— এক অদ্ভুত রাতে ঘটে যাওয়া এক বিস্ময়কর অভিজ্ঞতা
কলেজ জীবনের সেই দিনগুলোর কথা আজও স্মৃতিতে ভেসে ওঠে। বাড়ি থেকে কলেজ যাওয়ার পথটা ছিল দীর্ঘ — প্রায় ঘণ্টাখানেক ট্রেন যাত্রা। সপ্তাহের তিন দিন ক্লাস শেষে টিউশন পড়ে বাড়ি ফিরতাম, তখন রাত হয়ে যেত। প্রতিদিনের মতোই এক সন্ধ্যা। তবে সেই রাতে সবকিছু যেন অচেনা ঠেকছিল।
কলেজ থেকে বেরোতেই টিউশনে কিছুটা দেরি হয়ে গেল। টিউশন শেষে স্টেশনে পৌঁছে দেখি, প্ল্যাটফর্ম টা প্রায় ফাঁকা। মিটমিট করে কয়েকটা লাইট জ্বলছে। মনে হচ্ছিল, আমার ট্রেনটা বুঝি চলে গেছে। আকাশে তখন চাঁদ লুকোচুরি খেলছে মেঘের সাথে, আর বাতাসে একটা অজানা কাঁপুনি।
ঠিক তখনই মাইকে ঘোষণা — “চার নম্বর প্ল্যাটফর্মে ট্রেন আসছে।” হঠাৎ যেন বুকের ভার হালকা হয়ে গেল।
ব্রিজ থেকে নেমে প্ল্যাটফর্মে পৌঁছাতেই গার্ড সাহেব আমায় ডেকে বললেন, — “এতো রাতে কোথা ফিরছো? এতো দেরি কেন?” আমি একটু হেসে উত্তর দিলাম, “টিউশন শেষ করতে দেরি হয়েছে তাই,আজকে একটু দেরি হল।” তিনি বললেন, “ ঠিক আছে, কিন্তু ভবিষ্যতে দেরি হলে এই ট্রেনে উঠো না। দরকার হলে রাতটা এখানে কারোর বাড়িতে কাটিয়ে। ভোরের ট্রেনে চলে যাবে।” তারপর সস্নেহে বললেন, — “গাড়ীতে উঠে ভালো করে দরজা জানলা লাগিয়ে দেবে।”
আমি মাঝের ফাঁকা বগিটা তে উঠলাম। পুরো ট্রেনটাতে যেন নিঃসঙ্গতা গা ছমছমে বাতাসে মিশে আছে। দরজা জানলা বন্ধ করে আমি সিটে গা এলিয়ে দিলাম। সারাদিনের ক্লান্তিতে চোখ বুজতেই ঘুম চলে এল।
ঘটনার শুরু — সেই অদ্ভুত শব্দ...
হঠাৎ তীব্র এক আওয়াজে ঘুম ভেঙে গেল। আমি চমকে উঠলাম। চারপাশ নিস্তব্ধ, ট্রেন চলেছে নিজের গতিতে। সিট থেকে উঠে দেখলাম, ট্রেনের বগি ফাঁকা। কোথাও কেউ নেই। দরজাগুলো আমি নিজেই তো বন্ধ করেছিলাম... তাহলে এই শব্দ?
আবার সেই বিকট ধাক্কা! যেন কেউ ট্রেনের দরজায় ঘুষি মারছে, জোরে জোরে... বারবার...
আমি ভয়ে জিজ্ঞেস করলাম, — “কে?” কোনো উত্তর নেই।
আবার সেই ধাক্কা! এত জোরে যে মনে হচ্ছিল, দরজাটা এখনই খুলে যাবে!
বগির বাতি তখন হালকা ম্লান হয়ে এসেছে। বাইরে কালো অন্ধকারে কিছুই দেখা যাচ্ছে না, শুধু ট্রেনের চাকা ঘর্ষণের আওয়াজ আর সেই আতঙ্কঘন নীরবতা।
আমি চুপচাপ বসে ঈশ্বরের নাম নিতে থাকলাম। মিনিট কয়েক পর আওয়াজ থেমে গেল। ট্রেনের গতি কমতে লাগল। সাহস করে দরজার কাছে গিয়ে খুলে দেখলাম — বাইরে কেউ নেই। ট্রেন চলছে, কিন্তু কোথায় যাচ্ছি জানি না।
কে ছিল সেই রাতে?
ভেবে দেখলাম — যদি চোর হতো, ট্রেন থেকে নেমে যাওয়ার উপায় নেই। ট্রেন তো চলছিল ঝড়ের গতিতে!
আর যদি কোনো আত্মা...?
এরপর আর কোনো দিন দেরি হলে আর সেই ট্রেনে উঠিনি। বন্ধুদের বাড়িতে রাত কাটিয়ে ফিরেছি সকালে। আজও মাঝে মাঝে ঘুম ভেঙে ঐ বিকট শব্দটা কানে বাজে — ধড়াম... ধড়াম...
সেই ট্রেন, সেই বগি, সেই রাত — একটা ছায়া হয়ে আজও আমার সঙ্গে থেকে গেছে.।