Jharapata - 18 in Bengali Love Stories by Srabanti Ghosh books and stories PDF | ঝরাপাতা - 18

Featured Books
  • ईदगाह

    रमज़ान के पूरे तीस रोज़ों के बाद ईद आई है। गाँव में कितनी हल...

  • अदाकारा - 14

    अभिनेत्री 14*       "बताओ उर्मि।आज का क्या प्रोग्राम है? कहा...

  • जान तेरे नाम

    ⭐ कहानीफिल्म की कहानी एक कॉलेज कैंपस में पनपते प्यार और अहंक...

  • तुम्हारी चिट्ठी, मेरा इंतज़ार

    राधिका कॉलेज की लाइब्रेरी के उस कोने में बैठी थी जहाँ अक्सर...

  • अधूरा सच - 4

    अध्याय 4 – छुपे हुए चेहरेआरव पूरी रात सो नहीं पाया। उसका दिम...

Categories
Share

ঝরাপাতা - 18

ঝরাপাতা

পর্ব - ১৮

🌷🌿🌷🌿🌷🌿🌷

- "তোমাকে প্রথমদিনই বলেছিলাম, তুমি ভুল বুঝলে, ভাবলে আমি ওদের কিছু টাকা দিয়ে সব মেটাতে চাইছি। তা নয়, আমি যদি অত খারাপ হতাম, তুমিই এতকাল এত ভালবাসতে না।" রনি বলে যাচ্ছে পিউ শক্ত করে ওর কাঁধ ধরে আছে, রনির উপর রাগ করেছে, ওকে কিছুটা ইগনোর করেছে, ছেলেটা ভিতরে ভিতরে ক্ষয়ে যাচ্ছে, বুঝতে পারছে। মামনির সঙ্গে তো ওর আগের মতো সম্পর্ক ফিরে এসেছে, ভাইটা বড্ড একলা হয়ে গেছে ! 

- "আমি সত্যিই মিলির চিকিৎসার দায়িত্ব নিতে চাইছিলাম। প্রায়শ্চিত্ত বলো, প্রায়শ্চিত্ত, ওদের দরকার বলো দরকার। তোমরা সবাই ডাক্তারের কাছে গেছ, বলোতো, ওরকম চেম্বার, ব্যবস্থাপনা, থেরাপির জন্য কি নেই? থেরাপি রুমের দেয়ালের ছবিটা দেখেছ? ম্যূরাল বা ফ্রেস্কো, মানে কতটা খরচ করেছেন? কত খরচ করে ঐ পুরো ঘরটা বানানো হয়েছে? প্রত্যেক সেশনে তো দুজনকে এ্যাটেন্ড করছেনই, মাসে দুমাসে উনি এতগুলো লোকের সঙ্গে কথা বলছেন। পার সেশনে কত ফিজ লাগছে জানো বৌদি, ওরা কখনো বলেছে?"

পিউ আর বনি বুঝতে পারে, সত্যিই এদিকটা কখনো ভাবেইনি, "এগুলো নিয়ে কখনো কাকু কাকিমা কিছু বলেনি। আসলে মিলিও থাকে তো বাড়িতে।" পিউ বলে। 

- "ওরা বলবে না। আমাদের তো বলবেই না। অসুবিধাগুলো কি আমাদের বলবে নাকি? তায় টাকাপয়সার ব্যাপারে? ডক্টরকে মীট করেই আমি ওখানে বসেই প্রথম ভেবেছিলাম বাড়িতে এসে তোমাদের বলব, ওদের সঙ্গে কথা বলো। কিন্তু ডক্টর বললেন, বিয়েটাই...... " থুতনিতে হাত ঘষতে ঘষতে থেমে যায় রনি, আবার বলে, "কাকিমাও বলল, বিয়েটা তো টিঁকেই নেই। আর কি করে টাকার কথা বলি? বলার মতো সিচুয়েশন হয় কিনা, সবার সঙ্গে যে আলোচনা করব, আমাকে তোমরা একঘরে করে রেখেছ।"

- "ওসব ছাড় ভাই। এটা নিয়ে ভাব। কারণ এটা ঠিকই বলেছিস। এদিকটা ভাবা দরকার। এক কাজ করি, মাকেও বলি চ'। তারপর এই পুজো কাটলে একদিন বিজয়ার দেখা করতে গিয়ে, কি গো, ঠিক বলছি না?" বনি পিউয়ের দিকে ফেরে। 

- "ঠিকই বলেছ। ওরা হয়তো রাজি হবে না। আমরা চেষ্টা করে তো দেখি। চলো চলো নিচে চলো। মাকে বলি।" পিউ উঠে পড়ে। 

মণিকার সঙ্গে কথা হতে রনি এবার বলে, "আমার আরও একটা কথা মনে হচ্ছে। মিলি ঠিক হয়ে গেলে পরিস্থিতি কি হবে তার ঠিক নেই। আর যেকোন সময় ওর সব কথা মনে পড়তে পারে। এমনিতেই দেরি হয়েছে, আর দেরি করা কি উচিত হবে? এইসব গিফট দিতে গেলে তোমরা বলতে পার না?"

- "তখন কি করে হবে? মিলি থাকবে যে !" পিউ নাকচ করে দেয়। 

- "এক কাজ করো। কাল মায়ের সঙ্গে গিয়ে এসব দিয়ে এসো। একফাঁকে বলে এসো একটু আলাদা কথা আছে, মিলিকে সরিয়ে রাখার ব্যবস্থা করতে বলো।"

পরদিন এদের তরফে মিলির গিফট খুব সহজেই দেওয়া হয়ে যায়। সমর তখন অফিসে, আর যদিও গোপার বিশেষ ইচ্ছে ছিল না, তবে মিলি আগ্রহ করে নিচ্ছে, কিছু করার নেই। এদিকে গোপার চিন্তা শুরু হয়, ওদেরও কি পালটে কিছু দেওয়া উচিত? রনিকে, নাকি গোটা বাড়িকে? ভাবতেই রাগও হয়। কি মানে এসব লৌকিকতার?

তার মধ্যে চা করতে রান্নাঘরে এলে মণিকা চট করে এসে বলে যায় আলাদা করে কথা বলার বিষয়। গোপা চিন্তায় ভাবনায় জেরবার হতে থাকে। 

অমরের সঙ্গে পরামর্শ করে সমর। পরদিন অঙ্কুর বোনকে নিয়ে যায় পুজোর জন্য টুকটাক সাজগোজের জিনিস কিনে দেওয়ার নাম করে। শনিবার, বনিরা দুই ভাই তাড়াতাড়ি ফিরেছে, চারজনেই এবাড়ি আসে। রনিকে ধরে এনেছে সবাই। কিন্তু কিন্তু করে মণিকাই কথাটা পাড়ে। টকটকে লাল হয়ে গেছে সমরের মুখ। রাগ সামলে বলে, "আপনাদের মন অনেক বড়, তাই এভাবে এগিয়ে এসেছেন। তবে আমার মেয়ের চিকিৎসার জন্য আমি এখনই আপনাদের থেকে ধার নেওয়ার কথা ভাবছি না। লাগলে তখন পি এফ বা যাহোক একটা ব্যবস্থা হয়ে যাবে। গোপা, চা টা দাও সবাইকে। আর শোনো, তোমরা মেয়েরা ভালো বুঝবে, দীপা আর তুমি গিয়ে ওদের পুজোর জামাকাপড় গুলো কিনে ফেলো কাল। পিউকে নিয়ে যেও, মাপ টাপগুলো বলতে পারবে। আমি একটু আসছি, অফিসের একজনকে ফোন করার ছিল।" 

- "কাকু প্লিজ, আমার কথাটা একবার শুনুন।" রনি হাতজোড় করে। গোপা প্রমাদ গোণে, সমর কতটা অপমানিত বোধ করছে ও জানে।

- "রনি, তুমি কেন হাতজোড় করছ? সেটা তো আমার করার কথা।" ব্যঙ্গ করেই পালটা হাতজোড় করেছে সমর। 

- "কাকু, আমি অন্যায় করেছি। সেটা স্বীকার করলেই এখন সব ঠিক হয়ে যাবে না। সময় আমাকে ঠিকই শাস্তি দেবে। এটা যদি আমি করতে পারতাম, তাহলে হয়তো আমার পাপের কিছুটা প্রায়শ্চিত্ত হত।"

- "তুমি কি মনে করো, পুরোহিত মশাইদের যেমন আমরা বলি, মূল্য ধরে দিচ্ছি, ওতেই চালিয়ে নিন, সেরকম কিছু টাকা দিয়ে আমার মুখ বন্ধ করে দেবে?" সমর আর রাগ চাপতে পারছে না। বাকিরা ভয়ে কাঁটা হয়ে যায়। আজ যদি উপরের ভদ্রতাটুকুও সরে যায়, মুখোমুখি বাড়িতে বাস করবে কি করে? 

- "না কাকু। সেই সাহস আমার নেই। শুধু ভাবুন, আমি যদি সেদিন বাড়ি ফিরতাম, অথচ মিলির সঙ্গে আমার সম্পর্কটা সহজ না হত, তাহলেও মিলি অসুস্থ হতে পারত। সেটাও আমার অমানবিকতার জন্যই হত। সেক্ষেত্রে আমার বাড়ির লোকেরা নিশ্চয়ই ওর চিকিৎসা করাত, আমাকে চাপ দিত। তখনও হয়ত মিলি সুস্থ হয়ে বিয়ে ভেঙে দিতে চাইত। সেরকমই ভাবুন না। আমাকে একবার সুযোগ দিন, একটা ভালো কাজ করার।" জোড়হাত নামিয়ে শান্তভাবে সমরের চোখে চোখ রেখে বলে রনি। 

- "ও, তুমি ডিভোর্সের সময় যাতে কিছু এ্যাডভান্টেজ পাও, সেদিকটা গোছাতে এসেছ? শোনো, কোনও ভয় নেই তোমার। আমি পরিষ্কার বলে দিচ্ছি, ডিভোর্স যখন হবে, একটা টাকাও আমরা চাইব না। যত সহজে হয়, তোমাকে ছেড়ে দেব। এখন আমার মেয়ে অসুস্থ, ও নিজের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে পারবে না। ওকে দিয়ে সই করালেও সেটা গ্রাহ্য হবে না। নাহলে তোমাকে এতকাল আটকে রাখতাম না।"

- "ডিভোর্স, শর্ত, এসব নিয়ে আমি সত্যিই ভাবছি না। বন্ধুদের উসকানিতে করেছি, এমন কথাও আমি কখনো বলব না। কারণ আমি জানি সমস্ত ঘটনার দায় একা আমার...... " রনি হয়ত আরও কিছু বলত, গোপা এগিয়ে এসে বলে, "সমস্ত দায় তোমার নয় রনি। আমাদেরও দায় আছে। লিলি তোমাদের সঙ্গে ভালো করেনি..... "

এবার গোপাকে মাঝপথে থামিয়ে দিয়ে মণিকা বলে, "লিলি মস্ত অন্যায় করেছে গোপা। পরে হলেও আমি বুঝতে পেরেছি, তার দায় দুবাড়ির সবাই ভোগ করেছি। আর আমরা যা করেছি, ঐ বাচ্চা মেয়েটা তার সবটা ভোগ করছে, আর সঙ্গে সঙ্গে তোমরা কিছুটা। তাই তোমাদের রাগ হচ্ছে, আমাদের পছন্দ করছ না, আমাদের দূরে সরিয়ে রাখছ, সব ঠিকই করছ। আমরা তো আরও খারাপ ব্যবহার করে বসে আছি। কিন্তু দাদা, আমার ছেলেটাকে একবার মাপ করতে পারবেন না? ওকে আজ যত শাস্তিই দিই, মিলির কোনো উপকার হবে না। মাপ করতে পারলে যদি ওর বিবেকদংশনটা কমে? মিলির চিকিৎসার খরচটা যদি ওকে দিতে দেন? নিজের অন্যায়েই আপনার সংসারের একজন হওয়ার অধিকার ও হারিয়েছে। তবুও, এখনও তো ডিভোর্স হয়নি, আমার পর আপনারাই এখনও পর্যন্ত ওর বাবা মায়ের সমান। ওর কথাটা একবার ভাববেন না?"

রনিকে যে তাচ্ছিল্য করা যায়, তার মায়ের সঙ্গে তো সেই ব্যবহার করা যায় না। এদিকে গোপাও কাঁদতে শুরু করেছে, মণিকারও চোখে জল। এতক্ষণের রাগের খোলস সরে গিয়ে হঠাৎ সমর রনির হাত চেপে ধরে দুহাতে, "রনি, আমার মেয়েটা, আমার কি মেয়ে কি হয়ে গেল। তুমি আমাদের অবস্থা বুঝতে পারছ না বাবা।"

- "কাকু, আমাকে ক্ষমা করে দিন। একবার সুযোগ দিন আপনার পাশে দাঁড়ানোর। আমি আপনাকে কথা দিচ্ছি, আমরা এই কজন ছাড়া কেউ জানবে না আমি টাকাটা দেব। আমি টাকা তুলে আপনাকে দিয়ে যাব। চেক না, কিচ্ছু না, কোনো প্রমাণ থাকবে না। ডিভোর্সের সময় একটা কথাও বলব না। আপনি যা বলবেন, যে শর্ত রাখবেন, তাই হবে তখন। এই একবার ভরসা করে দেখুন।"

গোপা আঁচলে চোখ মুছে বলে, "তুমি এখানে বোসো রনি। আমাদের কোনো রাগ নেই তোমার উপর।"

রনি তখনও সমরের হাত ধরে বলে যাচ্ছে, "মিলির চিকিৎসা করাতে আপনারা এভাবে শেষ হয়ে যাবেন, তারপর ওর কি হবে কাকু? ডিভোর্সের সময় যে ও একটাকাও নেবে না, আপনারা কেমন মানুষ আমি জানি। ওর ভবিষ্যৎ কি হবে? ওকে ভালো করে লেখাপড়া করাতে হবে। ও যতদূর পড়তে চায়, ও যাতে ভালো একটা চাকরি পায়, আর কখনো কোনো অসম্মানের সামনে না পড়ে, একটুকু করতে দিন আমাকে। এখন যে টাকাটা খরচ করতেন, সেটা রাখুন। আর যখন আমাকে খরচ করতে দেবে না ও, তখন ওর পড়াশোনায় লাগাবেন আপনার টাকাটা। ওর মুখ চেয়ে আমাকে ক্ষমা করে দিন।"

রনির বা এবাড়ির লোকের উপর রাগ পুষে রাখা যে শুধুমাত্র নিজেদের আরও কষ্ট দেওয়া, সেটা বোঝে সমর। ভালো ভাবেই কথা বলে। নিজেই বরং রনির গায়ে মাথায় হাত বুলিয়ে বলে, "তোমার উপর রাগ নেই রনি। কোন ছোটবেলা থেকে দেখছি তোমাদের।" মনে মনে বলে, "আমার লিলিটার মতোই তুমিও একবার এগিয়ে এসে সেদিন এমন করে কথা বলতে পারতে না?"


চলবে