আমার গলাটা ধরবে বলে। আমি প্রাণ পনে ছুটতে লাগলাম এদিকে ট্রেনটাও ইতিমধ্যে ছেড়ে দিয়েছে আমি তখন প্রাণপনে দৌড়ালো পেছন থেকে শুনতে পাচ্ছি" এই দাড়া দাড়া বলছি এইভাবে বেঁচে যাবি হয়ে ভেবেছিস আমিও একদিন বাঁচতে চেয়েছিলাম কিন্তু আমার আপনজনই আমাকে চলন্ত একটা ট্রেন দ্রুত গতিতে আসছে তার সামনে আমাকে হাত-পা বেঁধে ঠেলে ফেলে দিল সেই চলন্ত ট্রেনটা আমাকে পিষে দিয়ে চলে গেল আমি কাউকে ছাড়বো না রাতে এখানে যে আসবে তাকে আমি শেষ করে দেব পালিয়ে কতদূর যাবি ভেবেছিস তোকে আমি ধরবোই দাঁড়া দাঁড়া বলছি-ছি-ছি-ছি" আমি যেন আর দৌড়াতে পারছি না তাও প্রাণপণে দৌড়ে যাচ্ছি শেষ পর্যন্ত কোনভাবে আমি ট্রেনে উঠতে পারলাম ট্রেনটা দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলল। পেছনের সে ডাকো আমি আর শুনতে পাচ্ছি না তখন আমি ভাবছি আমার হয়তো এই মৃত লোকটার কথা শোনা উচিত ছিল উনি যখন আমাকে সাবধান করছিল তাহলে নিজে কেন এত রাতে স্টেশনে এসে ছিল ? এই কৌতুহলটাই আমাকে সারা জীবন তাড়া করে দেয় বেরোয়....।