পাঁচ নম্বর ঘরটি
লেখক -soumyajeet
হাবড়া শহরের প্রান্তে দাঁড়িয়ে আছে এক পুরনো
ছাত্রাবাস। নাম—শ্যামাপদ ছাত্রাবাস।
বহু বছর আগে এখানে কলেজ পড়ুয়া ছেলেরা থাকত। কিন্তু এখন শুধু ধুলো, নীরবতা আর গুজব…
আর সেই গুজবের কেন্দ্রবিন্দু — পাঁচ নম্বর ঘরটি।
লোকমুখে শোনা যায়, “ও ঘরে কেউ থাকে না। আর কেউ থাকলে… ফেরেও না।”
---
🔸 আগমন
২০২৪ সালের আগস্ট মাস।
কলেজ নতুন করে ছাত্রাবাস খুলল।
চারজন ছাত্র এল।
তাদের মধ্যে একজন ছিল দুঃসাহসী, কৌতূহলী—নাম রুদ্র।
সে একদিন পুরাতন তালাবন্ধ ঘরের দিকে ইশারা করে জিজ্ঞেস করল কেয়ারটেকার শশী কাকুকে—
“ও ঘরটা কেন বন্ধ?”
শশী কাকু কাঁপা গলায় বললেন,
“ওইটা পাঁচ নম্বর ঘর। অনেক বছর আগে এক ছেলে… গলায় দড়ি দিয়েছিল। তারপর... যা ঘটে, সেটা বলা বারণ।”
রুদ্র হেসে বলল, “ভূত বলে কিছু হয় না কাকু।”
---
🔸 সেই রাত
রাত ১টা।
সবাই ঘুমিয়ে।
রুদ্র একা একবার ঘুরে দেখতে গেল সেই ঘরের সামনে। নিজের তৈরি চাবি দিয়ে তালা খুলল।
দরজা খুলতেই ঠান্ডা বাতাসের সঙ্গে ভেসে এলো এক অদ্ভুত গন্ধ — যেন সিগারেট, কাফন, আর ধুলো একসঙ্গে মিশে গেছে।
ঘরে ঢুকতেই সে দেখতে পেল একটি আয়না।
আর সেই আয়নায় দাঁড়িয়ে তারই মতো দেখতে একজন — কিন্তু চোখ লাল, ঠোঁটে বিকৃত হাসি।
সে পেছনে তাকাল — কেউ নেই।
দরজা হঠাৎ নিজে থেকে বন্ধ হয়ে গেল।
ঘরে নেমে এলো নিঃশব্দ মৃত্যু-নিশা।
দেয়ালে রক্তে লেখা:
> “তুইও কি আমায় ফেলে যাবি?”
রুদ্র ভয় আর বিস্ময়ে হতবাক হয়ে গেল।
তারপর অজ্ঞান হয়ে পড়ে গেল ঘরের মধ্যে।
---
🔸 সকালে
সকালে ঘরের দরজা তালাবদ্ধ।
রুদ্র নেই।
বন্ধুরা খুঁজে পেল না তাকে।
শুধু জানালায় একটা হাতের ছাপ — যেন কেউ জানালার ভেতর থেকে বাঁচার চেষ্টা করছিল।
শশী কাকু কেবল বললেন:
“এটাই ওর ভাগ্য ছিল।”
---
🔸 পুরনো ডায়েরি
এক সপ্তাহ পরে রুদ্রের রুমমেট অর্ঘ্য খুঁজে পেল ঘরের ভিতর রাখা একটি ডায়েরি।
ডায়েরিতে লেখা ছিল অভিষেক নামের এক ছাত্রের কথা, যে প্রেমে প্রতারিত হয়ে সেই ঘরে আত্মহত্যা করেছিল।
শেষ পাতায় লেখা ছিল—
> “আমি ফিরে আসব।
কেউ আমাকে আর ফেলে যাবে না।
আয়নায় যে তাকাবে, সে আমার হয়ে যাবে...”
---
🔸 আরেক অন্তর্ধান
অর্ঘ্য সেই রাতে একা গেল পাঁচ নম্বর ঘরের সামনে।
আর ফেরেনি।
পরদিন সকালে কেউ একজন হোস্টেলের দেয়ালে রক্তে লিখে রেখেছিল—
> “এবার আমি একা নই…”
---
🔸 শেষ বার্তা
আজও হোস্টেলটা বন্ধ।
কিন্তু স্থানীয়রা বলে, মাঝেমাঝে পাঁচ নম্বর ঘরের জানালায় দেখা যায় চারটি ছায়া।
তারা তাকিয়ে থাকে বাইরের দিকে।
আর বাতাসে ভেসে আসে সেই শব্দ:
> “তুইও কি আমায় ফেলে যাবি?”