ভুল পথে পেলাম তোমাকে – Part 8
“পূর্ণ ছায়ার আক্রমণ – ইরার প্রথম পরীক্ষা”
রাত নেমেছে।
কিন্তু এই রাতটা আগের সব রাতের থেকে আলাদা—
আজ অন্ধকারের ভেতরে কেউ লুকিয়ে নেই,
বরং অন্ধকার নিজে আজ দরজা খুলে ঢুকতে চায়।
মায়া জানালার পাশে দাঁড়িয়ে।
তার চোখে সেই কালো আগুন—
যা মানুষকে ভয় দেখায়,
আর ছায়াদের চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেয়।
ইরা পিছন থেকে দেখছে…
মায়ার পিঠের পিছু লম্বা ছায়া পড়ছে—
যেন মায়ার শরীরের সাথে আরেকটা দানব দাঁড়িয়ে আছে।
ইরার বুক ধড়ফড় করে উঠল।
সে জানে… আজ কিছু একটা হবে।
মায়া বলে উঠল—
— “ইরা… আজকের রাতটা একটু শক্ত করে সহ্য করবি।
এটা তোর প্রথম পরীক্ষা।”
ইরা কাঁপা গলায় বলল—
— “পরীক্ষা? কোন পরীক্ষা?”
মায়ার চোখ তার দিকে ফিরে এলো—
— “পূর্ণ ছায়ার পরীক্ষা।
ও তোকে নিজের আলো করতে চাইবে…
আমাকে তোকে রক্ষা করতে হবে…
আর তোর নিজেরও শক্ত হতে হবে।”
---
◆ ১. ভয়ের প্রথম দরজা – ছায়ার ডাক
হঠাৎ—
বাইরে থেকে সেই ভয়ঙ্কর ঠান্ডা শ্বাস—
শশশশশ…
ইরা কেঁপে উঠল।
মায়া ইরাকে টেনে নিজের পিছনে রাখল।
জানলার ওপারে
অন্ধকারের মধ্যে দুটো চোখ জ্বলে উঠল—
কালো নয়,
রক্তমাখা লাল।
পূর্ণ ছায়ার চোখ।
সে নরম স্বরে বলে উঠল—
— “ইরা…
আমি এসেছি।”
ইরা পিছিয়ে আসতে চাইতেই
মায়া তার হাত চেপে ধরে বলল—
— “পিছনে যাবি না।
আজ তুই ভয়কে সম্মুখে দেখবি।”
ছায়া-মানুষটা হাসল—
ধীরে, বরফের মতো শব্দে।
— “মায়া…
তোমার আলোটা ভয় পাচ্ছে।”
মায়া তীক্ষ্ণ স্বরে বলল—
— “তুই ওকে আলো হিসেবে দেখিস না।
ও আমার মানুষ।”
ছায়া কাঁচে হাত রেখে বলল—
— “তাই বুঝি?
তবে আমি ওকে মানুষ হিসেবে নেব।
চোখের সামনে।”
---
◆ ২. ছায়ার প্রথম আক্রমণ
হঠাৎ—
জানলার কাঁচ চিররররর শব্দে ফেটে দুইভাগ হয়ে গেল।
ইরা চিৎকার—
— “মায়া!!”
ছায়া-মানুষটা ভিতরে ঢোকার চেষ্টা করতেই
মায়ার চোখ পুরো কালো হয়ে গেল।
তার অর্ধ-ছায়া রূপ জাগে।
মায়ার কণ্ঠ গর্জে উঠল—
— “ওকে ছুঁলে তোকে ছিন্নভিন্ন করে ফেলব!”
পূর্ণ ছায়া হাসল—
— “তুমি পারবে না, ছোট অর্ধ-ছায়া।
তুমি অন্ধকারের সন্তান…
আর আমি অন্ধকারের জন্মদাতা।”
ইরা মায়ার হাত চেপে ধরে বলল—
— “মায়া… ভয় পাচ্ছি…”
তার কণ্ঠ কাঁপছে।
মায়া তাকে বুকের দিকে টেনে বলল—
— “ভয় পাবি না।
তোকে ওর কাছে যেতে দেব না।”
কিন্তু তখনই—
ছায়া-মানুষটা অদৃশ্য হয়ে গেল।
ইরা আতঙ্কে বলল—
— “ও কোথায় গেল?!”
মায়া এক মুহূর্তে বুঝল।
সে চিৎকার করে উঠল—
— “ইরা! চোখ বন্ধ কর!”
ইরা চোখ বন্ধ করতেই
তার ঘাড়ের পেছনে
ঠান্ডা ঠান্ডা নিঃশ্বাস—
পূর্ণ ছায়া তার পিছনে এসে দাঁড়িয়েছে।
— “এটাই আলোকে পাবার নিয়ম, মায়া।
আলোকে ভয় দেখাতে হয়।
ভয় ভাঙলে আলো ভেঙে পড়ে।”
ইরা কান্না গলায় বলল—
— “মায়া!!”
মায়ার রাগে পুরো ঘর কালো হয়ে গেল।
তার অর্ধ-ছায়া রূপ
পূর্ণ রূপ নিতে শুরু করল।
মায়া গর্জে উঠল—
— “ইরার কাছ থেকে দূরে সরে যা!!!!”
---
◆ ৩. মায়ার ছায়ার বিস্ফোরণ
হঠাৎ—
মায়ার শরীর থেকে কালো আগুনের মতো ছায়া বের হতে লাগল।
ঘর নড়ে উঠল।
টেবিল, মোমবাতি সব কেঁপে গেল।
পূর্ণ ছায়া পিছিয়ে গেল—
— “ওহ…
তোমার অন্ধকার বাড়ছে।
দারুণ।”
মায়ার রূপ ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছে—
তার চোখ, তার গলা, তার চলাফেরা—
মানুষের মতো নয়।
ইরা তাকে জড়িয়ে ধরতে গেলে
মায়ার শরীর এতটাই উত্তপ্ত–ঠান্ডা
যে ইরার হাত কেঁপে উঠল।
— “মায়া… তুমি ঠিক আছো?”
মায়া ফিসফিস করল—
— “তুই আছিস… তাই আমি ঠিক আছি।”
তারপর—
সে ইরার হাত ছেড়ে
পূর্ণ ছায়ার দিকে ঝাঁপিয়ে পড়ল।
দু’জনের ছায়া-রূপ
একটা কালো ঝড়ে পরিণত হলো।
ছায়া-মানুষটা মাটিতে পড়ল না—
বরং হাসল।
— “তুমি এখনো দুর্বল, মায়া।”
তারপর
সে ঘর জুড়ে ঘুরে
ইরার ঠিক সামনে এসে দাঁড়াল।
মায়া চিৎকার করে—
— “ইরার থেকে দূরে!!!!”
---
◆ ৪. ইরার প্রথম শক্তির জাগরণ
ছায়া-মানুষটা
ইরার গালে হালকা ছোঁয়া দিতে যেতেই—
ইরা চোখ বন্ধ করে ফেলল।
কিন্তু…
চোখ বন্ধ করা মাত্র
ইরার শরীরের ভেতর
একটা সাদা আলো জ্বলে উঠল।
এমন আলো
যা মায়াকে কাঁপায়,
ছায়াকে পোড়ায়।
পূর্ণ ছায়া পিছিয়ে গেল।
— “এটা কি?!”
মায়া বিস্ময়ে ইরার দিকে তাকাল।
ইরা ধীরে চোখ খুলল—
চোখের মণির ভেতর
এক ফোঁটা সাদা আলো জ্বলছে।
ইরা ধীরে বলল—
— “তোমরা দু’জনেই আমাকে আলো বলছ…
কিন্তু আমার আলো আমি নিজে চিনতাম না।”
পূর্ণ ছায়া অবাক—
— “এটা অসম্ভব…
একজন মানুষের শরীরে এতো বিশুদ্ধ আলো!”
মায়ার চোখে প্রথমবার
ভয় নয়—
গর্বের আগুন জ্বলে উঠল।
ইরা বলল—
— “মায়াকে আঘাত করলে
আমি আলো হব না।
আমি আগুন হব।”
তার শরীর থেকে
সাদা আলো বের হয়ে
পূর্ণ ছায়াকে আঘাত করল।
ছায়া চিৎকার করে উঠল—
— “না!!! এটা থামাও!!”
মায়া গর্জে উঠল—
— “ইরা… থামিস না!”
ইরার আলো ছায়াকে ছিটকে বাইরে ফেলে দিল—
জানলা ভেঙে।
পূর্ণ ছায়া অদৃশ্য হয়ে গেল।
---
◆ ৫. যুদ্ধের পর – প্রেম, ভয়, প্রতিশ্রুতি
সব শান্ত।
সব নীরব।
ইরা হাঁপাচ্ছে।
মায়া কাঁপছে।
ইরা দৌড়ে গিয়ে মায়াকে জড়িয়ে ধরল—
— “তুমি আছো তো?
তোমাকে কিছু হলো না তো?”
মায়া ইরাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরল।
তার কণ্ঠ কাঁপছে—
— “তোকে দেখে গেলাম আজ, ইরা…
আজ তুই আমাকে বাঁচালি।”
ইরা মায়ার গালে হাত রেখে বলল—
— “তুমিও আমাকে বাঁচালে।
আমরা দু’জন…
একজন আরেকজনের শক্তি।”
মায়া ধীরে ইরার কানে বলল—
— “আজকের পর…
তুই শুধু আমার নয়…
তুই ছায়াদের আলো।
ও আবার আসবে।”
ইরা বলল—
— “যেমন তুমিও থাকবে।”
মায়া ইরার কপালে কপাল ঠেকাল—
— “হ্যাঁ।
আলো আর অন্ধকার—
একসঙ্গে থাকলে
পূর্ণ ছায়াও কিছু করতে পারবে না।”
---