Divorce - 6 in Bengali Motivational Stories by DR RAJESH CHOUDHURI books and stories PDF | বিবাহবিভ্রাট - 6

Featured Books
Categories
Share

বিবাহবিভ্রাট - 6

গ্রামের সাধারণ পরিবেশে বড় হয়ে উঠা, খুবই সাধারণ,অর্ধশিক্ষিত  গ্রাম্য মা-বাবার একমাত্র ছেলে পড়াশোনা শেষ  করে শহরে চাকরি করছে। মা-বাবার প্রতি সাংঘাতিক নিবেদিত প্রান,- তাদেরকে সুখে শান্তিতে রাখাই ছেলের মনের  একান্ত বাসনা।

কিন্তু শহুরে উচ্চশিক্ষিত বন্ধুবান্ধবদের সুন্দরী-স্মার্ট-উচ্চশিক্ষিত বউ দেখে নিজেও বিয়ে করার জন্য উচ্চশিক্ষিত-স্মার্ট-চটকদার সুন্দরী মেয়ে খুঁজতে থাকে,- স্ট্যাটাস রক্ষার উদ্দেশ্যে। সেই মুহুর্তে নিজের গ্রাম্য সহজ সরল মা-বাবা, নিজের গ্রাম্য আত্মীয় স্বজন, নিজের প্রকৃত অবস্থান ভুলে গিয়ে,- বন্ধুবান্ধবদের কাছে স্ট্যাটাস রক্ষাই বিয়ের একমাত্র উদ্দেশ্য হয়ে উঠে৷ চটকদার স্মার্ট সুন্দরীর স্বপ্নে ছেলে বিভোর হয়ে আছে।

কিন্তু বিয়ের পর সেই ছেলের মাতৃভক্তি-পিতৃভক্তি প্রবলভাবে মাথা ছাড়া দিয়ে উঠছে, নিজের গ্রাম্য আত্নীয় স্বজনের কাছে নিজেকে মহান প্রমান করার তাগিদ মাথায় কিলবিল করতে থাকে। আর,- তার শহুরে-স্মার্ট-উচ্চশিক্ষিত বউ গ্রামের সহজ সরল অর্ধশিক্ষিত শ্বশুর শাশুড়িকে খুব শ্রদ্ধা করবে, সেবাযত্ন করবে, গ্রামে গিয়ে গ্রাম্য আত্মীয় পরিজনদের সাথে খুব সুন্দর করে মানিয়ে চলবে, - এমনটাই ছেলের চাহিদা হয়ে উঠছে।

শালা,- জীবনটা কি প্রসেনজিতের বাংলা সিনেমা পেয়েছ? এইসব মেকী মাতৃভক্ত-পিতৃভক্ত ছেলেদের জন্য বহু মেয়ের জীবন নষ্ট হয়।

যে মেয়ে সারাজীবন শহরের প্রাচুর্যের মধ্যে বড় হয়েছে, উচ্চ শিক্ষিত মা-বাবার কাছে লালিত হয়েছে, নিজের শহুরে উচ্চশিক্ষিত আত্মীয় স্বজনের পরিমন্ডলে বড় হয়েছে, - সে বিয়ের পর গ্রামের অর্ধশিক্ষত শ্বশুর শাশুড়িকে খুব শ্রদ্ধাভক্তি করবে, সেবাযত্ন করবে,  সন্ধ্যা রায়ের মত ঘুমটা দিয়ে আদর্শ বধু হয়ে ঘরের কোনায় বসে থাকবে,- এমনটা যে ছেলে কল্পনা করে তারা মাথায় ঝাঁটার বাড়ি।

বিয়ের করার আগে বিয়ের উদ্দেশ্য সম্পর্কে সুস্পষ্ট কোন ধারনাই থাকেনা অধিকাংশ ছেলেমেয়ের।

কেউ বিয়ে করে স্ট্যাটাস রক্ষার জন্য,  কারো বিয়ের উদ্দেশ্য শ্বশুর বাড়ী হতে সম্পদ আহরন ( সাথে একটি বউ ফ্রী), কেউ বা জৈবিক তাড়না তৃপ্তির উদ্দেশ্যেই পাগল হয়ে বিয়ে করছে( ফর্সা-স্লিম-সুন্দরী হলেই হল), অনেকেই বিয়ে করে ডিগ্রীর সার্টিফিকেটকেই( মানুষটি যেমনই হোক),  কারো লক্ষ - বিয়ে করে বউয়ের বেতনে সারাজীবন আর্থিক নিশ্চয়তা, কারো লক্ষ শ্বশুরবাড়ীর ক্ষমতায় ক্ষমতাবান হউয়া। অনেকেই বিয়ে করে কোন কারন ছাড়াই,- সবাই বিয়ে করে, - তাই আমিও করব।

পরমপুরুষের কথায় বিয়ের উদ্দেশ্য হল,-" উন্নয়ন ও সুপ্রজনন।"  উন্নয়ন মানে,- সপারিপার্শ্বিক উন্নয়ন- শুধু নিজের ব্যাংক ব্যালেঞ্চের উন্নয়ন নয়। নিজের মা-বাবা, ভাই-বোন, পাড়া প্রতিবেশী, আত্মীয় স্বজন সকলে নিয়েই উন্নয়ন৷ তাই বিয়ের আগেই ভাবতে হবে,- আমি কেমন পরিবারের ছেলে, কি আমার প্রকৃত অবস্থান, কেমন আমার মা-বাবা-আত্নীয় স্বজন, কেমন আমার পরিবেশ-সংস্কৃতি-আচার-খাওয়া দাওয়া-অভ্যাস। যে মেয়েটিকে আমি বিয়ে করব বলে ভাবছি,- তার পারিবারিক স্থিতি, তার বেড়ে উঠার পরিবেশ, তার মা বাবা, তার আচার-সংস্কৃতি-অভ্যাস-শিক্ষা, তার পরিমন্ডল, তার বংশ,  তার বয়স আমার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ কিনা? এই সবকিছু মিলিয়ে বিয়ে করাকেই পরমপুরুষ বলেছেন Compatible marriage. এই বিয়েতে বিবাহপরবর্তী জীবন সুস্থির, শান্তিপূর্ণ, আনন্দময় হয়ে উঠে সাধারণত। তা নাহলে অশান্তির আগুনে জ্বলেপুড়ে মরতে হয় সারাজীবন।

বিয়ের আরেকটি উদ্দেশ্য, - সুপ্রজনন ( Good progeny).  প্রজনন ব্যাপারটি শুধুমাত্র মনের ভাব ও ভালবাসা দিয়ে সম্ভব নয়,- প্রয়োজন স্বামীর জিন এবং স্ত্রীর জিনের ক্রশিং। যেকোনো জিনের সাথে যেকোনো জিন ক্রশ হলেই উন্নত জিনের সৃষ্টি হবে,- তা নয়। রাস্তার নেড়ী কুকুরের জিনের সাথে ডোবারম্যানের জিন ক্রশ করালে উন্নত কুকুরের জন্ম আশা করা বৃথা। তাই বিয়ের পূর্বে আরেকটি লক্ষনীয় দিক হল,- Genetic Compatibility ( বংশগত সামঞ্জস্য)। এই বংশগত সামঞ্জস্যের জন্যই আর্য ঋষিগন স্ববর্ন স্ববংশের, - কিন্তু ভিন্ন গোত্রের বিয়ের কথা বলেছেন।

মানলে ভাল,- না মানলে যা হচ্ছে তাই হবে। দিন দিন ডাইভোর্সের সংখ্যা বাড়তেই থাকবে, সাংসারিক অশান্তিতে স্বামী-স্ত্রী দুইজনেই জ্বলেপুড়ে মরবে, বৃদ্ধাশ্রমে ভীড় বাড়বে, অশান্তি ভুলতে নেশাগ্রস্ততা বাড়বে, শ্রদ্ধাহীন অকর্মন্য মানুষের জন্ম হতে থাকবে, সমাজে দুর্নীতি  অপরাধ ব্যাভিচার বাড়বে থাকবে। আমরা শুধু কপালের দোষ দিতে থাকব।