Jharapata - 4 in Bengali Love Stories by Srabanti Ghosh books and stories PDF | ঝরাপাতা - 4

Featured Books
  • خواہش

    محبت کی چادر جوان کلیاں محبت کی چادر میں لپٹی ہوئی نکلی ہیں۔...

  • Akhir Kun

                  Hello dear readers please follow me on Instagr...

  • وقت

    وقت برف کا گھنا بادل جلد ہی منتشر ہو جائے گا۔ سورج یہاں نہیں...

  • افسوس باب 1

    افسوسپیش لفظ:زندگی کے سفر میں بعض لمحے ایسے آتے ہیں جو ایک پ...

  • کیا آپ جھانک رہے ہیں؟

    مجھے نہیں معلوم کیوں   پتہ نہیں ان دنوں حکومت کیوں پریش...

Categories
Share

ঝরাপাতা - 4

ঝরাপাতা

পর্ব - ৪

🏜🌵🏜🌵🏜🌵🏜

গোপার কান্নার পর কিছুই চাপার নেই। এতদিন লিলির লুকিয়ে রাখা সব কথাই এবার বলতে হয়। অবশ্য লুকোনোর সময়ও নেই, এখন একেবারে শিয়রে শমন যাকে বলে। 

লিলি ওর প্রেমিককে বিয়ে করেছে শোনামাত্র পিউ কলসিটা ঠকাস করে মেঝেতে বসিয়ে ছুটে এসে মণিকাকে জড়িয়ে ধরে। পাড়ার এক কাকিমা বলে ওঠেন, "কলসিটা এখানে বসালে কেন পিউ? বিয়ের জন্য তোলা জল, একেবারে ছাদনাতলায়... " বলতে গিয়ে নিজের কানেই বিসদৃশ ঠেকে, চুপ করে যান। ক্ষিপ্ত রনি আগুনঝরা চোখে তাকিয়ে আছে পড়শীদের দিকে। বুঝতে পারছে ভদ্রমহিলার এই চুপ করে যাওয়ার পিছনে ব্যঙ্গ না থাক, সহানুভূতি থাকলেও সেটা সহ্য করা মুশকিল।

এদিকে মণিকাও যেন পিউর জন্যই অপেক্ষায় ছিল। বাচ্চা মেয়ের মতো পিউকে জড়িয়ে ধরে এতক্ষণে কেঁদে ওঠে। মরমে মরে যাচ্ছে পিউ। এই বিয়ের কথা প্রথম ভেবেছিল ও। ওর প্রতি ভরসা, বিশ্বাসের জন্যই মামনি এই বিয়েতে মাথা দিয়েছিল। আজ ওর জন্য সবার মাথা নিচু হয়ে গেল ! 

মা ওর হাত ছেড়ে দিয়েছে টের পেয়ে রনি সরে গেল। ঘর ভর্তি লোক, তারা সবাই ফিসফাস করছে। বৌদি রয়েছে, মামীরাও আছে। ওরা মাকে সামলে রাখবে। এখন এখানে থাকলে ওকে নিয়ে আরও আলোচনা হবে আর সেসব শোনা ছাড়া আর কাজও নেই। রনি দোতলায় নিজের ঘরের দিকে হাঁটা দেয়। 

ওর ঘরও পরিপাটি করে গোছানো হয়েছে। নতুন বিছানার চাদর, পর্দা লাগিয়ে, ইনডোর প্ল্যান্টগুলোর জায়গা পালটে সাজিয়ে গোটা বাড়ির ভোল পালটে দিয়েছে বৌদি। ওরা দুভাই কেবল অর্ডার শুনে চলেছে। 

দড়াম করে দরজা বন্ধ করে নিজের পরণের নতুন পাঞ্জাবিটা খুলে ছুঁড়ে মেঝেতেই একপাশে ফেলে দেয়। ভীষণ ছোট মনে হচ্ছে ওর নিজেকে। ও নতুন করে বাড়িঘর সাজিয়ে, নিজে সেজেগুজে যাকে ঘরে আনতে তৈরি হচ্ছিল, সে আসলে অন্যের ঘরের বৌ ! দাদা বৌদি ওকে বলেছিল, লিলিকে সঙ্গে নিয়ে গিয়ে ওর পছন্দে ওর জন্য একটা আংটি কিনতে। আজ মনে হচ্ছে কতটা বোকার মতো লিলির বাড়িতে গিয়ে ওকে বলেছিল, কবে সময় হবে জানাতে, দুজন মিলে দোকানে যাবে। 

লিলি সাফ বলে দিয়েছিল, ওর সময় হবে না। একটু খারাপও লেগেছিল। তবে তার পরে বলল, বিয়ের সময় অনেক ছুটি নিতে হবে, প্রাইভেট চাকরিতে এখন তাই ঠেসে কাজ করতে হচ্ছে। সেটা শুনে খারাপ লাগাটাও কেটে গেছিল। ভাগ্যিস দাদা, বৌদি কি বন্ধুদের বুদ্ধিমতো হানিমুনের ডেস্টিনেশন জিজ্ঞেস করে বসেনি। 

রনি যেন স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে, লিলি এখন ওর বরের সঙ্গে রনিকে নিয়ে হাসাহাসি করছে। বিয়ের কথা শুরু হয়েছে থেকে হেসেছে। রনিই হয়তো ওদের এ কদিনের আনন্দের খোরাক জুগিয়েছে। 

লিলি, লিলির বর, গোটা পাড়ার লোক হাসছে ওকে নিয়ে। এমনিতেই অনেকেই নাকি বলাবলি করছিল, ওর লিলির সঙ্গে প্রেমই ছিল, এখন বাড়ির লোক ঠিক করেছে বলে বিয়ে হচ্ছে। বৌদি সেদিন পাড়ায় কার কাছে শুনে এসে ওদের তিনজনকে বলে হি হি করে হাসছিল। এখন তারা আরও কি বলছে কে জানে ! হয়তো বলছে, দুজনের দিক থেকে প্রেম ছিল না, রনিই এতকাল লিলির প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছিল। ওর হাত থেকে শান্তি পেতে লিলি পালিয়েছে ! 

লিলি, বিয়ে, আজকের দিনটা, সব নিয়েই সম্ভব অসম্ভব হাজার কথা মনে উদয় হয়। সব কথাই ওর ঠিক বলে মনে হয়। লিলি যদি এমন কান্ড করতে পারে, তাহলে সব হতে পারে, সব। 

ঘড়ির দিকে নজরই ছিল না। হঠাৎ খিদে পেয়ে যেতে প্রথমটা অবাক হয়। তারপর খিদের জন্যই মাথা কাজ করতে শুরু করে। কোন ভোররাতে অকারণ ঘুম থেকে উঠে চিঁড়ে দই মেখে খেতে বসিয়ে দিয়েছিল বৌদি। সে খাওয়া যায় নাকি? সামান্য একটু খেয়ে ও উঠে পড়েছিল, চা দাও বলে। 

বৌদি বুঝিয়েছিল জল সইতে যেতে হবে আগে, কারণ আলো না ফোটে, কাক না ডাকে। ফিরে এসে ওরা সবাই চা খাবে। সবাই হৈচৈ করে বেরিয়ে যেতে মা ওকে চা করে দিতে যাচ্ছিল। তখনই তো এরা এল। এখনও নিচে কথাবার্তা হচ্ছে। কি কথা বলছে ওরা? রনির মনে হচ্ছে, গিয়ে বলে, এবার কথা বন্ধ করে আপনারা বাড়ি যান। আমরা চা খাই, পেপার পড়তে পড়তে আড্ডা দিই, আবার আমাদের স্বাভাবিক জীবনটায় ফিরে যাই। 

- "রনি, শোন একটা কথা আছে।" দরজায় বনি, পিউ, ওদের দুইমামা। রনি কিছু বলার আগেই অবশ্য ওরা এক এক করে ঘরে ঢুকে গুছিয়ে বসেছে। 

গলা ঝেড়ে রনি বলে, "মা কি করছে?"

পিউয়ের হাতে কাপ প্লেট। রনির সামনে চা বিস্কুট রাখতে রাখতে বলে, "মায়ের শরীরটা খুব একটা ভাল না। চা দিয়েছি, খাচ্ছে। মাইমারা সঙ্গে আছেন। তবে একটা সমাধান বেরিয়েছে। যাতে সবদিক রক্ষা হয়। এখন তুমি রাজি হলেই... "

- "মানে? আমি আবার কিসে রাজি হব?" 

- "বলছি, তুই চা খা।" গলা ঝেড়ে ওর বড়মামা বলে, "দেখ, যা হওয়ার হয়ে গেছে। ও মেয়ের আশা ছেড়ে আমাদের তো এগোতে হবে। তা এই কয়েক ঘন্টার মধ্যে মেয়ে যোগাড় করে একই লগ্নে বিয়ের ব্যবস্থা করা সম্ভব না।"

- "বিয়ের কথা ছাড়ো মামু। মায়ের না শরীর খারাপ হয় আমি চিন্তায়... "

- "রনি, চুপ করে আগে শোন, বাধা দিস না। সময় বেশি নেই।" ওকে থামিয়ে দেয় বড়মামা, "দিদির জন্যই বিয়েটা হওয়া দরকার। এত লোক আসবে, সব ঠিক হয়ে গেছে। তার উপর তোর পিসিরা এমনিতেই খড়গহস্ত হয়ে আছে। এখন যদি তোর বিয়েটা না হয়, দিদির শকটা কাটবে না। আর কেউ কথা শোনাতেও একফোঁটা ছাড় দেবে না, এটাও ঠিক। গোপাদিও তো কেঁদেই যাচ্ছে। সমরদা অসুস্থ হয়ে পড়েছে, চোখ টোখ অন্ধকার হয়ে গেছিল নাকি। তা এই অবস্থাটা কাটতে পারে এই লগ্নেই তোর বিয়েটা হলে। ওদের বাড়ি থেকেই বলছে, মিলির সঙ্গে বিয়ের কথা।"

- "অসম্ভব ! ঐ বাড়ির কারও মুখ দেখতে চাই না আমি। সেখানে এত বড় প্রতারণা করার পর ঐ বাড়ির মেয়েকে আবার বিয়ে? আমাকে মাপ করো।" রনি লাফিয়ে ওঠে প্রায়। 

- "আমরা তোকে কি মাপ করব বলত? মা টা তোর। আর হ্যাঁ, এটা ঠিক, লিলি মেয়েটা সবাইকে ঠকিয়েছে। ওকে এখন হাতে পেলে.... যাকগে বাদ দে। বাকিদের কিন্তু ততটা দোষ নেই। গোপাদিকে বলেছে, এখন বিয়ে করবে না, তোকে বিয়ে করবে না। ওরা বুঝিয়েছে, এই বিয়ে হলে কত সুখী হবে ও। মেয়ে তো আর বলেনি, ওর নিজের সব ঠিকঠাক করা আছে।"

- "যাই বলো মামু, আমারও রাগ ওখানে। তুই বাবা মাকে না বল, আমাদেরও তো বলতে পারতিস ! আমাকেই তো বলতে পারত, বৌদি আমার একটা ছেলের সঙ্গে ভাব আছে। মহা স্বার্থপর মেয়ে।" পিউ গজগজ করে। 

রনির কানে একটাই কথা বাজছে, "তোকে বিয়ে করবে না।" ছিঃ, যে মেয়ে ওকে বিয়ে করতে চায় না স্পষ্ট বলেছিল, তার সঙ্গে ওর বিয়ের জন্য এত আয়োজন করেছিল ওরা ! 

- "আঃ পিউ, ওর নিন্দে পরে কোরো। এখন রনির মতটা শোনা দরকার। রনি, ওদের তো এত বছর দেখছিস। এমন কান্ড হবে ওরা একটুও ভাবেনি, এটা কাকিমার অবস্থা দেখে আমি শিওর। তুই ছিলি না তাই। সে কি কান্না, মেঝেতে মাথা ঠুকছে, প্রতিজ্ঞা করছে, এই মেয়ের মুখ দেখবে না জীবনে। সে চোখে দেখা যায় না। আর ওদের যদি দোষ না থাকে, মিলির সঙ্গে বিয়েটা সবদিকে ভাল। তুই রাজি হয়ে যা ভাই।" বনি ভাইয়ের হাত ধরে অনুরোধ করে। 

- "দেখো ভাই মিলি মেয়েটা হয়ত লিলির থেকে একটু বেশি উচ্ছ্বল, তা বয়সটাও কম। ও আস্তে আস্তে সব শিখে যাবে। আমার তো এখন মনে হচ্ছে, লিলির মতো অমন পেটে ঘুষি মারলেও কথা বেরোয় না যে মেয়ের, তার চেয়ে মিলি বেশি ভাল। মনটা তো সরল !" পিউয়ের কথায় রনি বোঝে এরা সবাই রাজি। 

সবার ইচ্ছে, মিলির সঙ্গে রনির বিয়ে দিয়ে লিলিকে দেখিয়ে দেয়। কেউ জানতে চায় না, মিলির কি ইচ্ছে !


চলবে